সেমিনারে বক্তাদের অভিমত

নিবার্চনী পরিবেশ নিশ্চিতে ইসি ‘ব্যথর্’

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মুহাম্মদ জমির বলেন, ‘যে দলই জিতুক, নিবার্চন সম্পন্ন হওয়ার পরিস্থিতি ক্রিটিক্যাল। নিবার্চন কমিশনের কিছু দায়িত্ব আছে, তাদের উচিত ছিল সেগুলো পালন করা। কিন্তু তারা সম্পূণর্ভাবে পালন করেননি।

প্রকাশ | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নিবার্চন আয়োজন নিয়ে কমিশনের সক্ষমতা এবং সদিচ্ছার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক নিবার্চন কমিশনার, সাবেক সচিব, পুলিশ কমর্কতা, রাজনীতিবিদ ও নিবার্চন পযের্বক্ষকরা। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রাথীের্দর নিবার্চনী পরিবেশ নিশ্চিতে কমিশন ‘ব্যথর্’ বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ নিবার্চনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করে ‘সেন্টার ফর গভনের্ন্স’। সেমিনারে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে সংস্থাটির কাযার্লয়ে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা নিবার্চন আয়োজনে কমিশনকে আন্তরিক ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহŸান জানান। নয়তো ভোটকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। সেমিনারে দলীয় সরকারের অধীনে নিবার্চন আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নিবার্বচন আয়োজন আমরা টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সুষ্ঠু একটি নিবার্চন হবে। তবে এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।’ নিবার্চন সময়ে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যকে যে বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে এটা রাষ্ট্রের অপচয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এম হাফিজউদ্দিন খান আরও বলেন, ‘নিবার্চন কমিশন এখন পযর্ন্ত যে কাযর্ক্রম দেখিয়েছে, এখনই বলা যায় এই নিবার্চন কমিশন টোটালি ফেইলর। এটা নিবার্চন হওয়ার আগেই বলা যায়। তারা নাকি কিছু দেখে না, তারা বøাইন্ড। মাঠে-ঘাটে কী হচ্ছে তা তারা কিছুই দেখেন না।’ হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘নিবার্চন কমিশন আমাদের ডেকেছিলেন। আমি সেখানে বলেছিলাম-প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তিনি নিবার্চনি বক্তব্য দিয়ে আসছেন এবং ভোট দেয়ার কথা বলে আসছেন। অন্যান্য দলতো রাস্তায় বের হতেই পারে না। তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে হবে। তখন নিবার্চন কমিশন বলল- শিডিউল ঘোষণার আগে আমাদের বলার কোনো ক্ষমতা নেই।’ সুষ্ঠু নিবার্চন আয়োজনে কমিশন দায়িত্ব পালন করছেন না উল্লেখ করে সাবেক নিবার্চন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এই যে মারামারি, একজন প্রাথীর্ গুলিবিদ্ধ, এটা বিবেচ্য না তিনি কোন দলের। তবে নিবার্চন কমিশনের যে দায়িত্ব, সেটি তারা প্রয়োগ করেননি, করবেন বলেও মনে হয় না। নিবার্চন কমিশন একচুয়ালি ডোন্ট নো, হাউ টু হ্যান্ডেল অ্যান্ড হাউ টু গো। মোদ্দা কথা আমরা কী দেখছি, যেটা দেখছি তা ভালো দেখছি না।’ সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মুহাম্মদ জমির বলেন, ‘যে দলই জিতুক, নিবার্চন সম্পন্ন হওয়ার পরিস্থিতি ক্রিটিক্যাল। নিবার্চন কমিশনের কিছু দায়িত্ব আছে, তাদের উচিত ছিল সেগুলো পালন করা। কিন্তু তারা সম্পূণর্ভাবে পালন করেননি। নিবার্চন কমিশনের উচিত ছিল আরও সক্রিয়ভাবে সব কিছু করা। শুধু বললেই হবে না, যেখানেই ঘটনা ঘটুক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’ নিবার্চন কমিশনের আচরণ পক্ষপাতমূলক উল্লেখ করে সাবেক সচিব এ এইচ মোফাজ্জল করিম বলেন, ‘খুব আশা করেছিলাম রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে যে ঘটনা ঘটেছে, এটা সহজে দমন করা যায়। এর দায়িত্ব নিবার্চন কমিশনের। নিবার্চন কমিশনকে কাজ করে দেখাতে হবে। এ নিবার্চন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা কি করে থাকবে। নিবার্চন কমিশনের নিলির্প্ততা পক্ষপাতমূলক অবস্থানে চলে গেছে।’ অনুষ্ঠানের সঞ্চলনা করেন সেন্টার ফর গভনেের্ন্সর নিবার্হী পরিচালক জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে কী নোট উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পিচ অ্যান্ড জাস্টিসের নিবার্হী পরিচালক ব্যারিস্টার মানজুর হাসান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও সেন্টার ফর গভনেের্ন্সর চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আতাউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি, জাতীয় রাজস্ব বোডের্র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, ব্রতীর প্রধান নিবার্হী কমর্কতার্ শারমিন মুরশিদ, ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, বিএনপির আন্তজাির্তক সম্পকর্ বিষয়ক সহকারী সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মামুন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাব প্রমুখ। এনাম খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এম ইনামুল হক, সেন্টার ফর গভনেের্ন্সর ভাইস চেয়ারম্যান ড. মানজুর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।