ড্রোনে আকাশ নিরাপত্তায় হুমকি

প্রকাশ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট দেশে ড্রোন ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এতে আইনশৃঙ্খলা ও আকাশ নিরাপত্তাকে হুমকি হিসেবে দেখছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা ধারণা করছে, এতে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশে ড্রোন আমদানি, ব্যবহার ও উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ড্রোন আমদানি, ব্যবহার ও উড্ডয়নে সুনিয়ন্ত্রিত অনুমোদনও দেয়া হবে। জানা গেছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা-২০১৯ খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা হয়েছে। সভায় ড্রোনের শ্রেণিবিভাগ ওজন অনুযায়ী করার সিদ্ধন্ত হয়। খসড়াটি ড্রোনের ওজন অনুযায়ী শ্রেণিবিভাজন করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় প্রাথমিকভাবে তৈরি খসড়াটি পুনঃলিখনের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে লিখিত মতামত দ্রম্নত দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিশেষ করে জননিরাপত্তা বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লিখিত মতামত গ্রহণ করে খসড়াটি পুনঃলিখনের বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক বলেছেন, সময়ের চাহিদা অনুযায়ী গবেষণা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা, বিনোদন ইত্যাদি কাজে ড্রোনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত নীতিমালা না থাকায় ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে মতামত দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সকলের মতামত ও সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলেনও তিনি জানান। বর্তমানে খসড়া নীতিমালায় ব্যবহার ভিত্তিতে ড্রোনকে চারভাগ করা হয়েছে। বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত ড্রোনকে ক-শ্রেণি, শিক্ষা ও গবেষণার মতো অ-বাণিজ্যিক কাজে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার ব্যবহৃত ড্রোনকে খ-শ্রেণি; সার্ভে, ছবি তোলা, চলচ্চিত্র নির্মাণ, উন্নয়েন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বাণিজ্যিক ও পেশাদার কাজে ব্যবহৃত ড্রোন গ-শ্রেণি এবং রাষ্ট্রীয় ও সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত ড্রোনকে ঘ-শ্রেণি হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে। খসড়ায় সরকারের আমদানি নীতিমালা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত পদ্ধতি মেনে ড্রোন আমদানি করতে হবে বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। ক-শ্রেণি বাদে অন্য যেকোনো শ্রেণির ড্রোন আমদানির আগেই ড্রোনের বিস্তারিত স্পেসিফিকেশন এবং যে কাজে ও স্থানে ব্যবহার করা হবে তা উলেস্নখ করে প্রতিটি ড্রোনের জন্য আলাদাভাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নিতে হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি ইসু্যর ৬ মাসের মধ্যে অনুমোদিত স্পেসিফিকেশন মোতাবেক ড্রোন আমদানি করা যাবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত স্পেসিফিকেশনের বাইরে কোনো ড্রোন আমদানি করা যাবে না। প্রাথমিক খসড়া নীতিমালার কপি বিশ্লেষণে দেখা যায়, খ ও গ শ্রেণির ড্রোন আমদানির ১২০ দিনের মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে আবেদন করে ড্রোনের নিবন্ধন বা পরিচিতি নম্বর নিতে হবে। ড্রোন আমদানিকারী ও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান একই হতে হবে। সরকারের উপযুক্ত বিভাগ ও সরকারি নিরাপত্তা সংস্থার চাহিদা ছাড়া নিবন্ধিত ড্রোনের কোনো তথ্য বেবিচক কাউকে সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে না। খ ও গ শ্রেণির ড্রোন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা যাবে। ক-শ্রেণি বাদে প্রতিটি ড্রোনের ক্ষেত্রে বীমা করতে হবে। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, বেসামরিক এলাকায় ড্রোন উড্ডয়নের জন্য বেবিচকের অনুমোদন নিতে হবে। বেবিচক অনুমোদনের কপি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সামরিক গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, বিমান গোয়েন্দা পরিদপ্তর, পুলিশ সদরদপ্তর ও বর্ডার গার্ড সদর দপ্তরে পাঠাবে। সম্ভাব্য কোনো জটিলতা এড়াতে অপারেটর ড্রোন উড্ডয়নের আগেই নিজ দায়িত্বে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ড্রোন উড্ডয়নের বিষয়টি জানাবেন। যেকোনো খোলা স্থানে যে কোনো শ্রেণির ড্রোন উড্ডয়নের আগে অপারেটর ও রিমোট পাইলট ওই এলাকার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভিভিআইপি মুভমেন্ট রয়েছে কি-না, এ বিষয়টি নিজ দায়িত্বে জেনে নেবেন। ভিভিআইপি মুভমেন্টের তারিখের ১ দিন আগে থেকে ভিভিআইপির মুভমেন্ট সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ড্রোন উড্ডয়ন বন্ধ থাকবে। ক-শ্রেণির ড্রোনের মোট ওজন হবে ১০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত। শুধু বিনোদন ও খেলনা হিসেবে এটি ব্যবহার করা যাবে। এ ধরনের ড্রোন উড্ডয়নের জন্য আগাম অনুমতির দরকার হবে না। তবে বিমানবন্দর কেপিআই বা সরকার নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, স্থাপনা ও সম্পত্তির সীমানা থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে এ ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ থাকবে। সর্বোচ্চ ১২ মিটার বা ৪০ ফুট উচ্চতায় উড্ডয়ন করানো যাবে। ড্রোনের গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারের বেশি হবে না। ড্রোনের রিমোট পাইলটের বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ রিমোট পাইলটের তত্ত্বাবধান ছাড়া ড্রোন পরিচালনা করলে তাতে কোনো দুর্ঘটনা বা ক্ষয়ক্ষতি হলে উড্ডয়নকারীর পিতা-মাতা দায়ী হবেন।