খাদ্য দিবসের আলোচনা সভা

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ জরুরি

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২১, ০৯:০৮

বিশেষ প্রতিনিধি
শনিবার বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক কর্তৃক জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত 'জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ' শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যে বাজার সয়লাব। যার ফলে ক্যানসার, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য জটিল রোগের প্রার্দুভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

শনিবার বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বারসিক কর্তৃক জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত 'জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাদ্যকে নিরাপদ রাখার জন্য ভেজাল প্রতিরোধে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে ল্যাব চালু করতে হবে। কোভিড থাকা সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে এবং পুষ্টির মান বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা পৃথিবীর চেয়ে বাংলাদেশে খাদ্যের উৎপাদন ভালো। কিন্তু খাদ্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান একেক অধিদপ্তরে একেক রকম, এটা সমন্বয় করে সঠিক তথ্য বের করা দরকার। তিনি বলেন, বাজেটের আকার বাড়ালেও কৃষি বাজেটের আকার বাড়েনি। কৃষকদের ভর্তুকি বাড়াতে হবে।

অন্যান্য বক্তারা প্রতিটি এলাকায় কৃষক ক্লাব তৈরি করে নিরাপদ খাদ্য তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, জমির মাটি থেকে খাবারের থালা অবধি খাদ্য নিরাপদ হওয়া জরুরি। আমরা যেমন চাই নিরাপদভাবে খাবার উৎপাদন হোক, আবার ফরমালিন-কার্বাইড বা ক্ষতিকর কোনো উপাদান খাবারে মিশে থাকুক তাও চাই না। অধিক খাদ্য ফলানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। এরপর খাদ্য বিপণনের নানাস্তরে ক্ষতিকর রাসায়নিকের মিশ্রণ তো থাকছেই। ক্ষতিকর কীটনাশক, আগাছানাশক, ছত্রাকনাশক মাটির অণুজীব থেকে শুরু করে শামুক-কেঁচো-উপকারী পতঙ্গ সব মারা পড়ছে। এতে দূষিত হচ্ছে সামগ্রিক পরিবেশ। মানবস্বাস্থ্য ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে। প্রতি বছর লিচু মৌসুমে বিশেষত দিনাজপুর অঞ্চলে বিষমাখা লিচু খেয়ে শিশু মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। শস্য ক্ষেতে বিষ ছিটানোর পর গ্রামবাসীর হাঁস-মুরগি মরছে। বেশি দিন খাদ্য তাজা রাখা, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, কাঁচা ফলকে দ্রম্নত বাজারজাতকরণের জন্য পাকিয়ে তোলা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে ফল ও শাক-সবজির সঙ্গে আজকাল অবাধে প্রয়োগ করা হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য।

যেমন কুমড়ায় মেশানো হচ্ছে সোডিয়াম সাইক্লোমেট, কাপড়ের বিষাক্ত রং, সাইট্রিক এসিড ও প্রিজারভেটিভ। বিস্কুট, চানাচুরসহ বেকারির মিষ্টি জাতীয় খাবারে মেশানো হচ্ছে কাপড়ের রংসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য। যেমন- টোস্ট বিস্কুটে গস্নুুটামেট, চানাচুরে মবিল, জিলাপিতে হাইড্রোজ, মুড়িতে হাইড্রোজ ও ইউরিয়া। তা ছাড়াও খাদ্যসামগ্রী গুদামজাত করতে গিয়ে কীটনাশকে অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়- যেমন শুঁটকী মাছ প্রক্রিয়াজাত ও গুদামজাত করতে ডিডিটি ও অন্যান্য কীটনাশক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের গবেষকরা গাজর, করলা, বেগুন, লাউ, শসা, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, মরিচ ও ঝিঙ্গায় সালমোনেলা ও ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করেছেন- যা টাইফয়েড ও ডায়রিয়া রোগের জন্য দায়ী।

তারা এসব প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিকের সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম, আলোচনা করেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, বাংলাদেশ স্কাউটস জাতীয় কমিশনার আকতারুজ্জামান খান, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, বারসিকের পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ্বাস, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুল হক, ডবিস্নউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম মানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি মো. নাজিমউদ্দিন, বানিপার সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, বিডিক্লিক-এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, দেবীদাসঘাট সমাজকল্যাণ সংসদের সভাপতি মো. মুসা, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. হাসিবুল হক পুনম, মৃত্তিকা'র প্রোগ্রাম অফিসার খাদিজা খাতুন, বিডিক্লিক-এর প্রধান সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার, পবার সদস্য তোফায়েল আহম্মেদ, বারসিকের গবেষণা সহকারী সাবিনা নাঈম প্রমুখ।