টাকা আত্মসাৎ করে যৌনকর্মী খুন রহস্য উদঘাটন ফোনে

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
যৌনকর্মী খুনের দায়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার নেজাম -যাযাদি
চট্টগ্রাম নগরীর আমিন জুটমিল এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে গত ১৩ মে মনি (২৫) নামে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ। ব্যাচেলর হিসেবে বাস করা মনির হত্যা রহস্য জানা যাচ্ছিল না কোনোভাবেই। অবশেষে একটি মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে সেই রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, নিহত মনি একজন যৌনকর্মী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। দালালের কাছে জমা থাকা দেড় লাখ টাকা চাওয়ায় তিনি খুন হয়েছেন। তার কাছে আসা নেজাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি দালালের নির্দেশে মনিকে খুন করে। মনির মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন হয়। এ ঘটনায় নেজামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নেজাম আগ্রাবাদ মুহুরী পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর এলাকায়। গ্রেপ্তারের পর তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) প্রিটন সরকার জানান, গত ১৩ মে আমিন জুটমিল এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ওই নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকারী নেজামকে গ্রেপ্তার করা হয় ভুক্তভোগীর মোবাইলের সূত্র ধরে। সোমবার নেজামকে আদালতে আনলে বিচারকের সামনে হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে নেজাম জানান, নিহত মনি পেশায় যৌনকর্মী ছিলেন। নেজাম তার খদ্দের। মনির ভাড়া বাসায় আরও বেশ কয়েকজন নারী নিয়ে অসামাজিক কাজ চালাতেন। চারতলায় দুইটা রুমের একটাতে নিজে থাকতেন, আরেক রুম অসামাজিক কাজে ব্যবহার করতেন। নিজের আয়ের প্রায় দেড় লাখ টাকা দালালের কাছে জমা রেখেছেন মনি। কিছুদিন আগ থেকে সেই দালালকে টাকার জন্য চাপ দেন মনি। একই সঙ্গে ওই বাসায় আর থাকবেন না বলেও দালালকে জানান। কিন্তু দালাল মনির টাকা পরিশোধ করতে রাজি হননি। ওই দালাল পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ১ \হবিষয়টি নেজামকে জানিয়ে মনিকে বোঝাতে বলেন যে, তার টাকা আস্তে আস্তে দিয়ে দেয়া হবে। আর যদি না বোঝে তাহলে মনিকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেন। জবানবন্দিতে নেজাম আরও জানান, গত ১০ মে সন্ধ্যার সময় ওই দালাল আবারও এ ব্যাপারে নেজামকে ফোন দেন। দালালের কথা মতো পরদিন ১১ মে সকাল ৯টার দিকে মনির কাছে ফোন করে তার বাসায় আসার কথা জানান নেজাম। সকাল সাড়ে ১০টায় মনির বাসার নিচে এসে নেজাম আবার ফোন করেন তাকে। সিগন্যাল পেয়ে বিল্ডিংয়ের চারতলার ভাড়া রুমে উঠে যান নেজাম। বাসায় এসে নেজামকে এক কাপ চা খাওয়ান মনি। এরপর আলাপকালে দালালের কাছে মনির পাওনা টাকার কথা উঠে আসে। তখন নেজাম বলেন, 'তোমার টাকা আস্তে আস্তে দিয়ে দেবে। তুমি এ বাসায় থাকো।' কিন্তু মনি নেজামের কথা শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মনিকে সজোরে থাপ্পড় মারেন নেজাম। মনি মেঝেতে পড়ে যান। এরপর উঠে দাঁড়ালে তাকে আবার দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দেন। এতে আহত হন মনি। এরপর মুখ ও গলায় ওড়না দিয়ে চেপে ধরে মনির মৃতু্য নিশ্চিত করেন নেজাম। পরিদর্শক (তদন্ত) প্রিটন সরকার বলেন, হত্যাকান্ডের পর নেজাম মুহুরী পাড়ার বাসায় দিব্যি বসবাস করতে থাকেন। এদিকে ঘটনার তদন্তে মনির বাসার পাশে ভাড়া থাকা কয়েকজন নারীর খোঁজ পায় পুলিশ। এর মধ্যে দুই নারীর কাছ থেকে আসে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য। একই সঙ্গে মনির মোবাইল ফোনের কিছু কাগজপত্রও তার বাসায় পাওয়া যায়। সে কাগজপত্রও পরীক্ষা করে দেখা হয়। ইউ দিয়ে একটি নম্বর সেভ ছিল মোবাইলে, সে নম্বরটিই নেজামের। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নেজামকে গত রোববার সন্ধ্যায় মুহুরী পাড়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার হাতে ভিকটিমের মোবাইলটিও পাওয়া যায়।