ঋণ দিলে খেলাপি হবেই

মিট দ্য প্রেসে এবিবি ব্যাংকের নিবার্হীরা বলেন, ‘দেশের অথর্নীতি অনেক বড় হয়েছে। জিডিপি, মাথাপিছু আয়সহ বেশিরভাগ সূচকেই আমরা উন্নতি করছি। এসব উন্নয়নের মূল ভ‚মিকা পালন করছে ব্যাংকিং খাত। তাই অথের্র জোগানের প্রধান এ খাতকে শক্তিশালী করতে শতভাগ কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে।

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বুধবার অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকাসর্ বাংলাদেশ (এবিবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নিবার্হীরা Ñযাযাদি
‘আমানত গ্রহণ করে ঋণ প্রদান করেÑ এটাই ব্যাংকের কাজ। আর ঋণ দিলে কিছু খেলাপি হবেÑ এটা স্বাভাবিক। কারণ আমরা ঋণ পরিশোধ না করার সংস্কৃতিতে আছি। তাই যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিতে হবে। কারণ আমানতের অথর্ ব্যাংকের নিজের নয়Ñ এটা জনগণের টাকা।’ বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মিট দ্য প্রেসে এসব কথা বলেন, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নিবার্হী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। মিট দ্য প্রেস আয়োজন করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নিবার্হীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকাসর্ বাংলাদেশ (এবিবি)। এবিবির সভাপতি ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ব্যাংক এশিয়ার এমডি মোহাম্মদ আরফান আলী, সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, সিটি ব্যাংকের এমডি সোহেল আর কে হোসাইন, এবিবির সাবেক সভাপতি মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান, ইস্টানর্ ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নিবার্হী আলী রেজা ইফতেখারসহ বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নিবার্হীরা। ব্যাংকের নিবার্হীরা বলেন, ‘দেশের অথর্নীতি অনেক বড় হয়েছে। জিডিপি, মাথাপিছু আয়সহ বেশিরভাগ সূচকেই আমরা উন্নতি করছি। এসব উন্নয়নের মূল ভ‚মিকা পালন করছে ব্যাংকিং খাত। তাই অথের্র জোগানের প্রধান এ খাতকে শক্তিশালী করতে শতভাগ কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি বাড়াতে হবে। আমাদের ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করতে হবে। ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ও সিকিউরিটি বাড়াতে হবে। ঝুঁকির ধরন বিভিন্ন সময় চেঞ্জ হয়। এটি সমন্বয় করতে হবে।’ এ সময় আন্তজাির্তক বাজারে পণ্যের কম মূল্য ও বিদ্যুৎ গ্যাসসহ অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সম্প্রতি সময়ে ঋণ খেলাপি বাড়ছে বলে জানান তারা। এবিবির সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে। এটি মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের যত বাধাই আসুক আমরা এগিয়ে যাব। সিডর, আইলার মতো প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবিলা করে এসেছি। তাই কোনো কোনো বাধা আমাদের পিছনে টেনে ধরে রাখতে পারবে না।’ গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে এবিবির সভাপতি বলেন, ‘গণমাধ্যম ব্যাংক খাতের সমালোচনা যেমন করে, তেমনি উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। কিন্তু সংবাদকমীের্দর কাছে আমাদের প্রত্যাশা আপনারা আমাদের সমালোচনা করবেন কিন্তু শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে একটু খেয়াল রাখবেন। কারণ পত্রিকার নেগিটিভ হেডলাইন দেখেই অনেকে আতঙ্কিত হয়। এ বিষয়ে একটু সচেতন হওয়া দরকার।’ সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘ভাত খেলে যেমন দুই একটা বাদ পড়ে। তেমনে ঋণ দিলে খেলাপি হবেই। দেশে এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূণর্। মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং সব ক্ষেত্রেই আমরা এগিয়ে গেছি। কৃষি থেকে আমরা এখন শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এ অজর্ন পরিবতের্নর প্রধান ভ‚মিকা পালন করছে ব্যাংকিং খাত। সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার অনেক কথা বলা হচ্ছে কিন্তু আমাদের অজের্নর কথা কেউ বলছে না।’ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি তথ্য অনুযায়ী বিগত প্রায় ১০ বছরে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান বলেন, ব্যাংকিং খাতের মধ্যে ৮ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা খারাপ হতেই পারে। এখন ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের কাজ হবে ভুল যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেই দিকে নজর রাখতে হবে। কারণ ব্যাংকের টাকা কোনো ব্যক্তির নয় এটি জনগণের টাকা। তিনি বলেন, ফ্যাক্টরি স্থাপন করে সঠিক সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারে না অনেক প্রতিষ্ঠান। খেলাপি বাড়ার এটাও একটি অন্যতম কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইস্টানর্ ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণের ঝুঁকি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের সক্ষমতা কতটুকু আছে এটাই দেখার বিষয়। আমরা যদি ঝুঁকিপূণর্ ঋণকে (ছোট, মাঝারি ও বড়) তিন ভাগে ভাগ করি তাহলে দেখা যাবে। বতর্মানে ছোট আকারের ঝুঁকিপূণর্ ঋণ মোকাবিলায় দেশের সবগুলো ব্যাংকের সক্ষমতা রয়েছে। আর মাঝারি আকারের ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষম ৭০ শতাংশ ব্যাংক। তবে বড় ঝুঁকির ক্ষেত্রে সবাই সক্ষম নয়।’ খেলাপি ঋণ হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের চেয়ে ঋণ গ্রহীতারা বেশি দোষী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সব কিছু দেখে ঋণ দেয় তারা ফেরত দেয় না। তাহলে দোষ কাদের? আর ব্যাংক খাতের খোয়া যাওয়া ২২ হাজার কোটি টাকার সম্প্রতি সিপিডি তথ্য পুরো সত্য নয় বলেন জানান তিনি।’ ব্যাংক এশিয়ার এমডি মোহাম্মদ আরফান আলী বলেন, এক সময় ব্যাংকিং খাতে ৯ দশমকি ৬১ শতাংশ সেবা বিনামূল্যে দেয়া হতো। বতর্মানে ৬৬ শতাংশ সেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। বতর্মানে স্কুল ব্যাংকিং, ১০ টাকার হিসাব খোলা সব ক্ষেত্রের আমরা সফল। যার কারণে অথর্নীতি উন্নয়নে ব্যাংকের রোল মডেল পালন করছে।