ইজিবাইকের আধিক্যে খুলনায় বাড়ছে যানজট, দুর্ঘটনা

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

আতিয়ার রহমান, খুলনা
খুলনার একটি সড়কে ইজিবাইকের দীর্ঘ সারি -যাযাদি
খুলনা নগরীতে প্রতিদিনই বাড়ছে ইজিবাইকের সংখ্যা। সড়কজুড়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের আধিক্যের কারণে সৃষ্ট যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। এর মধ্যেই সড়কে পালস্না দিয়ে ইজিবাইক চলার ফলে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। নগরীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজের জন্য নগরীর অধিকাংশ সড়ক এখন বন্ধ থাকছে দিনের বেশিরভাগ সময়। যেসব সড়কে এখনো উন্নয়নকাজ শুরু হয়নি, সেসব সড়কগুলোতে যত্রতত্র প্রবেশ করছে ইজিবাইক। সেইসঙ্গে অন্যান্য যানবাহন তো আছেই। আর এতেই সড়কগুলোতে সব সময়ই লেগে থাকছে যানজট। নগরীতে বর্তমানে কী পরিমাণ ইজিবাইক চলাচল করছে তার পরিসংখ্যান নেই খোদ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা খুলনা সিটি করপোরেশনের কাছেও। এদিকে নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে রিকশাচালকরাও রাস্তায় ইজিবাইক নামিয়ে চলাচল করছেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে রিকশার ভাড়াও বেড়েছে গেছে ২-৩ গুণ বেশি। অধিক ভাড়ার কারণে খুলনা মহানগরীতে এই বাহনটি এখন ভিআইপি বাহনে পরিণত হয়েছে। নগরীর অতি গুরুত্বপূর্ণ ময়লাপোতা মোড়। খুলনা শহরের বাসিন্দা গোলাম হাওলাদার, কামরুজ্জামান সাগর, তানজিলা বেগম, নাতাশা কাদের জানান, ময়লাপোতা মোড় থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে চলাচল করা যায়। সে কারণে এখানে ইজিবাইকের আধিক্য সবচেয়ে বেশি। ইজিবাইক বাড়লেও যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। ফলে যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ওাঠানামার কারণে এই মোড়ে রাস্তা পার হওয়া খুবই কঠিন। তারা আরও বলেন, এখানে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তারা কয়েকজন প্রায় সময় একত্রে দাঁড়িয়ে গল্প করেই সময় কাটান। এই মোড়টির সংস্কার কাজ চলমান থাকায় যানজট আরও বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেসিসি জানায়, খুলনা শহরের বাইরে থেকে আসা অবৈধ ইজিবাইকগুলো যানজট সৃষ্টি করছে। যানজট নিরসনের জন্য কর্তৃপক্ষ শহরের চলাচলের উপযোগী ১০ হাজার পরিবহণকে লাইসেন্স প্রদান করেছে। যারা এ সনদ দেখাতে পারে না তাদের গাড়িগুলো আটক করা এবং জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু পরক্ষণেই গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে যানজট কমছে না। খুলনা সিটি করপোরেশনের যানবহন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল আলম যায়যায়দিনকে বলেন, লাইসেন্স দেওয়ার আগে নগরীতে আরও বেশি ইজিবাইক চলত। এখন কিছুটা কমে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, পাঁচ মাস আগেও শহরে মারাত্মক যানজট সৃষ্টি হতো। এখন নগরীর প্রবেশদ্বারগুলোতে কড়া নজরদারি করছে পুলিশ। ফলে অবৈধ ইজিবাইক প্রবেশ করতে পারছে না। অবৈধ ইজিবাইকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। গত কয়েকদিনের অভিযানে সিটি করপোরেশনের তিন লাখ টাকা আয় হয়েছে বলেও জানান তিনি। অপরদিকে ইজিবাইক চালকদের হিসাব অনুযায়ী খুলনা মহানগরীতে বৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা মোট ১০ হাজার। কিন্তু অবাধে বিচরণ করে যাচ্ছে আরও ৩০ থেকে ৩২ হাজার ইজিবাইক, যার কোনো কাগজপত্র নেই। তাছাড়া প্রতিদিন দোকান থেকে নতুন ইজিবাইক বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো রাস্তায় নামছে। নগরীর ইজিবাইক চালকরা অভিযোগ করে বলেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ শহরের সব প্রবেশদ্বার বন্ধ করেছে তা সঠিক নয়, যদি তা সঠিক হতো তাহলে শহরে প্রতিদিন সকালে এত ইজিবাইক আসে কোথা থেকে? নগরীতে প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হয়, যার জন্য প্রতিটি গাড়িকে একশ টাকা দিতে হয়। চালকরা জানান, রাতের আঁধারে ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা, জেলখানা, রূপসা ব্রিজ পার হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। কিছু পয়েন্টে টাকা দিলে এ গাড়িগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়। খুলনা সিটি করপোরেশনের একাধিক সূত্র জানায়, নগরীর পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনগুলোর সংস্কারসহ বড় করার কাজ চলছে। তবে ধীরগতিতে চলমান এই কাজগুলো চলতে থাকায় নগরীতে যানজট নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সম্প্রতি সড়ক-সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্ষা মৌসুমের আগেই এসব কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে চাই। যে কারণে অবৈধ কোনো ইজিবাইক যেন চলাচল করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো ইজিবাইক যেন চলতে না পারে সেজন্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ ইজিবাইক চলাচল করতে দিচ্ছে না। সাময়িক যা ভোগান্তি হচ্ছে তা নগরীরবাসীর দীর্ঘমেয়াদি উপকারের জন্যই।