সরেজমিন তেজগাঁও স্টেশন

রেলের টিকিটের জন্য দুর্ভোগ-ভোগান্তি চরমে

রেলের সার্ভারে বিপত্তি, স্বজনপ্রীতি ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে

প্রকাশ | ২৭ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রেলের আগাম টিকিটপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। ছবিটি রোববার রাজধানীর তেজগাঁও রেল স্টেশন থেকে তোলা -যাযাদি
ধযাযাদি রিপোর্ট ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রেলের আগাম টিকিট বিক্রির শেষ দিনেও দুর্ভোগে নাকাল হতে হয়েছে রাজধানীর তেজগাঁও রেল স্টেশনে আসা টিকেটপ্রত্যাশীদের। রেলের সার্ভারে বিপত্তি, স্বজনপ্রীতি ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ফলে টিকিট পেতে যাত্রীদের দিনে-রাতে ১৮ থেকে ২১ ঘণ্টা অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়েছে। এ বছর প্রথমবারের মতো কমলাপুর ছাড়াও তেজগাঁও, বনানী, বিমানবন্দর ও ফুলবাড়িয়া নগর কাউন্টার থেকে রেলের আগাম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। গত ২২ মে ২৯ মের আগাম টিকিট বিক্রির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল কার্যক্রম। রোববার শেষ দিনে দেয়া হয়েছে ৪ জুনের আগাম টিকিট। সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফ্ল্যাটফর্ম ছাড়াও বাইরের রাস্তায় কয়েক সারি টিকিটপ্রত্যাশী একাধিক লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যারা আগের দিন বিকাল ৩টা থেকে অপেক্ষমাণ ছিলেন। দুটি কাউন্টারে পুরুষ যাত্রীদের জন্য এবং একটি কাউন্টারে নারী ও প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা রাখা ছিল। কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টায় বিক্রি শুরুর পর বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬০টি টিকিট। সেই হিসাবে দেড় ঘণ্টায় প্রতিটি কাউন্টার থেকে গেছে মাত্র ৩০টি টিকিট। একেকজন ক্রেতার হাতে টিকিট তুলে দিতে সময় লেগেছে গড়ে তিন মিনিট। অবশ্য পুরুষ কাউন্টারের একজন কর্মী জানান, কিছুক্ষণ পর পর সার্ভার গতিহীন হয়ে পড়ছে। ফলে অনেক সময় ১০ মিনিটেও একটি টিকিট আসছে না। আর সার্ভার যখন ঠিক হচ্ছে তখন এক মিনিটেই একজন টিকিটপ্রত্যাশীর হাতে টিকিট তুলে দেয়া গেছে। ময়মনসিংহগামী হিরামন খান নামের এক যাত্রী বলেন, শেষ দিনের টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে আগের দিন বিকাল ৩টায় স্টেশনে এসে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। রাতে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের টোকেন দেওয়া হলে তিনি পান ৮০ নম্বর সিরিয়াল। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টায়ও অন্তত ২০ জনের পেছনে পড়ে আছেন তিনি। 'একেকজনকে টিকিট দিতে ৫-১০ মিনিট সময় খেয়ে ফেলতেছে। শনিবার বিকাল ৩টা থেকে এখানে অপেক্ষা করতেছি। পরিবারের লোকজন যাবে বলেই এত কষ্ট করা। শুধু নিজের জন্য হলে এত কষ্ট না করে দাঁড়িয়ে চলে যেতাম,' বলেন হিরামন। তার মতো একই অভিজ্ঞতা হচ্ছে ৮০ নম্বর সিরিয়ালে থাকা জামালপুরগামী যাত্রী স্বাধীনের। মোখলেছ নামের আরেক যাত্রীর সিরিয়াল দেখা গেছে ৩৭৩ নম্বর। বেলা ১২টার দিকে তিনি বলেন, 'এখনো একশ সিরিয়াল পার হয়নি। এখন বিকাল ৪টার মধ্যে আমার সিরিয়াল আসবে কিনা সন্দেহ।' এদিকে মহিলা কাউন্টারে সামনের অংশটি ঘিরে রেখেছেন স্থানীয় দালাল চক্র। তারা দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশ করে টিকিট সংগ্রহ করে তা চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অপেক্ষমাণদের অভিযোগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিআরপি পুলিশের এক সদস্য বলেন, 'আমরা কয়েকজন মহিলাকে ধরেছি। তাদের যাচাই করতে গিয়েই কাউন্টারে বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।' তখনই মহিলাদের কাউন্টারে আনসার সদস্যদের যাত্রীদের অনুরোধ রক্ষা করে বিনিময়ে টাকা নিতে দেখা গেছে। জিআরপি পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের ওসি রেজাউল বলেন, তিন কাউন্টার মিলে তাদের এক পস্নাটুন কর্মী দায়িত্ব পালন করছে। তেজগাঁও স্টেশন মাস্টার এম এ আজিজ বলেন, সার্ভারে গতি কমে যাওয়ার বিষয়টি কাউন্টার থেকে তাকে একবারও জানানো হয়নি। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ সহ্য করে তারা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গত চার দিনে দৈনিক কতটি করে টিকিট বিক্রি করা গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কাছে টাকার হিসাব আছে। ২২ মে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৪৪৫ টাকা, ২৩ মে ২৩ লাখ ৮ হাজার ১২৪ টাকা, ২৪ মে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ২৪৫ টাকা এবং ২৫ মে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৩ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে।