ঈদের আগেই ভারত থেকে আসছে ৮৩ ডাবল ডেকার

বিআরটিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে ৫৮৮টি পুরনো বাস রয়েছে, যেগুলো পরিবেশ দূষণ করছে। বাসের স্বল্পতার কারণে বিআরটিসির পক্ষে যাত্রীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে নতুন ভারতীয় বাসগুলো কেনা হচ্ছে। ঈদের আগে বাসগুলো সারাদেশের যাত্রী পরিবহনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানায় বিআরটিসি। প্রতিটি বাসের আসন সংখ্যা ১২০টি। বিশাল আকৃতির বাসগুলোতে আরও ৪০ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারেন। একেকটি বাস পাঁচটি মিনিবাসের সমান যাত্রী বহন করতে সক্ষম।

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিআরটিসি ডাবল ডেকার বাস -যাযাদি
দূরপালস্নাসহ রাজধানীর যাত্রী পরিবহনে ঈদের আগেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বহরে যোগ হতে যাচ্ছে আরও ৮৩টি ডাবল ডেকার বাস। এসব বাস যোগ হবে ঈদযাত্রায়। ২০১৬ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে বিআরটিসির জন্য দ্বিতল, একতলা এসি এবং নন-এসি বাস সংগ্রহ প্রকল্পের আওতায় বাসগুলো কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়। পর্যায়ক্রমে প্রকল্পের আওতায় কয়েক ধাপে ৫১৭টি বাস বাংলাদেশে এসেছে। বাকি ৮৩টি বাস ঈদুল আজহার আগেই আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে বলে জানায় বিআরটিসি। ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ ১২ আগস্ট, এ উপলক্ষে অধিকাংশ বাস দেশের লংরুটে চলাচল করবে। ঈদের আগে বাসগুলো সারাদেশের যাত্রী পরিবহনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানায় বিআরটিসি। প্রতিটি বাসের আসন সংখ্যা ১২০টি। বিশাল আকৃতির বাসগুলোতে আরও ৪০ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারেন। একেকটি বাস পাঁচটি মিনিবাসের সমান যাত্রী বহন করতে সক্ষম। বিআরটিসি সূত্র জানায়, ভারতীয় কোম্পানি অশোক লেল্যান্ডের কাছ থেকে প্রতিটি ৭২ লাখ টাকা দরে ৩০০টি ডাবল ডেকার, ৬৯ লাখ টাকা দরে একশটি এসি সিঙ্গেল ডেকার, ৭০ লাখ টাকা দরে একশটি সিঙ্গেল ডেকার এসি ইন্টারসিটি এবং ৪২ লাখ টাকা দরে টাটার কাছ থেকে একশটি সিঙ্গেল ডেকার নন-এসি বাস কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব বাসের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১২ বছর। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যেই একশটি এসি সিঙ্গেল ডেকার, একশটি নন-এসি সিঙ্গেল ডেকার, একশটি সিঙ্গেল ডেকার ইন্টারসিটি ও ২১৭টি ডাবল ডেকার বাস বাংলাদেশে এসেছে। বাকি ৮৩টি ডাবল ডেকার বাস আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশের মাধ্যমে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ। বিআরটিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া বলেন, 'কয়েক ধাপে আমরা ইতোমধ্যেই ভারত থেকে ৫১৭টি বাস পেয়েছি। ৬০০টির মধ্যে ৮৩টি ডাবল ডেকার ননএসি বাস আগস্ট মাসেই হাতে পাব। ৮৩টির মধ্যে ৩৪টি বাস এখন বেনাপোলে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায়। বর্ডারে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ৮৩টি বাস হাতে পাব। ফলে পরিবহন ব্যবস্থাপনা আরও সহজ হবে। ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি কমবে।' বিআরটিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের সবশেষ ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুযায়ী প্রতিটি বাসের সিডি ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছে বেশি। ৬০০টি বাসে পুনরায় ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট ধরা হয়েছে। ফলে এ খাতে সিডি ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১৫ কোটি টাকা। সবশেষ ডিপিপিতে ছিল ১০১ কোটি টাকা। ফলে সিডি ভ্যাটে বাড়তি লাগছে আরও ১৪ কোটি টাকা। প্রথমে ৬০০টি বাসে নিবন্ধন ফি ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এখন নিবন্ধন ফি বাবদ ৬০ লাখ টাকা বাড়ছে। ফলে মোট নিবন্ধন ফির ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ৬০০ বাস পেতে এলসি কমিশন খাতেও ব্যয় বাড়ছে ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ফলে সিডি ভ্যাট, নিবন্ধন ও এলসি খাতে ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৫২৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১৩২ কোটি ১৬ লাখ এবং ভারতীয় ঋণ ৩৯৩ কোটি টাকা। এসব কাজের জন্য এক মাস অতিরিক্ত সময় লাগছে। বিআরটিসি সূত্র জানায়, ভারত থেকে আরও দুই বিলিয়ন ডলার (২০০ কোটি ডলার) নমনীয় ঋণ (এলওসি) পেয়েছে বাংলাদেশ। অবকাঠামো বিশেষ করে রেল, যোগাযোগ, বিদু্যৎ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে এ অর্থ ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ। অন্তত ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা অবশ্যই ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। ৬০০টি বাস কিনতে প্রথমে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৪৩৪ কোটি ৩২ লাখ টাকাই ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) থেকে আসবে। পরে ব্যয় কমে হয় ৫২৫ কোটি টাকা। বিআরটিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে সংস্থাটির বহরে ৫৮৮টি পুরানো বাস রয়েছে, যেগুলো পরিবেশ দূষণ করছে। বাসের স্বল্পতার কারণে বিআরটিসির পক্ষে যাত্রীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদাও মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে নতুন ভারতীয় বাসগুলো কেনা হচ্ছে। মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর ও গাবতলী বাসডিপোতে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বিআরটিসির অচল বাসগুলো। কোনো কোনো বাসের কেবল বাইরের আবরণ আছে, যন্ত্রাংশ খুলে পড়েছে। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কিছু কিছু বাস দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। কিছু কিছু বাসের চাকা দেবে গেছে মাটির সঙ্গে। কিছু বাস পুড়েছে রাজনৈতিক আগুনে হরতাল-অবরোধের সময়। এসব বাসের স্থলে রিপেস্নস করা হবে নতুন ভারতীয় ঋণে কেনা বাসগুলো। বাসগুলোর কিছু বাস সারাদেশে দেয়া হবে। আর কিছু বাস রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে চালু করা হবে।