বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী

শিক্ষকদের অবসর সুবিধা নিয়ে সংকট

প্রকাশ | ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
অবসর নেয়া কয়েকজন শিক্ষক -ফাইল ছবি
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে আসা শিক্ষক আবদুর রহিম হাওলাদার প্রায় আড়াই বছর আগে অবসরে গেছেন। এখন পর্যন্ত অবসর-সুবিধার টাকা পাননি। কবে পাবেন, সেই খোঁজ নিতে এসেছেন। রংপুরের বদরগঞ্জের একজন শিক্ষকের (নাম প্রকাশ করেননি) সমস্যা হলো, একই কাগজপত্র দিয়ে কল্যাণ-সুবিধার টাকা পেলেও অবসর সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না। রাজধানীর নীলক্ষেত-পলাশীতে শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান বু্যরো (ব্যানবেইস) ভবনে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর-সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যালয়ে গত মঙ্গলবারের চিত্র এটি। এমন চিত্র নিত্যদিনের। বর্তমানে এমপিওভুক্ত (মাসে মূল বেতন ও কিছু ভাতা পান) শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় পাঁচ লাখ। অবসর ও কল্যাণ-সুবিধার টাকা পেতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কমপক্ষে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়। অবসর-সুবিধা বোর্ডের সর্বশেষ হিসাবে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত আবেদন করা শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরের আংশিক (পুরনো স্কেলে) সুবিধা পেয়েছেন। বাকি টাকা (নতুন স্কেলে) পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এমন শিক্ষকের সংখ্যা ১৬ হাজার ৩৮৩ জন। আর ২০১৭ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত যারা অবসরে গেছেন, তারা এক টাকাও পাননি। এমন শিক্ষক-কর্মচারী প্রায় ১৪ হাজার। আর কল্যাণ সুবিধার টাকার আবেদন করেও না পাওয়ার সংখ্যা ১৬ হাজার ৬১১ জন। মূলত অর্থের অভাবেই এই সমস্যা। সম্প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে এ বাবদ প্রতি মাসে কেটে নেয়া টাকার হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনগুলো আপত্তি জানাচ্ছে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবে। অবশ্য অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের দুই সচিব দাবি করেছেন, সংকট সমাধানের জন্য শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতাদের উপস্থিতিতেই চাঁদার হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। যদিও ভিন্নমত আছে শিক্ষকনেতাদের। এত দিন প্রতি মাসে অবসরের জন্য একেকজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে মূল বেতনের ৪ শতাংশ ও কল্যাণ সুবিধার জন্য ২ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হতো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন অবসরের ৬ শতাংশ ও কল্যাণ সুবিধার জন্য ৪ শতাংশ টাকা কাটার প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, সারা জীবন সেবা দেয়ার পর একজন শিক্ষককে অবসরের পর তাঁর স্বীকৃতি ও আর্থিক নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। সেখানে চাঁদার হার বাড়ানো হলে বৈষম্য বাড়বে। অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা মূলত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা এবং সরকারের অনুদানে দেয়া হয়। অবসর সুবিধা বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন অবসরের জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে মাসে সাড়ে ৩৫ কোটি টাকা আদায় হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চাঁদা পেলে তা দাঁড়াবে সাড়ে ৫২ কোটি টাকা। কিন্তু এখন শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা দিতে মাসে গড়ে লাগে ৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও মাসে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। বর্তমানে গড়ে সাড়ে আটশ' শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে যান। অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব শরীফ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নতুন হারে চাঁদা নিলেও অবসর সুবিধার সমস্যা একেবারে মিটবে না। তবে তখন সরকার আরও টাকা দেবে বলে তার আশা। অবশ্য নতুন হারে চাঁদা পেলে অবসরে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে কল্যাণ সুবিধা দেয়া যাবে বলে মনে করেন কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব মো. শাহজাহান আলম।