নিবাির্চত ৮১.৮৭% কোটিপতি

ভোটে নানা অনিয়ম তুলে ধরল সুজন

মহাজোট থেকে নিবাির্চত প্রাথীের্দর মধ্যে ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিবাির্চতদের ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং স্বতন্ত্র হিসেবে নিবাির্চত ৬৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রাথীর্ ব্যবসায়ী ও ধনী

প্রকাশ | ০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোটার্সর্ ইউনিটিতে রোববার সুজন আয়োজিত একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপনা শীষর্ক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। পাশে অন্যদের মধ্যে সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান Ñযাযাদি
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংস্থার দৃষ্টিতে ভোটের আগের রাতে মহাজোট প্রাথীের্দর প্রতীকে ভোট দিয়ে বাক্স ভরা, বাহিরে থেকে ব্যালট ভরা বাক্স ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং সকালেই ব্যালট শেষ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোটার্সর্ ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সুজন আয়োজিত একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপনা শীষর্ক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। লিখিত বক্তব্যে সুজনের প্রধান সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রাথীর্ই হলফনামায় নিজেদের তথ্য গোপন করেছেন। এটি একটি গুরুত্বপূণর্ অপরাধ। বিজয়ী সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৮১ দশমিক ৮৭ শতাংশ (২৪৪ জন) প্রাথীর্ ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তি। মহাজোট থেকে নিবাির্চত প্রাথীের্দর মধ্যে ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিবাির্চতদের ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং স্বতন্ত্র হিসেবে নিবাির্চত ৬৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রাথীর্ ব্যবসায়ী ও ধনী। তিনি বলেন, প্রাথীর্ মনোনয়নের ক্ষেত্রে নিবার্চনী আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট নিবার্চনী এলাকার ওয়াডর্, ইউনিয়ন, উপজেলা/থানা ও জেলা কমিটির দলীয় সদস্যরা নিবার্চনের জন্য প্রাথীর্র প্যানেল তৈরি করবেন এবং কেন্দ্রীয় পালাের্মন্টারি বোডর্ ওই প্যানেল থেকে প্রাথীর্ মনোনয়ন চ‚ড়ান্ত করবেন। কিন্তু এই বিধানটি কোনো দলকেই অনুসরণ করতে দেখা যায়নি। সংসদ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলে ধরে তিনি বলেন, নিবাির্চত ২৯৮ জনের মধ্যে ৮০ দশমিক ৮৭ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। মহোজোটের নিবাির্চতদের মধ্যে ৮১ দশমিক ৯৪ (২৩৬ জন) এবং ঐক্যফ্রন্টের ৫৭ দশমিক ১৪ (৪ জন) এবং স্বতন্ত্র হিসেবে নিবাির্চতদের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ (১ জন) রয়েছেন। নিবার্চনে ব্যবসায়ীদের প্রবেশ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিবাির্চতদের ৬১ দশমিক ৭ (১৮২ জন) শতাংশের পেশা ব্যবসা। এর মধ্যে মহাজোট থেকে নিবাির্চতদের ৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ঐক্যফ্রন্ট থেকে নিবাির্চতদের ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ রয়েছে। আইন পেশায় রয়েছেন ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সংসদে ব্যবসায়ীদের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাথীের্দর মামলার চিত্র তুলে ধরে সুজন জানিয়েছে, নিবাির্চত ২৯৮ জনের মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে বতর্মানে মামলা রয়েছে। অতীতে ছিল ১২২ জনের বিরুদ্ধে। বতর্মানে উভয় সময়ে মামলা ছিল এমন প্রাথীর্ ১৬ জন। ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে এমন প্রাথীর্ চারজন। অতীতে ছিল ৩৩ জনের বিরুদ্ধে। নিবাির্চতদের মধ্যে মাত্র ৪০ জন ঋণগ্রহীতা রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিবার্চনের পুরো পরিবেশ যদি আমরা বিবেচনায় নেই, তাহলে সেই সময়ের পরিস্থিতিকে সুষ্ঠু নিবার্চন তথা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার অনুক‚ল মনে করার কোনো অবকাশ নেই। প্রচার-প্রচারণার পুরো সময়জুড়েই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘষর্, নিবার্চনী প্রচারণায় বাধা দান, হামলা, গ্রেপ্তারি-হয়রানি ইত্যাদি কারণে অনেক প্রাথীর্র নিবিের্ঘœ প্রচার কাজ চলাতে না পারার অভিযোগ উঠেছে। বাধার কারণে ঐক্যফ্রন্টের প্রাথীর্ ও সমথর্করা প্রচারণা চালাতে না পারা, বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকাসহ অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিবার্চনে ১৭ জন নিহত, বেশিরভাগ কেন্দ্রে ঐক্যফ্রন্ট ও তার নেতাকমীর্ এবং পোলিং এজেন্টদের অনুপস্থিত দেখা গেছে। আবার বাধা না থাকা সত্তে¡ও অনেক প্রাথীের্ক প্রচারণায় নামতে না দেখা যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নিবার্চনী দায়িত্বে নিয়োজিত কমর্কতার্ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকের বিরুদ্ধে অনিয়মে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে। নিবার্চনী প্রচারণার চিত্র দেখে নিবার্চন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু নিবার্চনের জন্য কতটা সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।’ তিনি বলেন, নিবার্চনে অনিয়মেরও অনেক অভিযোগ দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া, ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া, ভোটারদের প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করা, দীঘর্ সময় লম্বা লাইন করে দঁাড়িয়ে থাকলেও ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া, কোনো কোনো কেন্দ্রে অস্বাভাবিক বেশি বা কম ভোট পড়া, ইভিএম এবং অন্য আসনগুলোর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা লক্ষণীয় ছিল। তিনি আরও বলেন, এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, এবারের নিবার্চনে মহাজোটের মহাবিজয় হয়েছে এবং মহাবিপযর্য় হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের। এর কারণ অনুসন্ধান করলে দুটি বিষয় বেরিয়ে আসবে। এগুলো হচ্ছে- জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাংগঠনিক দুবর্লতা ও নিবার্চনী অনিয়ম। অনিয়মের অভিযোগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব নিবার্চন কমিশনের (ইসি)। সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা কোনো নিবার্চন পযের্বক্ষণ করি না। তবে নিবার্চনী প্রক্রিয়ার ওপর কাজ করি। নিবার্চন নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন উঠেছে। নিবার্চনে যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে- ইসির দায়িত্ব হবে সেগুলো তদন্ত করা। অনিয়ম প্রমাণিত হলে নিবার্চন বাতিল করারও ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের।’ অনুষ্ঠানে পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি যেই কেন্দ্রের ভোটার, সেখানে দেখেছি নৌকা ও হাতপাখার পোস্টার ছাড়া অন্য কোনো প্রাথীর্র পোস্টার নেই। নিবার্চনে ভোটারদের স্বতঃস্ফ‚তর্তা ছিল না। স্বতঃস্ফ‚তর্তা না থাকলে এটাকে সুষ্ঠু নিবার্চন বলা যায় না।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান প্রমুখ।