ভয়ঙ্কর সড়কে প্রাণ হাতে নিয়ে যাত্রা

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৩০

যাযাদি ডেস্ক
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রাক-সিএনজি সংঘষের্র ফাইল ছবি
চট্টগ্রামে একসপ্তাহে তিন শিক্ষাথীর্সহ পঁাচজনের মৃত্যুর ঘটনায় নগরে চলাচলরত যানবাহন চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগীরা। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ধনিয়ালাপাড়ায় ফ্লাইওভারের মুখে সিএনজি অটোরিকশা ও হিউম্যান হলারের মুখোমুখি সংঘষের্ মারা যায় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র কাজী মাহমুদুর রহমান (১৪)। একই দিন রাতে বঁাশখালীর চাম্বল বাজারে ট্রাকচাপায় নিহত হন মোটর সাইকেল আরোহী আনোয়ার হোসেন (৪০)। সোমবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেছে কলেজ শিক্ষাথীর্ রেশমা আকতার (১৮)-এর। বুধবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে কোতোয়ালীর মোড়ে সরকারি সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষাথীর্ সোমা বড়ুয়ার (১৮) মমাির্ন্তক মৃত্যু হয় কাভাডর্ ভ্যান চাপায়। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কণর্ফুলীর মইজ্জারটেক এলাকায় মাইক্রোবাসচাপায় নিহত হন প্রদীপ কুমার দত্ত (৫২) নামে পিডিবির এক কমর্চারী। শুধু ছোট যানবাহনে দুঘর্টনা ঘটছে তা নয়, ভারী যানবাহনেও প্রতিদিন নগরের কোথাও না কোথাও দুঘর্টনা ঘটছে। এজন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে অভ্যন্তরীণ আটটি রুটে দিনে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার নিদের্শনা এলেও চালকরা এখনও শৃঙ্খলায় আসেনি। রাস্তায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যানবাহন (যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক) চলাচল এবং অবৈধ পাকির্ংয়ের ফলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও দুঘর্টনা ঘটলে আহত ব্যক্তিকে দ্রæত উদ্ধার করে হাসপাতালেও নেয়া যাচ্ছে না। মঙ্গলবার দুঘর্টনায় নিহত মাহমুদুর রহমানকে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় দেওয়ানহাট মোড়ে প্রায় ২০ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয় বলে জানান উদ্ধারকারীরা। সিএমপির ট্রাফিক সাজের্ন্ট শান্তময় দাশ বলেন, চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার করা, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং এবং পথচারীদের অসতকর্তায়ও দুঘর্টনা ঘটছে। তিনি বলেন, উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে সড়কের বেহাল দশা বিরাজ করছে। খেঁাড়াখুঁড়ির পর যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় গাড়ি উল্টে যাচ্ছে, ফুটপাত ঘেঁষে বসানো লোহার অ্যাঙ্গেলে লেগেও দুঘর্টনা ঘটছে। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের নগর সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সাজীব বলেন, বাসচাপায় শিক্ষাথীর্র মৃত্যুর ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত বছর ঢাকার পর চট্টগ্রামেও সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীর্রা। এরপরও অবস্থা পাল্টায়নি। যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতি থামিয়ে দিচ্ছে মানুষের জীবনের গতি। সড়কে এখন প্রাণ হাতে নিয়েই যাত্রা করতে হয় মানুষকে। নিসচা নগরে দুঘর্টনা রোধে বিভিন্ন সময় জনসচেতনতামূলক কাযর্ক্রম চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত গাড়ির গতিরোধে ট্রাফিক বিভাগের ভ‚মিকাই মুখ্য। রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী বলেন, সড়ক দুঘর্টনায় নিহত শিক্ষাথীর্ রেশমা আকতারের বাবা মো. মনির হোসেনকে ৩০ হাজার টাকা ‘ক্ষতিপূরণ’ দিয়ে ঘটনা আপসের চেষ্টা চালিয়েছিল একটি পক্ষ। একজন ছাত্রীর জীবনের মূল্য ৩০ হাজার টাকা হতে পারে না। আমি প্রতিবাদ করেছি, এ ঘটনায় মামলা করেছেন মনির হোসেন। দায়ী চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে রাউজানে শুধু নয়, দেশে কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি হবে না। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান বলেন, নগরের নিদির্ষ্ট আটটি রুটে দিনে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে অভিযান চলছে। এতে সড়কগুলোতে যানজট কমবে, পাশাপাশি দুঘর্টনাও কমে আসবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীর বলেন, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। সড়ক দুঘর্টনার অধিকাংশই ঘটছে অদক্ষ চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে। এসব বিষয় দেখভাল করা ও চালকদের সচেতন করার দায়িত্ব বিআরটিএ’র। সংস্থাটির নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট আছে। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরাও তাদের অভিযানে সহযোগিতা করে আসছে।