মতবিনিময় শেষে কাদের

'গণতামাশার' জন্য অনুমতি চাইলে পুলিশকে বলব

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সমালোচনা গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে। বিরোধী দল না থাকলে, সমালোচনা না থাকলে শুদ্ধ হওয়া যায় না।

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'গণশুনানি কাকে বলে? গণশুনানি না গণতামাশা? গণতামাশার জন্য অনুমতি চাইলে পুলিশ কমিশনারকে বলব।' মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অভিযোগ করেছে, তাদের গণশুনানির জন্য সরকার কোনো জায়গা দিচ্ছে না। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান তো আছে। মন্ত্রী আরও বলেন, সমালোচনা গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে। বিরোধী দল না থাকলে, সমালোচনা না থাকলে শুদ্ধ হওয়া যায় না। কোনো ভুল করে থাকলে বিরোধী দলের গঠনমূলক সমালোচনা থেকে তারা শুদ্ধ হতে পারেন। ১৪ দলের সমালোচনা নিয়ে আওয়ামী লীগে কী ভাবে-সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলের শরিকদের সমালোচনার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা অনেকে মুখ খুলেছেন, সমালোচনা করছেন। সরকার ভালোভাবে চলার জন্য এই সমালোচনাটি দরকার। এ সমালোচনা সংসদের বাইরের গণতন্ত্রে ইতিবাচক। গঠনমূলকবিরোধী দলের মাধ্যমে সংসদ আরও গতিশীল হতে পারে। তিনি বলেন, এ সমালোচনাগুলো তাদের প্রয়োজন আছে। যদি তারা কোনো ভুল করেন, ভুলকে সংশোধন করার জন্য এ সমালোচনার প্রয়োজন। এটা অব্যাহত থাকলে গণতন্ত্রের জন্য ভালো। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে, নাগরিক ঐক্যের আহ্‌বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার এই বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আওয়ামী লীগ নয়, মামলা করতে করতে তারা (ঐক্যফ্রন্ট) নিজেরাই পঙ্গু হয়ে যাবে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'রাস্তা নির্মাণ হলো, এক পশলা বৃষ্টি হলো, রাস্তা থাকে না। ছাল-বাকল সব উঠে যায়। তাহলে এই রাস্তা করার দরকার কি? রাস্তার জন্য বড় বড় বরাদ্দ। কিন্তু কিছু দিন গেলেই নানান সংকট দেখা দেয়। কোথাও গর্ত, কোথাও দেবে যায়, ছেঁড়া কাঁথার মতো রাস্তায় ফাটল দেখা যায়। এসব কেন হবে? তিনি বলেন, রাস্তা মেরামত ও কাজের কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। আগামী রমজানের ঈদের আগেই সব ধরনের ভাঙা রাস্তা মেরামত করতে হবে। চলতি কাজ শেষ করতে হবে। মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন, রাস্তা ইউজেবল (চলাচলে উপযোগী) করতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমাদের এখানে ওভারওয়েট একটা প্রবলেম, সেটা সবাই জানি। তাই বলে এত দ্রম্নত কেন রাস্তার বেহাল দশা হবে? নির্মাণকাজের যে ত্রম্নটি আছে, যথাযথ মানের রাস্তা তৈরি করার জন্য সরকারের যে নির্দেশনা, তা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে হবে।' মন্ত্রী বলেন, 'আমার নিজের জেলা বেগমগঞ্জেও একটা সড়কের কাজে ত্রম্নটিপূর্ণ নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছিল। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তেও সেটা প্রমাণিত হয়। মন্ত্রীর নিজের এলাকাতেও যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অন্য এলাকায় কী অবস্থা হতে পারে? তিনি বলেন, 'আপনাদের প্রতি আমার প্রধান নির্দেশনা হচ্ছে, 'রাস্তার কাজের মান যেন নিশ্চিত করা হয়। কাজটা যেন ৩, ৪ বা ৬ মাসে নষ্ট না হয়ে যায়। কাজটা দেশের কাজ। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। আর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করার মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। অনেক সময় প্রয়োজনে রাতেও কাজ করতে হবে। অনেকেও করেন, অনেকে করেন না। সরেজমিন দেখেছি। অনেক ত্রম্নটি ও দুর্বলতার ছবি দেখতে পাই। অবশ্য অনেক ইঞ্জিনিয়ার আছেন সততার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে প্রতিশ্রম্নতিশীলতার সঙ্গে কাজটা করেন।' মন্ত্রী বলেন, 'কাজের কোয়ালিটি খারাপ হলে দায় নিতেই হবে। কারণ, আজকাল কিন্তু ফেসবুকে লোকজন রাস্তার ছবি তোলেন। ভোগান্তির ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দেন। কোনো কিছু আর হাইড করা যায় না। সোস্যাল নেটওয়ার্কের কারণে মুহূর্তেই ভোগান্তির তথ্য প্রচার পায়। সুতরাং অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। কাজের ব্যাপারে মনোযোগী থাকা দরকার আপনাদের।' সভায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, সওজের ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস উইং, টেকনিক্যাল সার্ভিসেস উইং, ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং, পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ উইং ও যান্ত্রিক উইংসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।