সব কর অফিসেও মেলার আন্তরিকতা চান করদাতারা

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
আয়কর মেলার তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার রাজধানীর অফিসাসর্ ক্লাবে করদাতা ও সেবা প্রাথীের্দর উপচেপড়া ভিড় Ñযাযাদি
আয়কর মেলায় রিটানর্ জমা কিংবা অন্যান্য সেবা মিলছে খুব সহজেই। আয়কর কমর্কতাের্দর আন্তরিকতাও বেশ। ফলে সহজেই আয়কর দিতে পারছেন করদাতারা। বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ করে করদাতারা বলছেন, এমন আন্তরিকতা কর অফিসগুলোতে থাকলে দেশে কর আদায়ের পরিমাণ আরও বাড়ত। মানুষেরও আস্থা বাড়ত কর অফিসের প্রতি। নবমবারের মতো আয়োজিত রাজধানীর অফিসাসর্ ক্লাবে আয়কর মেলার বৃহস্পতিবার ছিল তৃতীয় দিন। এদিনে আয়কর মেলার প্রাঙ্গণে বুথগুলোতে প্রচুর ভিড় চোখে পড়ে। আরিফ নামের একজনকে দেখা গেল- ফ্লোরে বসে রিটানর্ ফরম পূরণ করছেন। তিনি বলেন, ফ্লোরে বসে পূরণ করেও শান্তি। কারণ মেলায় যে পরিবেশ পাওয়া যায়, কর কাযার্লয়গুলোতে সে রকম আচরণ পাওয়া যায় না। এখানে কর দেয়া সহজ। এমন পরিবেশ ও আন্তরিকতা কর অফিসগুলোতে থাকলে সরকারের রাজস্ব আদায় আরও বাড়ত। মেলায় আসা হাজার হাজার করদাতা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দঁাড়িয়ে আয়কর দেন, আয়কর বিবরণী দাখিল করেন। অন্যদিকে হাসিমুখে তাদের সেবা দেন রাজস্ব বোডের্র কমীর্রা। মেলায় প্রতিবন্ধীরাও সহজে কর দিতে পারছেন। সাধারণ করদাতাদের কঁাধে কঁাধ মিলিয়ে দেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধীরা অংশ নিচ্ছেন। প্রতিবন্ধী বুথের দায়িত্বে থাকা এনবিআরের সহকারী কমিশনার জানান, আয়কর মেলার প্রথম দিনে রিটানর্ দাখিল করেছেন নয়জন প্রতিবন্ধী করদাতা। দ্বিতীয় দিনে সেবা নিয়েছেন ১৫ জন। গতকাল দুপুর ১২টা পযর্ন্ত ১০ জন সেবা নিয়েছেন। প্রতিবন্ধী বুথে কর প্রদানকারী আশরাফ উল্লা বলেন, ‘কর দিতে পেরে আমি আনন্দিত। সামনের বছরে আরও বেশি কর দিতে চাই। কারণ আমার দেয়া অথর্ দেশের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে।’ আয়কর বিবরণী দাখিলের পর বেঙ্গল গ্রæপের কমর্কতার্ রেজাউল ইসলাম বলেন, মেলায় এসে কর দিলে সাথে সাথে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাওয়া যায়। কিন্তু কর অঞ্চলে গেলে অনেক রকমের প্রশ্ন ও বিড়ম্বনার পাশাপাশি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পেতে অনেক দেরি হয়। এজন্য প্রতিবছর মেলায় রিটানর্ জমা দেন। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সিটিজেনরা কর প্রদান করছেন। কর দিতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। সামনের বছর আরও বেশি কর দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন অনেকেই। কর দিতে আসা সিনিয়র সিটিজেন করদাতা আবু তাহের বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও কর দিয়েছে। বেঁচে থাকলে সামনেও দেব। আমার উপাজনের অথর্ দেশের কাছে লাগবে, এটাই আমার শান্তি।’ উল্লেখ্য, সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা-২০১৮ মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অজর্ন’ ¯েøাগানে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হওয়া এই নবম আয়কর মেলার প্রতিপাদ্য ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’। কেন্দ্রীয়ভাবে এবার মেলা বসেছে রাজধানীর অফিসাসর্ ক্লাবে। গত দুই বছর ধরে আগারগঁাওয়ে নিমার্ণাধীন রাজস্ব ভবনে মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা ফিরে এসেছে পুরনো প্রাঙ্গণে। ঢাকার পাশাপাশি এদিন সারাদেশে শুরু হয়েছে এই মেলা। মেলার আয়োজক জাতীয় রাজস্ব বোডর্ (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পযর্ন্ত মেলা চলবে। মেলা শেষ হবে আগামী ১৯ নভেম্বর। গত ৮ বছরে আয়কর মেলা পেয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, বেড়েছে জনপ্রিয়তা। মেলায় সেবাগ্রহীতার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও। ২০১০ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে আয়কর মেলায় সেবাগ্রহীতা ও রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে ১৯ গুণ। একই সময়ে মেলা থেকে নিবন্ধন নেয়া নতুন করদাতার সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণ ও রিটানর্ জমা দেয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৬ গুণ। এনবিআরের তথ্যমতে, ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে ৭ দিন, জেলা শহরে ৪ দিন, ৩২ উপজেলায় দু’দিনব্যাপী এবং ৭০টি উপজেলায় একদিন ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যানার, ফেস্টুন, বেলুন ও আলোকসজ্জায় সেজেছে মেলাগুলো। এছাড়া আয়কর মেলা সম্পকের্ জনসচেতনতা বাড়াতে মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে করবিষয়ক এসএমএসও পাঠানো হয়েছে। টিভি ও টকশোতেও থাকবে মেলা সম্পকের্ আলোচনা। সচেতনতা বাড়াতে তৈরি করা হয়েছে আয়কর ডকুমেন্টারি ও ডকু ড্রামা, যা প্রচার করা হবে বিভিন্ন টেলিভিশন ও মেলায়।