চট্টগ্রামের শুঁটকির কদর সারা দেশে

প্রকাশ | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মাচায় শুঁটকি শুকাচ্ছেন এক নারী
যাযাদি ডেস্ক খদিজা বেগম, বয়স ৩৫ ছুঁই ছুঁই। কড়া রোদে পুড়ে কালচে তামাটে বর্ণ ধারণ করেছে চেহারা। শুধু খদিজা নন- সালেহা, মরিয়ম বিবি ও তাদের পরিবারের ছোট-বড় সদস্যও কাজ করছেন রোদে পুড়ে। তারা সবাই মাছকে শুঁটকিতে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত। কর্ণফুলী নদীর উত্তর প্রান্তে বাকলিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় গড়ে ওঠা শুঁটকিপলস্নীতে কাজ করছেন কয়েকশ শ্রমিক, যাদের অধিকাংশের বাড়ি বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায়। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ প্রক্রিয়াজাত করে শুকানোয় ব্যস্ত থাকতে হয় এসব শ্রমজীবীকে। তবে হাড়ভাঙা শ্রম দিয়েও মিলে না ন্যায্য পারিশ্রমিক। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, দিন শেষে মজুরি মেলে ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা। নারীসহ প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন শুঁটকি তৈরিতে। ৫ বছর ধরে শুঁটকি তৈরির কাজ করছেন খদিজা বেগম। তার স্বামী অটোরিকশা চালান। দুই ছেলে-মেয়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। স্বামীর আয়ে সংসার ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিন কাজ করলে দুইশ টাকা পান। এতে পরিবারে কিছুটা সচ্ছলতা এসেছে তার। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ে ভিটেহারা সাগর উপকূলের দরিদ্র মানুষগুলো বাকলিয়ায় কর্ণফুলী সেতুর উত্তরপ্রান্তে নদীর তীরঘেঁষে গড়ে তুলেছে এই শুঁটকিপলস্নী। কয়েকজন শুঁটকি ব্যবসায়ী নিজেরাই মাচাঙ বানিয়ে কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি শুরু করেন। তাদের দেখাদেখি অনেকে মাচাঙয়ে শুঁটকি তৈরি করে। বর্তমানে এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে শতাধিক টন শুঁটকি নগরসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে সরবরাহ করা হয়। নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এখানে শুঁটকি তৈরিতে তুলনামূলক খরচ কম পড়ে। নদী ও সাগর থেকে মাছ সরাসরি এখানে নিয়ে আসা হয়। বাকলিয়া ছাড়াও পশ্চিম পটিয়ার কর্ণফুলীর তীরঘেঁষে ইছানগর, ডাঙারচর, জুলধা ও কর্ণফুলী মিলে মোট ৯টি স্থানে গড়ে উঠেছে শুঁটকিপলস্নী। প্রতি মৌসুমে অন্তত কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি সরবরাহ করা হয় কর্ণফুলীর তীর থেকে। তবে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় এসব এলাকা। কাদামাটির ওপর গড়ে ওঠা পলিস্নতে অনেকটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই উৎপাদিত হচ্ছে শুঁটকি। শুঁটকিপলস্নীতে রোদের তাপে মাছ শুকানো হয়। তবে এখানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শুঁটকি তৈরিতে ডাইক্লোরো ডাইফিনাইল ট্রাই ক্লোরাইথেন (ডিডিটি) নামক পাউডার ব্যবহার করে। এই পাউডার ব্যবহারের ফলে মাছে সহজে পচন ধরে না, পোকামাকড় বা ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে না এবং শুঁটকি দীর্ঘদিন ভাল থাকে। এর কম মূল্য এবং সহজলভ্যতা শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কাছে একে অধিক জনপ্রিয় করে তুলেছে। এছাড়া সবিক্রন ৪২৫ নামে আরেকটি রাসায়নিকও শুঁটকিতে স্প্রে করা হয়। জেলেদের মতে, এই ওষুধ মাছে দিলে তাতে ব্যাকটেরিয়া হয় না, শুঁটকি হয় চকচকে ও দীর্ঘস্থায়ী। জানা গেছে, এ ওষুধ একপ্রকার কীটনাশক, যা ফসল বা গাছের পোকামাকড় দমন করতে ব্যবহৃত হয়। যা মানুষের শরীরে প্রবেশে হতে পারে জটিল রোগ। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরের মাছের বড় আড়ত ফিশারিঘাট ও বোট মালিক-মাঝিদের থেকে কাঁচা মাছ কিনে শুঁটকি বানানো হয়। সাগরের মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে এখানকার শুঁটকি উৎপাদন। সাগরে মাছ কম পাওয়া গেলে শুঁটকির পরিমাণও কমে আসে। নদীর তীরবর্তী জায়গাগুলো সরকারি খাসজমি হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদসু্যরা জায়গা দখল করে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকারীদের কাছে বার্ষিক জায়গার পরিসীমা ভেদে ২০-৩০ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়।