মেট্রোরেলে স্ক্রু পাইলিং কমেছে ভোগান্তি

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার

প্রকাশ | ১৮ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীতে মেট্টোরেলে এখন জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিলার নির্মাণ করা হচ্ছে -যাযাদি
রাজধানীবাসীর যানজটের যন্ত্রণা দূর করার সর্বশেষ প্রচেষ্টার অংশ মেট্রোরেল প্রকল্প। আর এই মেট্রোরেলে যানজটমুক্ত শহরের স্বপ্ন বুনছে ঢাকাবাসী। সেই স্বপ্নের মেট্রো রেলপথ নির্মাণে যারা যুক্ত রয়েছেন, তাদের এ চামড়া ঝলসানো রোদ বালু হাওয়া গায়ে মাখার সময়ই নেই! মেট্রোরেল প্রকল্পের অবকাঠামো তৈরিতে তারা মহাব্যস্ত! সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে পৃথিবীতে যানজটের শহর হিসেবে খ্যাত রাজধানী ঢাকা। থাকবে না চিরচেনা সেই যানজট। বাঁচবে মানুষের সময়, নষ্ট হবে না কর্মঘণ্টা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মেট্রোরেলের প্যাকেজ-৬ এর আওতাধীন কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দিনরাত কর্মযজ্ঞ চলছে। এ প্যাকেজে কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিলে মোট ৫টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মেট্রোরেলের বাংলা মোটর ও প্রেসক্লাব স্টেশনের নির্মাণ কাজ চলছে। গত ২ সপ্তাহ যাবৎ এ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া কারওরান বাজার থেকে বাংলা মোটর পর্যন্ত ৩৬টি পাইলিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। আর এ প্যাকেজে ম্যানুয়ালি নয় জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পিলার নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে 'স্ক্রু-পাইপ পাইলিং' জাপানি প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি বর্তমানে বিশ্বের ১৬৮টি প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আগের চেয়ে লোকবলও কম লাগছে এবং ধুলাবালি কম ওড়ায় জনগণের কম ভোগান্তি হচ্ছে। 'স্ক্রু-পাইপ পাইলিং' প্রযুক্তি ব্যবহারে ফলে বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাইলিং কাজ শেষ হওয়ার পরই পিলার বসানোর কাজ শুরু হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলামোটর থেকে শাহবাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত প্রাথমিক ট্রায়াল টেঞ্জার কাজ চলছে। এটা ৫০ শতাংশেরও বেশি সম্পন্ন হয়েছে। ২ মিটার গভীর ও ১ মিটার প্রশস্ত ট্রায়াল টেঞ্জারের কাজ চলছে। এটা শেষ হলে পাইলিং কাজ শুরু করা হবে। পাইলিং শেষে পিলার উঠলেই এ অংশে দৃশ্যমান হবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শ্রমবীজী মানুষ মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ করছেন। চীনের এক ঝাঁক প্রকৌশলী, বাংলাদেশ ও চীনের কয়েকশ দক্ষ নির্মাণ শ্রমিকের সঙ্গে এদেশের কয়েকশ' সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ দিন রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন নির্মাণাধীন এ মেট্রোরেলে। মেট্রোরেলের শ্রমিক আব্দুল আহাদ জানান, এখানে দিনরাত কর্মযজ্ঞ চলে। তবে আজ সপ্তাহের ছুটির দিন হওয়ায় কর্মযজ্ঞ কিছুটা কম। এছাড়া পাইলিং করার মালামাল আসবে কাল। মেট্রোরেল প্রকল্পের প্যাকেজ-৬ এর স্টোর কিপার তায়েফুল ইসলাম বলেন, প্যাকেজ ৬-এর কাজ দ্রম্নত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী ২০ মার্চ থেকে মতিঝিল অংশ থেকে শুরু হবে পাইলিংয়ের কাজ। প্যাকেজ-৬ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন প্রবাল বলেন, এ অংশে অত্যাধুনিক স্ক্রু পাইলিং কাজ হচ্ছে। নিচে ঢালাই ছাড়াই পাইলিং কাজ করা হবে। সবচেয়ে আধুনিক পাইলিং হচ্ছে মেট্রোরেলের এ অংশে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প 'ঢাকার্ যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। ঢাকা ম্যাসর্ যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএমআরটিডিপি) বা মেট্রোরেল প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এ প্রকল্পে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার। ঘণ্টায় ১শ কিলোমিটার বেগে ছুটবে যাত্রী নিয়ে। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটারে ৯টি স্টেশন থাকবে। এগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পলস্নবী, মিরপুর, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাকি ৮ দশমিক ৪ কিলোমিটারে স্টেশন থাকবে ৭টি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করতে চায় সরকার। এছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও চারটি স্টেশন নির্মাণ কাজ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে জাপানের সুমিৎসো মিটসুই কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল মাত্র ৩৭ মিনিটে যাওয়া যাবে। এই ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় গড়ে ৩২ কিলোমিটার (সর্বোচ্চ ১শ' কিলোমিটার)। রুটটিতে চলাচল করবে ১৪টি ট্রেন। প্রতিটিতে ৬টি করে বগি থাকবে। প্রতি ট্রেনে ৯৪২ জন যাত্রী বসে এবং ৭৫৪ জন দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। প্রতি ৪ মিনিট পর ট্রেন ছেড়ে যাবে। বহুল আকাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেলের অবকাঠামো নকশা করা হয়েছে শত বছরের জন্য।