শিপ ইয়ার্ড মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি শ্রমিকদের

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক সফর আলী -যাযাদি
যাযাদি ডেস্ক দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের মৃতু্য ঘটনায় জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে 'জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম' নামের একটি সংগঠন। 'শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় অব্যাহতভাবে শ্রমিক নিহত ও আহত হওয়ার প্রতিবাদে' বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক সফর আলী বলেন, প্রতিটি ঘটনায় শিপ ইয়ার্ডে নিহত ও আহত শ্রমিকদের সংখ্যা এবং আহতদের অবস্থা নিয়ে লুকোচুরি খেলা চলে। বছরের পর বছর ধরে জাহাজভাঙা শিল্প খাতে দুর্ঘটনা এবং শ্রমিকের মৃতু্যর হার ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেলেও দায়ী মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না। 'এ যাবত কোনো মালিকের বিরুদ্ধে মামলা বা হুলিয়া হয়েছে এমনটা আমাদের জানা নেই। অস্থায়ী ভিত্তিতে ঠিকাদারের অধীনে কাজ করে বিধায় শ্রমিকরা আহত বা নিহত হলে অনেক ইয়ার্ড মালিক শ্রমিকদের দায়ও নেয় না।' সফর আলী বলেন, 'শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মস্থলে নিহত শ্রমিকদের দুই লাখ টাকা এবং এর সঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত ক্রাইসিস কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরও পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও তা সব নিহত শ্রমিকের পরিবার পাচ্ছে কিনা তার কোনো তদারকি নেই। এই শিল্প বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে পরিচালিত হলেও এই খাতের শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেয়া হয় না। শ্রম আইনে মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ কার্যকর বাধ্যতামূলক হলেও মালিকরা তা মানছেন না।' তিনি বলেন, জাহাজভাঙা শিল্পে কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এর ওপর ঠিকাদারদের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। শ্রমিকদের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কোনো ধারণাই তাদের নেই। তাই ঝুঁকি নিরসনে কোনো ব্যবস্থা তারা নেয় না। শ্রমিকদের আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামও সরবরাহ করা হয় না। রাতে শিপ ইয়ার্ডে কাজ না করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও মালিকরা তা মানছে না বলেও অভিযোগ করেন সফর আলী। সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক এ এম নাজিম উদ্দিন বলেন, ২০১৬-২০১৮ পর্যন্ত তিন বছরে মোট ৫০ জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। 'চলতি বছর আট মাসে ১৬ জন শ্রমিক নিহত হন এবং ৩০ জনের বেশি মারাত্মকভাবে আহত হন। এ বছর আগুনে দগ্ধ ও গ্যাস বিস্ফোরিত হয়ে ৯ জন এবং পেস্নট চাপা পড়ে পাঁচজন মারা যান, যার দায় মালিকপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।' ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত বলেন, ২০০৯ সালের হংকং কনভেনশন অনুসারে প্রতিটি পুরনো জাহাজ বর্জ্যমুক্ত করে রিসাইক্লিং করতে হবে। কিন্তু অতি মুনাফার লোভে জাহাজ বিক্রেতা বা ক্রেতা কেউ তা আমলে নিচ্ছে না। 'ফলে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেষ্টিত পরিবেশে শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি ও জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে। হতদরিদ্র জাহাজভাঙা শ্রমিকদের কাছে কোনো বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা এই পেশা বেছে নেয়। বছরের পর বছর এই সুযোগটাই নিচ্ছে মালিকপক্ষ।' সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আছে চলতি বছর সংঘটিত সব দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন এবং দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেয়া, শ্রমিকদের তথ্য সংরক্ষণ, কাটার আগে জাহাজ পূর্ণাঙ্গভাবে বর্জ্যমুক্ত করা, শ্রম আইন-বিধিমালা ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন মেনে ইয়ার্ড পরিচালনা, ইয়ার্ডে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা, মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ অনুসারে নূ্যনতম ১৬ হাজার টাকা মাসিক মজুরি নিশ্চিত করা এবং ইয়ার্ডগুলো নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি। এসব দাবি বাস্তবায়নে আগামী সাতদিনের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।