আয়-ব্যয় অর্জন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ: জিএম কাদের

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর বনানীতে শনিবার জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের। পাশে দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ অন্য নেতারা -ফোকাস বাংলা
জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় বাজেট দিয়েছে। বাজেটের আক?ার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এই বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। বাজেটের রাজস্ব ব্যয় এবং উন্নয়ন ব্যয় এ দুটি অর্জন করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। শনিবার রাজধানীর বনানীতে জাপার কার্যালয়ে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন জিএম কাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাপার মহাসচিব ও সংসদ সদস্য (এমপি) মসিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ। জিএম কাদের বলেন, বাজেটে ঘাটতি বেশ বড় (১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা)। সরকারকে বড় অঙ্কের অর্থ রাজস্ব খাতে আয় করতে হবে। আবার নির্ধারিত খাতে বড় ধরনের ব্যয়ও করতে হবে। আয়ের প্রশ্নে আমরা চাই, অপেক্ষাকৃত অবস্থাপন্ন থেকে বেশি হারে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা ও স্বল্প আয়ের মানুষের ঘাড়ে কম দায় চাপানো হোক। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ কর যেমন আয়কর থেকে যতদূর সম্ভব রাজস্ব আদায় হোক ও পরোক্ষ কর (যেমন আমদানি শুল্ক ইত্যাদি) থেকে কম অংশ আয়ের ব্যবস্থা করা হোক। তিনি বলেন, সরকারের বাজেট প্রস্তাবে তেমনটি দেখানো হয়েছে মোট রাজস্ব আয়ের মধ্যে আয়কর ৩৫ শতাংশ + মূল্য সংযোজন কর ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ (এটাকেও প্রত্যক্ষ কর বলা যায়) + আমদানি শুল্ক ২৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে সংশয় আছে। আয়কর থেকে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ও যে পদ্ধতির মাধ্যমে করা হবে বলা হয়েছে তা বর্তমান আয়কর বিভাগের অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও লোকবল ইত্যাদির কারণে প্রায় অসম্ভব, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে। ফলে আয়কর থেকে মোট আদায়ের যে অংশ আশা করা যাচ্ছে তার থেকে অনেক কম আয় হবে। আশঙ্কা আছে। একই কথা মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে, আয় ও ব্যয়ের মধ্যে একটি বিশাল ফারাক আছে, যা বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ (৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি) + বিদেশি ঋণ ও সাহায্য (৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি) + ব্যাংকের বাইরে (সঞ্চয় পত্র ইত্যাদি) থেকে নেয়া ঋণ (৩০ হাজার কোটি) টাকা। বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট চলছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সরকারের অধিক হারে ঋণ গ্রহণ। ফলে বেসরকারি খাতে নতুন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী যথেষ্ট ঋণ পাচ্ছেন না। বিনিয়োগ ও ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সমস্যা হচ্ছে। এবার ঘাটতি মেটাতে সরকার যখন আবার ব্যাংক ঋণের সাহায্য নেবে তা বিরাজমান সংকটকে আরও ঘনীভূত করতে পারে উলেস্নখ করে কাদের বলেন, দেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকট বেকার সমস্যা। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বাধা হোক এ ধরনের পদক্ষেপ যে কোনোভাবেই পরিহার করতে হবে বলে মনে করি। ব্যাংকের বাইরে থেকে নেয়া ঋণ, অর্থ, সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে নেয়া। এ ধরনের ঋণের খরচ অধিক ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এ ধরনের ঋণ গ্রহণের আগে বিষয়টি ভালোমতো পরীক্ষানিরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া, মোট ঘাটতি আরও অধিক হওয়ার আশঙ্কা আছে। কো-চেয়ারম্যান কাদের বলেন, রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করা হয়েছে অর্থাৎ ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা তা পূর্ববর্তী অর্থবছরের (২০১৮-১৯) সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশের বেশি। এ লক্ষ্যমাত্রা হয়তো অর্জন সম্ভব, তবে না হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।