মহাসড়কে টোল আদায় হবে গণবিরোধী: বিএনপি

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুক্রবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী -যাযাদি
যাযাদি রিপোর্ট মহাসড়কে টোল আদায়ের সিদ্ধান্তকে 'গণবিরোধী' আখ্যায়িত করে এর বিরোধিতা করেছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, 'আমরা মনে করি, জনগণের পকেট কাটতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এই ধরনের গণবিরোধী কর্মকান্ড থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।' মঙ্গলবার একনেক সভার পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোকে টোলের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। টোল থেকে আদায়কৃত অর্থ একটা অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে হবে। পরবর্তীতে ওই অর্থ দিয়ে সংশ্লিষ্ট মহাসড়কগুলোর মেনটেইনেন্স ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।' এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিএনপির প্রেস ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, 'সারা দেশে অধিকাংশ রাস্তা খানাখন্দে ভরা, বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে মহাসড়কগুলোতে। এসবের কারণে প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে, সড়কে মৃতু্যর মিছিল থামছে না। এছাড়া সকল সড়কে যানজট লেগেই আছে। এর মধ্যে টোলঘর বসালে প্রতিবন্ধকতা আরও বাড়বে।' সেইসঙ্গে জনগণের খরচ বাড়বে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'টোলের খড়্‌গ নেমে আসবে জনগণের কাঁধে, টোলের অতিরিক্ত সকল খরচের মাশুল দিতে হবে জনগণকেই। টোল ব্যবস্থা চালু হলে মহাসড়কে যানজটের তীব্রতা বাড়বে এবং নষ্ট হবে যাত্রীদের সময়।' সরকারের করনীতির সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, 'মুখে টাইটানিক মার্কা উন্নয়নের বুলি কপচালেও মূলত লুটপাটের নীতিতে তারা জনগণকে ট্যাক্সের মধ্যে বন্দি করে ফেলেছে। আপনারা দেখেছেন সিটি ও পৌর কর কীভাবে বাড়ানো হয়েছে। বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়িয়েছে বহুগুণ। গ্যাস-বিদু্যৎ-পানির বিল কয়েক বছরে বাড়িয়েছে ১০ গুণ। 'শুধু তাই নয়, মানুষ মোবাইলে কথা বললে সেখান থেকেও টাকা কেটে নিচ্ছে সরকার। সত্যিকার অর্থে সরকার দেশকে ফোকলা করে ফেলেছে।' রুহুল কবির রিজভী বলেন, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যা ও নির্যাতন 'আরও বেড়ে গেছে', সেই সঙ্গে বেড়েছে বিএসএফের 'নৃশংসতার ধরন'। 'বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় আটক বাংলাদেশিদের প্রতি ভয়ঙ্কর নৃশংস আচরণ করছে বিএসএফ, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আটক বাংলাদেশিদের বিষয়ে আইন প্রয়োগের সুযোগ থাকলেও তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, ?সুযোগ পেলেই দেশের নিরহ মানুষদের ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে।' কোনো একটি মানবাধিকার সংস্থা পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে রিজভী বলেন, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ১৮ জন বাংলাদেশি। 'গত তিন দিনে নিহত হয়েছে দুইজন। গতকালও চুয়াডাঙ্গার নিমতলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। তার লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ।' সীমান্তে হত্যা না থামায় সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, 'বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি হত্যা বাড়লেও নীরবতা পালন করে আসছে সরকার। সীমান্ত হত্যার ঘটনায় রাষ্ট্র একেবারে চুপ করে বসে আছে কিংবা কোনো কোনো সময়ে প্রতিবাদের পরিবর্তে বিএসএফের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। 'দুনিয়ার কোনো দেশের সীমান্তে এত হত্যা ও রক্তপাতের একতরফা ঘটনা ঘটে নাই। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ হলে এসব ঘটনা কমতে পারত। কিন্তু সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে সীমান্ত নিরাপদ হচ্ছে না। আমরা সরকারের এহেন নীতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।' নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বিলকিস জাহান শিরিন, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মাহবুবুল হক নান্নু উপস্থিত ছিলেন।