আলাদা লেন করার চিন্তা

রাজধানীতে নামছে ৩৯১টি আটির্কুলেটেড বাস

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮, ১০:৪৫

যাযাদি রিপোটর্
রাজধানীর একটি সড়কে চলছে আটির্কুলেটেড বাস Ñফাইল ছবি
রাজধানীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা এবং নেটওয়াকর্ পুনগর্ঠনের লক্ষ্যে ৩৯১টি আটির্কুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) বাস কিনতে যাচ্ছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কতৃর্পক্ষ (ডিটিসিএ)। ঢাকায় আলাদা ডেডিকেটেড লেনে চলবে বাসগুলো। এয়ারপোটর্-প্রগতি সরণি হয়ে সায়েদাবাদ এবং কুড়িল-রাজউকের পূবার্চল মডেল টাউনের দুই নম্বর সেক্টর পযর্ন্ত বাসগুলো চলবে। বৃহৎ আকৃতির বাসগুলো চলাচলের সুবিধার জন্য এই রুটে থাকবে আলাদা লেন। দুটি কোচ জোড়া দিয়ে বানানো এই বাসের দৈঘর্্য হবে ২২ মিটার, যাত্রী ধারণক্ষমতাও দ্বিগুণ। প্রায় ১৫০ যাত্রী একটি বাসে ভ্রমণ করতে পারবেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেন্ডিবাস, ট্যান্ডেমবাস, ব্যানানবাস, ক্যাটারপিলারবাস বা অ্যাকডির্য়নবাস নামে পরিচিত আটির্কুলেটেড বাস। ডিটিসিএ সূত্র জানায়, স্মাটর্ কাডর্ ও ইলেকট্রনিকভাবে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাসে। ডেডিকেটেড রুটজুড়ে থাকবে ৮০টি স্টপেজ। বাসগুলো কয়েকটি নিদির্ষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই রুটে তিন মিনিট পরপর মিলবে আটির্কুলেটেড বাস। ‘ডেভেলপমেন্ট অব কোর পাইলট বাস নেটওয়াকর্ করিডোরস ইন ঢাকা সিটি’ প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে ডিটিসিএ। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। ৩৯১টি বাস কেনা, ইলেকট্রনিক ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং পৃথক করিডোর উন্নয়ন বাবদ এই ব্যয় নিধার্রণ করা হয়েছে। অথৈর্নতিক সম্পকর্ বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে প্রকল্পের আওতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক ও ফ্রান্স উন্নয়ন সংস্থার (এএফডি) কাছে ঋণ চাওয়া হয়েছে। ডিটিসিএ’র পরিবহন প্রকৌশলী (উপসচিব) নাসির উদ্দিন তরফদার বলেন, ‘নগরবাসীকে আধুনিক বাসসাভির্স সুবিধা দিতেই ৩৯১টি আটির্কুলেটেড বাস কেনা হবে। বাসগুলোর জন্য থাকবে ডেডিকেটেড রুট। এই রুটে অন্য বাস চলবে না। প্রতি তিন মিনিট পরপর যাত্রী বাসসাভির্স পাবেন। কয়েকটি কোম্পানির বাইরে বাসগুলো চলবে না। বাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২৫-২৬ কিলোমিটার। বাসে আরামদায়ক এসি সেবা পাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান সড়ক এই বাসের জন্য উপযুক্ত নয়। যে কারণে আলাদা লেন করা হচ্ছে। ফলে বাসগুলোর সেবা বেশি দিন ভোগ করতে পারবেন নগরবাসী। সব ধরনেরর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে।’ জুন ২০১৮ থেকে জুন ২০২০ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে ডিটিসিএ। নানা কারণে প্রকল্পটি নেয়া হচ্ছে। অগ্রাধিকার বাসসাভির্স ডিজাইন, টামির্নালসমূহের উন্নয়ন করাও প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। রোববার প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জানা গেছে, বাংলাদেশের সড়কে আটির্কুলেটেড বাস চলার জন্য উপযুক্ত নয়। এর আগে ২০১২ সালে ৫০টি আটির্কুলেটেড বাস ক্রয় করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। তবে বৃহৎ আকৃতির কারণে এগুলো পরিচালনায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সংস্থাটি। ট্রিপ কম হওয়ায় এসব বাস থেকে আয়ও হচ্ছে অনেক কম। অথচ রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রচুর অথর্। বেশ কয়েকটি বাস এরই মধ্যে বিকলও হয়ে পড়েছে। যে কারণে ডিটিসিএ-এর প্রস্তাব গুরুত্বসহকারে পযের্বক্ষণ করছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের এক ঊধর্তন কমর্কতার্ বলেন, ‘রোববার প্রকল্পটি নিয়ে সভা করেছেন। এর আগে ৫০টি আটির্কুলেটেড বাস ক্রয় করা হয়। কিন্তু এটা লোকসানি প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। ৩৯১টি বাস কিনে যাতে করে একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই জন্য প্রকল্পটি মূল্যায়নে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। তারা সাবির্ক বিষয় দেখেই প্রকল্পটি অনুমোদন দেবেন।’ পরিবহন সমস্যা নগরবাসীর দৈনন্দিন সমস্যা। রাজধানী থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে যাত্রীবাহী বাস। কিন্তু যাত্রীর তুলনায় এসব পরিবহনের সংখ্যা কম হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। প্রতিদিনই চোখে পড়ে যাত্রীদের দীঘর্ সারি। পরিবহন স্বল্পতার কারণে বাসে গাদাগাদি করে দঁাড়িয়ে যাতায়াত করতে দেখা যায় যাত্রীদের। একই সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে ঝুলে যান অনেকে। এতে করে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়তে হয় নারীদের। তারা যাতে করে ঝুঁকিমুক্তভাবে নগরীতে যাতায়াত করতে পারেন এবং যাত্রী ভোগান্তি না হয় এ জন্য ১০০ আটির্কুলেটেড বাস ক্রয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি)। তবে ডেডিকেটেড রুটের অভাবে ২০১৭ সালে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল বিআরটিসি। এখন প্রকল্পের আওতায় আটির্কুলেটেড বাস সংগ্রহসহ ডেডিকেটেড রুটও নিমার্ণ করা হচ্ছে।