চক্রের ৭ সদস্য আটক

বোকা সেজে বোকা বানান তারা!

প্রতারক চক্রটি সবাই পেশায় রংমিস্ত্রি, সেই সুবাদে সহজেই মানুষের বাসায় প্রবেশ করতে পারত। তারা রিয়েল দেখিয়ে কমমূল্যে বিক্রি করার কথা বলে প্রলোভন দেখাত। আর ওই ব্যক্তি রাজি হলেই টাকার বিনিময়ে ওপরে কয়েকটি রিয়েল নোট ও ভেতরে কাগজ দিয়ে বানানো বান্ডেল দিয়ে কেটে পড়ত।

প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর ভাটারা থানার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের সাত সদস্যকে আটক করেছের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের র্(যাব) সদস্যরা। ইনসেটে উদ্ধার হওয়া নগদ টাকা ও সৌদি মুদ্রা রিয়াল -যাযাদি
সৌদি আরবের মুদ্রা রিয়ালের কিছু নোট হাতে নিয়ে কোনো ব্যক্তির কাছে জানতে চান এগুলো কোন দেশের টাকা? কিংবা ওই ব্যক্তির কাছে বিদেশি মুদ্রাগুলো ভাঙানোর ঠিকানা জানতে চান। আসলে কিছুই বোঝে না এমন ভাব ধরে টার্গেট করা ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করাই মূল উদ্দেশ্য। রিয়েলগুলো কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তার সহজ-সরল জবাব ইজতেমার মাঠে পেয়েছে বা কেউ খুশি হয়ে দিয়েছে। এ ব্যক্তির সরলতার সুযোগ নিয়ে টার্গেট করা ওই ব্যক্তি লোভে পড়ে কমদামে রিয়াল কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আর এ ফাঁদে পা দিয়ে টাকার বিনিময়ে রিয়াল কিনলে নিজেই বোকা বনে যান ওই ব্যক্তি। দু-একটি রিয়াল নোট মিললেও আসলে মেলে কাগজের বান্ডেল। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে রাজধানীর ভাটারা থানার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ প্রতারক চক্রের সাত সদস্যকে আটক করেছের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের র্(যাব) সদস্যরা। আটকরা হলেন- আবু শেখ (৩৮), শাহিন মাতব্বর (৩৭), মহসিন মিয়া (৪৫), আবুল বাশার (৪০), কামরুল শেখ (৩৫), ইশারত মোলস্না (২৭) ও আব্দুর রহমান মোলস্না (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ রিয়েল, ৩ হাজার ৮২২ টাকা ও ১০ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের্ যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানর্ যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, চক্রটি বিভিন্নভাবে জনসাধারণকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করত। প্রতারকদের সবাই পেশায় রংমিস্ত্রি, সেই সুবাদে সহজেই মানুষের বাসায় প্রবেশ করতে পারত। কারো বাসায় ঢুকে বয়স্ক ব্যক্তিদের টার্গেট করত। তারা রিয়েল দেখিয়ে কমমূল্যে বিক্রি করার কথা বলে প্রলোভন দেখাত। আর ওই ব্যক্তি রাজি হলেই টাকার বিনিময়ে ওপরে কয়েকটি রিয়েল নোট ভেতরে কাগজ দিয়ে বানানো বান্ডেল দিয়ে কেটে পড়ত। এর বাইরে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় যানজটে আটকে থাকা প্রাইভেটকারের যাত্রীদের টার্গেট করত। তারা গাড়ির বাইরে থেকে রিয়েলের নোট দেখাত, এবং অনেক নোট আছে বলে জানাত। এ সময় কমদামে কিনতে আগ্রহী সেজে প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যরা আসত। তখন টার্গেট করা ব্যক্তি কেনার ফাঁদে পা দিলে তারা টাকার বিনিময়ে রিয়েলভর্তি ব্যাগ দিয়ে পুলিশ দেখে ফেলবে বলে দ্রম্নত কেটে পড়ত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাগজ বা কাপড়-দিয়ে মোড়ানো ভুয়া বান্ডেলে প্রতারণার শিকার হতো টার্গেট করা ব্যক্তি। এ ছাড়া, হজ ক্যাম্প টার্গেট করে চলত তাদের প্রতারণা। সেখানে গ্রাম থেকে আসা লোকদের ফাঁদে ফেলে এ পর্যন্ত লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। কখনো কখনো নিজেরা বোকা সেজে টার্গেট করা ব্যক্তিকে বোকা বানাত। রিয়েলের নোট দেখিয়ে কিছু বোঝে না এমন ভাব নিত। আর সেই সুযোগে টার্গেট করা ব্যক্তি রিয়েল কেনার জন্য রাজি হলেই প্রতারণার শিকার হতো। চক্রটি রিয়েল হস্তান্তর করার জন্য বিভিন্ন শপিংমল কিংবা জনবহুল জায়গা ঠিক করত, যেন টাকা নিয়ে দ্রম্নত কেটে পড়তে পারে। র্ যাব-১ অধিনায়ক আরও বলেন, আবু শেখ এ চক্রের মূল হোতা। তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে সাতজনের এ চক্রটি অভিনব পন্থায় প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। এমন আরও দু-একটি চক্র রাজধানীতে সক্রিয় থাকতে পারে, তাদের বিষয়ের্ যাবের গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।