ধর্ষককে আমরা কেন সম্ভ্রমহারা পুরুষ বলি না, প্রশ্ন শিক্ষামন্ত্রীর

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২১, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রদীপ জ্বালিয়ে 'মুক্তিযুদ্ধে নারী' শীর্ষক অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি -যাযাদি
ভাষা দিয়ে নারীকে দাবিয়ে রাখা হয় মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, 'যখন কেউ ধর্ষণের শিকার হয় আমরা বলি সম্ভ্রমহানি হয়েছে। আমাকে কুকুর কামড় দিলে তো সম্ভ্রমহানি হয় না। একটা পুরুষ ধর্ষণ করল একটা নারীর কীভাবে সম্ভ্রমহানি হয়। সম্ভ্রমহানি তো সেই পুরুষের হওয়ার কথা। আমরা কেন সম্ভ্রমহারা পুরুষ বলি না ধর্ষককে।' সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত 'মুক্তিযুদ্ধে নারী' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নারীরা কর্মক্ষেত্রে কত রকমের বাধার সম্মুখীন হয় তার উদাহরণ দিতে গিয়ে দেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমার আগেও একাধিক ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তারা সবাই ছিলেন পুরুষ। তাই আমার সাংবাদিক বন্ধুরা কেউ কোনো দিন তাদের যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু আমার নামের আগে এ বি সি ডি থাকলেও আমি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলাম তখনই নানা প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। আর এটি আমাকে বারবার শুনতে হয়েছে; সব নারীকেই শুনতে হয়। দীপু মনি বলেন, '২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। অনভ্যস্ততার একটা বিষয় তো ছিলই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চেয়ারে সাংবাদিকরা সব সময় বয়স্ক একজন পুরুষকে দেখেই আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে একজন নারী আসায় সেটা দেখে একটা ধাক্কা লাগতেই পারে। কিন্তু আমার আগে বা পরে কারও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা আছে কিনা সেই প্রশ্ন কোনো সাংবাদিক বন্ধু করেননি।' নির্যাতনের শিকার নারীর প্রতি আরেক প্রকার নির্যাতন হয় উলেস্নখ করে দীপু মনি বলেন, 'এটি একটি চরম বৈষম্য। এখন ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে আদালতের নির্দেশনা আছে ধর্ষণের শিকার নারীর ছবি ছাপানো যাবে না। কিন্তু অনেক সময় ছাপা হয়ে থাকে। ধর্ষক বিচারের রায়ে শাস্তি পায়। কিন্তু যে নারী ধর্ষণের শিকার হয় তার জন্য প্রতিদিনই মৃতু্যদন্ড। সারাটা জীবন তাকে অস্পৃশ্য ভাবা হয়। এটা পুরোপুরি মানসিকতার ব্যাপার। একাত্তরে যা হয়েছিল তার থেকে ঘৃণ্য একটি জায়গায় আমরা পৌঁছেছি।' আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, কবি হাসান হাফিজ, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু প্রমুখ। এদিকে, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) বিশেষ আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সঠিক ও স্বচ্ছ রাজনীতিই নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নারীকে বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর যে নারীর পিতা নেই বঙ্গবন্ধু নিজেই সেই সব নারীর পিতা হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আর এখন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের পথ সুগম করেছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. দীপু মনি আরও বলেন, যে রাজনীতি নারীর অধিকার কেড়ে নিয়েছে সে রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা যতদিন নারীবিদ্বেষী রাজনীতির সঙ্গে থাকব এবং তাদের ভন্ডামি থেকে বের হতে পারব না, ততদিন আমাদের পূর্ণ অধিকার পাবো না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নারীর মর্যাদা দিয়েছেন। তাদের অধিকার দিয়েছেন। নারীদের বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা ১৯৯৭ সালে নারী নীতিমালা করেছেন। নীতিমালায় নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। কিন্তু নারীবিদ্বেষী রাজনীতিকরা ২০০৫ সালে নারী নীতিকে কেটেছেঁটে নারীর সম্পদ ও ক্ষমতায়নের অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে। বর্তমানে আবার আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে। প্রতিটি কর্মস্থলে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে।