আহত-নিহতরা বেশিরভাগই তরুণ

প্রাণ কাড়ছে মোটরসাইকেলের বাড়তি গতি

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা - যাযাদি
যাযাদি ডেস্ক ছয় বোনের একমাত্র ভাই আরজু (২৫)। ঈদের ছুটি শেষে গত মঙ্গলবার কর্মস্থলে যোগ দেয়ার কথা ছিল এ তরুণ ব্যাংক কর্মকর্তার। সোমবার রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ায় মালবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় তার বোনের স্বামীসহ প্রাণ হারান আরজু। শুধু এই একটি ঘটনা নয়, প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অকাতরে ঝরছে তাজা প্রাণ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে শুধু গত একমাসে অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৪ জনের। এর বাইরেও প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। গত ১৯ আগস্ট রাতে পটিয়া পৌরসভার আমজুরহাট মোড় এলাকায় মালবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় পুকুরে পড়ে মোটরসাইকেলের আরোহী আরজু ও তার দুলাভাই নিহত হন। এ দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ২০ আগস্ট দুপুরে নগরের কদমতলী ফ্লাইওভারের প্রবেশপথে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবকের প্রাণ যায়। এ ঘটনায় আহত অপর মোটরসাইকেল আরোহী মৃতু্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চলতি মাসের শুরুতে (৪ আগস্ট) নগরের বারিক বিল্ডিং ও লালখান বাজার এলাকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী তরুণ নিহত হন। এর আগে গত ২৪ জুলাই নগরের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান দুই তরুণ। এভাবে প্রতিনিয়তই বাড়ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা। যানবাহন ব্যবস্থাপনা ও সড়ক দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় গাড়ি বা চার চাকার যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেশি। তারপরও বর্তমানে শহরগুলোতে যানজট বেড়ে যাওয়া ও তাৎক্ষণিক সুবিধার জন্য নগরবাসী বেছে নিচ্ছেন মোটরসাইকেল। গণপরিবহন আইন না মানা, চালকদের দক্ষতার অভাব এবং প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণেই মোটরসাইকেলে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। চট্টগ্রাম নগরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোস্তফা আল মামুন বলেন, খেয়াল করলে দেখবেন, সাম্প্রতিক সময়ে অধিকাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত-নিহতরাই তরুণ বয়সের। তাদের মধ্যে একটা বেপোরোয়া ভাব থেকেই যায়। বাইক দুর্ঘটনার অধিকাংশ ঘটছে দ্রম্নতগতি, ট্রাফিক আইন না মানা আর একের অধিক যাত্রী নেয়ার কারণে। এ ছাড়া বাইকারদের ওভারটেকিং করা একটা নেশায় পরিণত হয়েছে। সড়ক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, পরিবহন সংকট ও যানজটের শহর চট্টগ্রামে দ্রম্নত আর সহজ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। রাইড শেয়ারিং সেবাও এ ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। মোটরসাইকেল চালকরা সাধারণত অপেশাদার। তারা সড়কের আইন না জেনেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন। এ ছাড়া বর্তমানে তরুণ সমাজের মাঝে মোটরসাইকেলের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। একের অধিক আরোহী নিয়ে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর ফলেই দুর্ঘটনা ঘটছে। বিআরটিএ'র হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল আছে ২৫ লাখ ১৯ হাজার ২২৬টি। ২০১৭ সালে সারাদেশে তিন লাখ ২৬ হাজার ৫৫০টি মোটরসাইকেল নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে নিবন্ধন পায় তিন লাখ ৯৫ হাজার ৬০৩টি। আর গত ২৬ মাসে সারা দেশে মোটরসাইকেল নিবন্ধনের হার বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যানজট, বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, নৈরাজ্যসহ ব্যক্তিকেন্দ্রিক সুবিধার কারণে মোটরসাইকেল ব্যবহার বেড়েছে।