হিন্দি সিনেমায় অনুপ্রাণিত হয়ে ডাকাত দলের প্রধান

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
গত সোমবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া পাকের্র সামনে থেকে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতচক্রের প্রধান রানাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) Ñযাযাদি
রাজধানীর বংশাল এলাকার বাসিন্দা একেএম রানা। তিনি ডিবি পরিচয়ে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করা একটি দলের প্রধান। হিন্দি সিনেমা ‘বস’ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সংঘবদ্ধ এই চক্রটি গড়ে তোলেন ডিবির এসি পরিচয়দানকারী রানা। এই চক্রটি মূলত পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের তথ্য সংগ্রহ করে। ওই এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কমর্রত শ্রমিকদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করত। এরপর সেসব ব্যবসায়ীদের টাগের্ট করে রাজধানীর অন্য এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে সবর্স্ব কেড়ে নিত। সোমবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া পাকের্র সামনে থেকে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতিচক্রের প্রধান রানাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলো ডিবির পরিদশর্ক পরিচয়দানকারী জাবেদ আহমেদ ওরফে বাবু (৩৭) ও সোহাগ খন্দকার (৩১), উপ-পরিদশর্ক পরিচয়দানকারী নাজমুল হোসেন (২৪) ও দেলোয়ার হোসেন (৫০), কনস্টেবল পরিচয়দানকারী আসাদুজ্জামান (৩৫), বুলবুল আহমেদ (৩২), হারুন ওরফে হিরা (৩২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি মোটরসাইকেল, তিনটি ওয়ারলেস, একজোড়া হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল দুটি, চাপাতি একটি এবং চাকু উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমÐিতে পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই’র প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, গত ২৫ অক্টোবর বিকালে পল্টন এলাকা থেকে খিলক্ষেত এলাকায় নিজ বাসায় যাওয়ার জন্য এক বন্ধুসহ সুপ্রভাত গাড়িতে ওঠেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাসটি নদ্দার্ যাওয়ার পর কয়েকজন ব্যক্তি সামনে দুটি মোটরসাইকেলে ব্যারিকেড দিয়ে বাসটি থামায়। এরপর ওই ব্যক্তিরা বাসে ওঠে, তাদের একজনের কাছে ওয়ারলেস সেট ও দুইজনের পরনে ডিবি লেখা জ্যাকেট ছিল। তারা মোস্তাফিজুর ও তার বন্ধুকে বলে ‘আমরা ডিবির লোক, আমাদের কাছে তথ্য আছে তোরা ইয়াবা খাস, তোদের কাছে ইয়াবা আছে।’ এ কথা বলে ভিকটিম মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার বন্ধুকে জোরপূবর্ক বাস থেকে নামায়। এরপর ভিকটিম ও তার বন্ধুকে চড়থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারতে থাকে এবং ভিকটিমের পকেটে থাকা ৪২ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন সেট এবং ভিকটিমের বন্ধুর কাছে থাকা ১৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন জোরপূবর্ক ছিনিয়ে নেয়। ভিকটিমের বন্ধুর কাছে ইয়াবা আছে বলে তার বন্ধুকে সাচর্ করে কিছু না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। পরে ভিকটিমের ব্যাগে ইয়াবা আছে বলে তাকে জোর করে মোটরসাইকেলে তোলে। ভিকটিমকে থানায় নিয়ে মামলা দেয়ার কথা বলে গুলশান, বাড্ডা, হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরাতে থাকে। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে ভিকটিমকে তেজগঁাও শিল্পাঞ্চল থানাধীন বিএসটিআই মোড়ে এনে বলে ‘তোকে আজকের মতো ছেড়ে দিলাম। তুই আর ইয়াবা খাবি না।’ তখন তারা ভিকটিমের কাছ থেকে টানাটানি করে তার ব্যাগটি নেয়ার চেষ্টা করে, ব্যাগে ১৩ লাখ টাকা ছিল। একপযাের্য় ভিকটিম বুঝতে পারেন তারা পুলিশ না, তখন ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। এরপর আসামিরা ভিকটিমের ব্যাগটি ছেড়ে দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে দ্রæত পালিয়ে যায়। পরে ভিকটিম মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে তেজগঁাও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা (নং-৩১) দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করলে একপযাের্য় আসল তথ্য বেরিয়ে আসে। পিবিআইপ্রধান বলেন, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কমর্রত শ্রমিকরা এই চক্রের সোসর্। তারা তথ্য দিত, কোন ব্যবসায়ী কত টাকা নিয়ে ফেরত যাচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, ভিক্টোরিয়া পাকের্র সামনে থেকে অনুসরণ করত। এরপর অন্য এলাকায় যাওয়ার পর কখনো মোটরসাইকেল বা কখনো মাইক্রোবাসে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে সবকিছু কেড়ে নিত। ডাকাতি থেকে প্রাপ্ত অথের্র ৪০ ভাগ সেসব সোসের্ক দিয়ে দিত। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। এই চক্রের আরও দুইজন সদস্য পলাতক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন আরও দুটি চক্রের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এই চক্রের সোসের্দর বিষয়েও তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।