ইচ্ছেমতো ভাড়া নির্ধারণ

বিলাসবহুল বাসের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে মিনিবাস হিসেবে!

সব পরিবহনকে ধরা হচ্ছে এক ক্যাটাগরিতে। এ সুযোগে মালিকপক্ষ ইচ্ছেমতো ভাড়া নির্ধারণ করছে। তাই যাত্রীরা অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। এতে করে রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার।

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কোটি টাকার একটি বিলাসবহুল এসি বাস -যাযাদি
বিলাসবহুল এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) বাস বলতে কোনো ক্যাটাগরি নেই বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (বিআরটিএ) তালিকায়। এসি, নন এসি সব পরিবহনকে ধরা হচ্ছে এক ক্যাটাগরিতে। শুধু তাই নয়, কোটি টাকার বাস রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে মিনিবাস হিসেবে। ফলে এসব পরিবহনের ভাড়ার ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেই সংস্থাটির। এ সুযোগে মালিকপক্ষ ইচ্ছেমতো ভাড়া নির্ধারণ করছে। তাই যাত্রীরা অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। এতে করে রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদার সঙ্গে পালস্না দিয়ে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থায় যুক্ত হচ্ছে দেশের গণপরিবহনগুলো। দীর্ঘ যাত্রাপথে এসি বাসই পছন্দ যাত্রীদের। এসব গাড়ির ভাড়া নন এসির তুলনায় বেশি। শুধু এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণে নয়, রেজিস্ট্রেশনেও রয়েছে অসঙ্গতি। বিলাসবহুল বিজনেস ক্লাস, হুন্দাই, হাইডেক ও ভলবোসহ কোটি টাকা মূল্যের পরিবহনও রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে মিনিবাস হিসেবে। বিআরটিএর দাবি, এসি বা বিলাসবহুল বাসের বিষয়ে কোনো আইন-কানুন বা নিয়মনীতি তাদের নেই। তারা শুধু বাসের আসন হিসেবেই রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে বিলাসবহুল এসব পরিবহন আসন সংখ্যা হচ্ছে ২৮ সিটের। কিন্তু ২৮ সিটের বাসকে মিনিবাস হিসেবেই রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে বিআরটিএ। এতে কোটি টাকা মূল্যের এসব বাস মিনিবাস হিসেবেই চলাচল করছে। আর বিজনেস ক্লাস বা বণিজ্যিক পরিবহন হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নিতে হলে এসব পরিবহনকে ৩৬ আসনের পরিবহন হিসেবে দেখাতে হয়। বাণিজ্যিকভাবে এসব পরিবহনের রেজিস্ট্রেশন নিতে হলে ৩৬ আসন হিসেবেই রেজিস্ট্রেশন নিতে হয়। এতেও সমস্যায় পড়েন মালিকরা। সড়কে ট্রাফিক সার্জন পরিবহনের বস্নু বুকের সঙ্গে আসনের বাস্তবতার মিল না পেলে মামলায় জড়িয়ে দেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বাস মালিকরা। এ ধরনের বাস থেকে রাজস্ব আয় বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও মিনিবাস হিসেবে রেজিস্ট্রেশন দেয়ায় তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। মালিকরাও বলছেন, তারাও চান প্রকৃত রাজস্ব দিয়ে লাক্সারিয়াস গাড়ি হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সড়কের হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, 'স্ক্যানিয়া হাইডেক বাসের মতো কোটি টাকা মূল্যের বাসও রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে মিনিবাস হিসেবে। এসি বাস বলতে বিআরটিএর কোনো ক্যাটাগরিই নেই। বিলাসবহুল বাণিজ্যিক গাড়িও সাধারণ বাস হিসেবে রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। কোটি টাকা মূল্যের বাস কীভাবে মিনিবাস হিসেবে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে? আমি বিআরটিএকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। বিআরটিএ চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন এটি তাদের নিয়মের মধ্যে নেই।' তিনি আরও বলেন, 'বিআরটিএ একটি মিটিং ডেকে রেজুলেশন করে এই ক্যাটাগরিটি তাদের সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। চেয়ারম্যান আমাকে আশ্বস্ত করেছেন তারা এটি ঠিক করবেন।' এ ধরনের বাসের বিষয়ে বিআরটিএর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষ কিছুই করতে পারে না। ৩১ মে বিআরটিএর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গাবতলী বাস টার্মিনালে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় ম্যাজিস্ট্রেট জে আর পরিবহনে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সত্যতা পান। এ সময় টার্মিনালে বিআরটিএর কন্ট্রোল রুমে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তাকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, 'জরিমানা বা কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। কারণ এসি বাসের বিষয়ে বিআরটিএর কোনো আইন বা নীতিমালা নেই। মালিকরা যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই ভাড়া নির্ধারণ করবেন।' এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মাহবুব-ই-রাব্বানী বলেন, 'দামি বা বিলাসবহুল বাসগুলোর ক্ষেত্রে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বস্নু বুকে লাক্সারিয়াস লিখে দিলেই হয়। কিন্তু এখনো লেখা যাচ্ছে না। এ জন্য সফটওয়্যার চেঞ্জ করতে হবে। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখনো কিছু ফাইনাল হয়নি।' বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, 'এসি বা বিলাসবহুল গাড়ি বলতে আমাদের ক্যাটাগরিতে কিছুই নেই। বিআরটিএ নির্ধারিত আইন দিয়েই চলে। ভবিষ্যতে যদি এসব অন্তর্ভুক্ত হয় তখন দেখা যাবে।' বাংলা ট্রিবিউন