আজ বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস

সচেতনতার অভাবে কমছে না শিশু মৃত্যুর হার

গত বছর ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভতির্ হওয়া ১৩ হাজার ৯৫৫ জন শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়াজনিত শিশুর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৭৮ জন। এ সময় হাসপাতালটিতে ১৩৬ জনের মৃত্যু ও শুধু অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য রোগী প্রতি গড়ে ১ হাজার ৯০০ টাকা করে খরচ হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জাহিদ হাসান
অসচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসাকেন্দ্রে না আসা ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুহার কাক্সিক্ষত পযাের্য় নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সারা বিশ্বে পঁাচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এমনকি নিউমোনিয়ার কারণে শুধু বাংলাদেশেই প্রতিবছর ১৭ হাজারের বেশি শিশু মারা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস-২০১৮। নিউমোনিয়া সম্পকের্ সচেতনতা সৃষ্টিতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নিধার্রণ করা হয়েছে ‘স্টপিং নিউমোনিয়া ইজ নট অ্যাবাউট লাক, ইট’স অ্যাবাউট অ্যাকশন’ অথার্ৎ ‘নিউমোনিয়া প্রতিরোধ আমাদের ভাগ্যে নয়, এটি আমাদের দায়িত্ব’। সরেজমিন রাজধানীর ঢাকা শিশু হাসপাতালের একাধিক শিশুরোগ বিশেজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভতির্ হওয়া ১৩ হাজার ৯৫৫ জন শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়াজনিত শিশুর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৭৮ জন। চিকিৎসার জন্য আক্রান্ত এসব শিশু ও তাদের অভিভাবকদের গড়ে ৫ দিন করে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালটিতে ১৩৬ জনের মৃত্যু ও শুধু অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য রোগী প্রতি গড়ে ১ হাজার ৯০০ টাকা করে খরচ হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন যে, নিউমোনিয়া সহজেই নিরাময়যোগ্য। তারপরও বিশ্বব্যাপী ৫ বছরের নিচে শিশুর মৃত্যু অন্য যেকোনো রোগের চেয়ে এ রোগটি সবাির্ধক দায়ী। আর এই নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুর শতকরা ৯৮ ভাগ নাইজেরিয়া, মালউরি এবং বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে। এর মূল কারণ হলো অভিভাবকদের অসচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসকের কাছে না যাওয়া। এমনকি উন্নয়নশীল দেশে শতকরা ৫৪ এবং বাংলাদেশে মাত্র ৩৭ শতাংশ নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৪ সালে ৫ বছরের কমবয়সী ৪২ ভাগ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা পেয়েছে। ২০০৪ সালে এই হার ছিল ১৯ দশমিক ৯ ভাগ। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে আফগানিস্তান। শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের কারণ, সম্পকের্ ঢাকা শিশু হাসপাতালের অ্যাজমা সেন্টারের প্রধান ও রেসপেরিটরী মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, শিশুর শ্বাসতন্ত্রের যে কোনো অংশে হঠাৎ সংক্রমণকে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বলে। এর ফলে শিশুর সদির্, কাশি ও জ্বর হয়। সঠিক যতœ না নিলে শিশুর নিউমোনিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে শিশু দ্রæত-প্রশ্বাস নিয়ে থাকে। শ্বাস নেয়ার সময় বুকের নিচের অংশে দেবে যায়। তরল খাবার পান করতে কষ্ট হয় এবং মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে পারে না। শিশু অনেক সময় নেতিয়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ছাড়াও খিচুনি দেখা দেয়। নিউমোনিয়ার প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ জানান, জন্মের প্রথম ৬ মাস শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে ১৫ থেকে ২৩ ভাগ পযর্ন্ত এ প্রকোপ কমানো যায়। যদিও অনেক প্রচারণা সত্তে¡ও বাংলাদেশে মাত্র ৪৩ শতাংশ মা শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ান। এ ছাড়া পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা ও সময়মতো নিউমোনিয়ার টিকা দিয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুরোধ করা যেতে পারে। পাশাপাশি উপযুক্ত সময়ে যথাযথ এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ নিউমোনিয়া প্রতিকারে সবচেয়ে কাযর্করী। যদিও ১৪টি দেশে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে মাত্র ২৭ শতাংশ শিশু এন্টিবায়োটিক পেয়ে থাকে। এছাড়া হিব ও নিউমোকক্কাল টিকার ব্যবহার ৪৯ শতাংশ পযর্ন্ত নিউমোনিয়া সংক্রমণ কমাতে পারে। ধোয়ামুক্ত চুলার ব্যবহারও ৫০ ভাগ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝঁুকি কমাতে পারে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজের কাছে জানতে চাইলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে এ রোগের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি সরকার সাবির্কভাবে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পযাের্য় স্বাস্থ্যসেবা চালু করছে যেখানে শিশুদের নিউমোনিয়া রোগ শনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। নিউমোনিয়া প্রতিরোধে বিনামূল্যে এ রোগের টিকা প্রদান করছে। তবে দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য যে দেশে এখন পযর্ন্ত মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ শিশুর নিউমোনিয়া চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনি বলেন, ইনগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অব চাইল্ডহুড ইন ইলনেস (আইএমসিআই) নামে একটা কমর্সূচি আছে। এটি মূলত শিশুদের অসুস্থ্যতাজনিত একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা। এতে বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফ সহায়তা করে থাকে। তবে নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা পেতে শিশুর যাতে ঠাণ্ঠা না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বয়স অনুযায়ী তাকে ঘন ঘন বুকের দুধ বা তরল খাবার দিতে হবে, পরিচ্ছন্ন, শুষ্ক এবং বিশুদ্ধ বাতাস চলাচল করে এমন পরিবেশে রাখতে হবে। মারাত্মক রোগের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। অভিভাবকরা সচেতন হলে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুহার ৩ জনে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা অজর্ন করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।