নগরবাসীর পিছু ছাড়ছে না ডেঙ্গু

প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যু আতঙ্ক যেন নগরবাসীর পিছু ছাড়ছে না। গত সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু সংখ্যা। অক্টোবর মাসে মোট দুই হাজার ৩৭৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। অথার্ৎ গত মাসে গড়ে প্রতিদিন ৭৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে পঁাচজনের মৃত্যু হয়েছে। সবের্শষ গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের ফাস্টর্ অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমানের মৃত্যু হয়। সেপ্টেম্বর মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৮৭ জন। মারা যান চারজন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আক্রান্ত ও মৃতের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত শত শত বেসরকারি হাসপাতাল থাকলেও অধিদপ্তর হাতেগোনা ডজন দুয়েক হাসপাতাল থেকে নিয়মিত তথ্য পাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শতের্ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কমর্কতার্ এই অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়মিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের তথ্য পাঠাতে চিঠি দেয়া হলেও অনেক হাসপাতাল চিঠির উত্তর দেয়নি। পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে গত তিন মাস যাবত কিছুসংখ্যক নারী,-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুসহ একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আক্রান্ত কিংবা মৃতের সংখ্যার তথ্য পায়নি অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পযর্ন্ত মোট আট হাজার ৬৩৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মোট ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই তালিকায় শিশু, গৃহবধূ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও চিকিৎসক রয়েছেন। মাসওয়ারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা জানুয়ারিতে ২৬ জন, ফেব্রæয়ারি সাতজন, মাচর্ ৯ জন, এপ্রিল ২৯ জন, মে ৫২ জন, জুন ২৯৫ জন, জুলাই ৯৪৬ জন, আগস্ট এক হাজার ৭৯৬ জন, সেপ্টেম্বর তিন হাজার ৮৭ জন এবং সবের্শষ অক্টোবরে দুই হাজার ৩৭৬ জন। তাদের মধ্যে জুন মাসে তিনজন, জুলাইয়ে চারজন, আগস্টে ছয়জন, সেপ্টেম্বরে চারজন এবং অক্টোবরে পঁাচজন মারা যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহসহ একাধিক চিকিৎসক জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগীর প্রচÐ জ্বর, মাথা ও শরীর ব্যথা হতো। এখন শরীরে জ্বর জ্বর ভাব, সামান্য জ্বরের সঙ্গে হালকা ব্যথা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। হালকা জ্বর দেখে অনেকে মনে করেন, এটি সাধারণ জ্বর, তেমন একটা পাত্তা দেন না। অথচ ততোদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। একপযাের্য় রোগীর প্লাটিলেট কমে কমায় চলে যাচ্ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগে অনেকেই মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছর ডেঙ্গু রোগীর উপসগর্ দেখে বোঝা যায়, ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। একই ব্যক্তি চারবার পযর্ন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তই সবাির্ধক। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুথর্বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে হেমোরেজিকের সংখ্যা বেশি। এটায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। চিকিৎসকরা বলছেন, সামান্য জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামশর্ নিতে হবে। কোনো ধরনের এ্যাসপিরিন ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার না করার পরামশর্ বিশেষজ্ঞদের।