সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল

মহামারি থেকেও বেশি মানুষ নিহত হয় সড়ক দুর্ঘটনায়

সুলতানা কামাল বলেন 'কাজের জন্য প্রতিদিনই আমাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। এখন গাড়িতে উঠে আমরা বসার জায়গা পাব কিনা সেটা নিয়ে ভাবি না, ভাবি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব কিনা!'

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মানিক মিয়া হলে শুক্রবার যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। পাশে সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল ও সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী -যাযাদি
যাযাদি রিপোর্ট মহামারি থেকেও সড়ক দুর্ঘটনায় বেশি মানুষ নিহত হয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মানিক মিয়া হলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, 'বর্তমানে আমাদের সমাজে একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাস্তা ভালো না, ট্রাফিক পুলিশ ঘুষ খায়, আরও অনেক সমস্যার কথা বলতে শুনি। কিন্তু কথা হচ্ছে এগুলোর কারণে যাত্রীরা কেন ভোগান্তির শিকার হবে?' তিনি বলেন, 'কাজের জন্য প্রতিদিনই আমাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। এখন গাড়িতে উঠে আমরা বসার জায়গা পাব কিনা সেটা নিয়ে ভাবি না, ভাবি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব কিনা! মেয়েরা ভাবে সম্মান নিয়ে, ধর্ষিত না হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব তো!' সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা কেউ-ই যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের দায়িত্বটা পালন করছি না। দায়িত্ব ও দোষ সব সময় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেই। দুর্ঘটনার কারণ কী তা বের করার চেষ্টা করি না। যারা দায়িত্বশীল জায়গায় রয়েছে, তারা দায়িত্ব এড়িয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। এসব সম্ভব হচ্ছে সুশাসনের অভাবের কারণে।' তিনি আরও বলেন, সড়কের সঙ্গে জড়িত সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এটা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের প্রশ্ন। এটা মানুষের সুস্থ থাকার প্রশ্ন, মানবিক মর্যাদার প্রশ্ন। সুলতানা কামাল বলেন, 'আমাদের অর্থনীতি হংকং-সিঙ্গাপুরকেও ছাড়িয়ে গেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটা আমার জন্য অনেক গর্বের বিষয়। আমরা যখন এই দেশকে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা করি, তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। এখন কিন্তু সরকারি দলের লোকেরাই হংকং-সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তুলনা করছেন।' 'আমি পেশাগত কারণে এক বছর হংকংয়ে বসবাস করেছি। হংকং একটা ছোট্ট দ্বীপময় রাষ্ট্র। আমি যে দ্বীপে বাস করতাম, সেখানে যাওয়া-আসার জন্য সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে একেবারে খাড়া রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হতো। কিন্তু এই এক বছরে একদিনের জন্যও সেখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। কারণ সেখানে কোনো আনফিট গাড়ি চলে না। সেখানকার চালকেরা প্রশিক্ষিত ও দায়িত্ববান। হংকংয়ের চালকদের যে মানুষরা চালান, তারাও দায়িত্বশীল। পাশাপাশি সরকারই সেখানকার মালিকদের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।' বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও অংশ নেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা ও নাগরিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। সংবাদ সম্মেলন থেকে যাত্রী সাধারণের হয়রানি বন্ধে প্রতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বরকে 'যাত্রী অধিকার দিবস' হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেয়া হয়।