জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বারবার নোটিশের পরও ক্যাম্পাসে অবৈধ বসতি

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

জবি প্রতিনিধি
বারবার নোটিশের পরও জগন্নাথ বিম্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গড়া অবৈধ বসতি ছাড়ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ১৪ জানুয়ারি ফের প্রজ্ঞাপন দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কোনো একাডেমিক ভবনে কেউ বসবাস বা রাত যাপন করতে পারবেন না।' এর আগে একাডেমিক ভবনে থাকা সব কর্মকতা-কর্মচারীকে ভবন ছাড়তেও গত ২০ সেপ্টেম্বর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নোটিশে সাত দিনের মধ্যে একাডেমিক ভবন ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে এখনো বসবাস করতে দেখা গেছে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে বসতি স্থাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গড়ে তোলা তাদের এ বসতির জন্য ক্লাস রুমের পরিবেশ নষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসরুমের সামনেই তাদের বসতি স্থাপনের ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বজলুর রহমান একাডেমিক ভবনের অর্থনীতি বিভাগের ক্লাসরুমের সামনে সিঁড়ির নিচে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন ভূগোল বিভাগের সেকশন অফিসার সানভীব আহমেদ বাচ্চু। রসায়ন বিভাগের ক্লাসরুমের পাশে সিঁড়ির নিচে বসতি গড়েছেন সামসুল আলম নামে ইতিহাস বিভাগের আরেক কর্মকর্তা। একই বিভাগের পাশে সিঁড়ি ও ক্লাসরুমের মাঝখানে নিজস্ব বাসা বানিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সেকশন অফিসার আবু ইমরান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সেকশন অফিসার জাবেদ আলী খান ও বাংলা বিভাগের সেকশন অফিসার আক্তার হোসেন। এছাড়া ভাষাশহীদ রফিক ভবনের পেছনে দেয়াল ঘেঁষে ক্যাম্পাসের ড্রেন বন্ধ করে বসবাস করছেন ভিসি দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জামাল হোসেন, শামসুল আলম বকাউল ও খোকন নামে তিন কর্মকর্তা। এছাড়াও ভূগোল বিভাগের সিঁড়ির নিচে থাকেন বাসচালক মনির। পরিসংখ্যান বিভাগের সিঁড়ির নিচে থাকেন হারুনুর রশিদ, রফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন ও মো. ফারুক। তারা ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের কর্মচারী। বজলুর রহমান ভবনে থাকেন কেয়ারটেকার ইসমাইল হোসেন, অ্যাম্বুলেন্স চালক তাজুল ইসলাম ও বাসচালক খোকন। অন্যদিকে উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সিঁড়ির নিচে থাকেন আব্দুল খালেক, মো. টিপু, মো. আজিজ নামে তিনজন কর্মচারী। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, ক্লাস চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তারা কখনো লুঙ্গি পরে, কখনো দাঁত ব্রাশ করতে করতে অথবা সম্পূর্ণ অগোছালো অবস্থায় রুম থেকে বের হন। এমতাবস্থায় শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। বিশেষ করে নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এটা আরও অস্বস্তিকর। কর্মকর্তাদের একাডেমিক ভবনে বসতি ছাড়তে নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামানের স্বাক্ষরিত সেই নির্দেশে ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০ এর মধ্যে তাদের একাডেমিক ভবন ছাড়তে বলা হয়। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে তারা সেখানেই বসবাস করছেন। কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কর্মচারীরাও ঘাঁটি গড়েছেন একাডেমিক ভবনগুলোতে। ভাষাশহীদ রফিক ভবনের পেছনে দেয়াল ঘেঁষে ক্যাম্পাসের ড্রেন বন্ধ করে বসবাস করা ভিসি দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিবেন আমি এর বাইরে যাব না। দ্রম্নতই আমি অন্য জায়গায় চলে যাব। এ বিষয়ে ভূগোল বিভাগের শানভীব আহমেদ (বাচ্চু) বলেন, তিনি ঢাকার বাইরে আছেন। ঢাকায় ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, একাডেমিক ভবন ছাড়তে তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেকে কিছুদিন সময় চেয়ে আবেদন করেছিল। সেটা কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করেছে। তারা যদি বসতি না ছাড়েন পরে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।