দিবস কি শান্তি এনে দিতে পারে, প্রশ্ন প্রবীণদের

প্রবীণ দিবস পালিত

প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
এক প্রবীণ নাগরিক Ñফাইল ছবি
সবর্জনস্বীকৃত যেকোনো দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোনো একটি নিদির্ষ্ট দিনে আন্তজাির্তকভাবে সাম্প্রতিককালের গুরুত্বপূণর্ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধি বা ক্ষেত্রবিশেষে কোনো অতীত ঘটনা স্মরণ বা উদযাপন করা। যাদের জন্য আয়োজন তাদের দিবসের মাধ্যমে উপকার নিশ্চিত করা। তবে এই সংজ্ঞাকে মিথ্যা বলে আখ্যা দিয়েছেন দেশের প্রবীণরা। সোমবার ছিল প্রবীণ দিবস। এই দিনে এমন মন্তব্য করেছেন রাজধানীর সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবীণ নিবাসে থাকা বয়স্করা। তাদের মতে, দিবস কোনো উপকারী বিষয় বা দিন নয়। উপকারী হলেও সেটা আয়োজকদের জন্য। যাদের জন্য আয়োজন তারা উপকৃত হন না। এ মন্তব্যের প্রকৃত কারণ জানতে চাইলে প্রবীণ নিবাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ষাটোধ্বর্ এক নারী বলেন, ‘আজকে প্রবীণ দিবস পালিত হচ্ছে। আমাদের নিয়ে অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে। এতে কি আমাদের কোনো সমস্যা দূর হচ্ছে? প্রবীণদের এই আবাসস্থলে অনেক সমস্যা রয়েছে। ছয়তলায় (প্রবীণ ও হিতৈষী সংঘের প্রবীণ নিবাস ভবনের) প্রবীণদের আড্ডা দেয়ার জন্য একটি কমনরুম করা হয়েছে। যে রুমটিতে কমনরুম করা হয়েছে, সেখানে একজন নারী থাকতেন। তিনি এখন আর এখানে থাকেন না। আমাদের বক্তব্য ছিল, একজনকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে কমনরুম করা ঠিক হবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তারপর আমরা তো দুবর্ল ও প্রবীণ সবোর্পরি মূল্যহীন।’ ‘এছাড়া সব জায়গায় কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক থাকে। এখানেও এমন লোক আছে?। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও কোনো লাভ হয় না। তাছাড়া আমরা ৪ হাজার টাকাপ্রতি রুম ভাড়া ও শুরুতে ২০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে থাকি। এখন রুম ভাড়াকে ৫ হাজার ও জামানতকে ৩০ হাজার করার পঁায়তারা চলছে। অনেকের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলেও শুনেছি। অথচ আমাদের প্রতি কিছুটা সহানুভূতি দেখানো উচিত ছিল। এত বেশি ভাড়া নেয়া উচিত নয়। আমরা সরকারি নজরদারির আশা করছি।’ আশফাকুন্নবী নামে আরেক সাবেক বেসরকারি কোম্পানির কমর্কতার্ বলেন, ‘আমাদের দেখার কেউ নেই। আমার পৈতৃক নিবাস ছিল নোয়াখালীর মাইজদীতে। সেখানে আমার অল্পকিছু জমি ছিল। তা বিক্রি করেই আমি এখানে থাকছি।’ আমিনুর রহমান নামে সাবেক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘এখানকার বেশির ভাগ বয়স্কই অসুস্থ। আজকে যে প্রবীণ দিবস পালন করা হচ্ছে সে কারণে আমাদের ক্যান্টিনে খাবার রান্না হচ্ছে না। কারণ নিচে গিয়ে টোকেন দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে আমাদের খাবার নিতে হবে, যা আমাদের জন্য অনেক কষ্টকর। তাহলে বলতেই হয়, দিবস কোনোভাবেই আমাদের জন্য ভালো নয়।’ প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমস্ত অসহায়ত্বকে তারা মেনে নিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় বেঁচে আছেন। আবার অনেকে সামাজিকভাবে জীবনযাপন না করে বতর্মানে অসহায়ত্বের করাল থাবায় পড়ে গেছেন। তেমনই একজন ময়মনসিংহ এলাকা থেকে আসা জুনায়েদ (৮২)। তিনি কথা বলতে পারেন না। শুধু বোঝার শক্তিটুকু রয়েছে তার। তার সেবার জন্য ১৭ হাজার টাকা বেতন নিয়ে ২৪ ঘণ্টা সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন রফিকুল। রফিকুল বলেন, ‘জুনায়েদ সাহেবের বড় ভাই তার সমস্ত খরচ বহন করেন। তবে কেউ তাকে দেখতে আসেন না। তিনি কোনো কথা বলতে পারেন না। আকার ইঙ্গিতেও কিছু বোঝাতে পারেন না। এ অবস্থায় তার বাথরুমের কাজগুলো আমাকে এই বিছানা থেকেই পরিষ্কার করতে হয়। চিকিৎসার কাজও আমি করাই।’ তবে জীবনের এমন পরিস্থিতিকে অনেকে মেনে নিতে পারেন না। তেমনই একজন বৃদ্ধা জামানা হক (৭৩)। তিনি বলেন, ‘আমি জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। আমার ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে গিয়ে আমাকে অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। কারণ একসময় আমাদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। কিন্তু আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার ছেলেমেয়েরা আমাকে এখানে রেখে গেছে। যতদূর জানি, তারা গ্রামের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। আমি আমার স্বামীর পেনশনের টাকা দিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি।’