চট্টগ্রামে সাইক্লিংয়ে ঝুঁকছে তরুণ-তরুণীরা

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চট্টগ্রাম নগরের একটি সড়কে বাইসাইকেল চালাচ্ছেন কয়েকজন তরুণ-তরুণী -যাযাদি
যাযাদি ডেস্ক বাইসাইকেল-দ্বিচক্রযান-বাইক। অনেক নামেই পরিচিতি। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি পরিচিত সাইকেল নামে। বহির্বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। উদ্যমি, তরুণ কিছু যুবক মিলে চট্টগ্রাম নগরে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন সাইক্লিং গ্রম্নপ ও সংগঠন। উঠতি বয়সিদের মধ্যে সাইকেল নিয়ে বাড়তি আগ্রহ লক্ষ করা যায়। বর্তমান সময়ে বাইসাইকেল গুরুত্বপূর্ণ একটি বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন শিশু খুব কমই পাওয়া যাবে, যাদের শৈশব সাইকেলের সঙ্গে কাটেনি। এ ছাড়া যানজটের নগরে সময় বাঁচাতে অনেক কর্মজীবী সাইকেলের ওপর নির্ভরশীল। সাইক্লিং শুধু চমৎকার শরীরচর্চাই নয়, ক্যানসারসহ নানা ধরনের রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রধান বাইসাইকেল প্রস্তুতকারক। দেশের অনেক কোম্পানির পণ্যের গুণগত মান বিশ্বমানের। এসব কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মডেলের বাইসাইকেল আমদানি ও রপ্তানি করছে। বন্দরনগর চট্টগ্রামে উঠতি বয়সিদের মধ্যে সাইক্লিংয়ের প্রতি রয়েছে প্রচন্ড ঝোঁক। তাদের চাহিদা মেটাচ্ছে সাইকেল বাজার। নগরের সাইকেল বাজার নিউমার্কেটের বিপরীতে সদরঘাট রোডে। এখানে রয়েছে ছোট-বড় অনেক দোকান। এসব দোকান থেকে সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে চাহিদামতো কিনে নেওয়া যায় সব বয়সিদের সাইকেল। ব্রান্ডের সাইকেলও পাওয়া যাবে প্রায় সব দোকানেই। সদরঘাটের এই সাইকেল বাজারের সাইকেল ওয়ার্ল্ড, বাঁশরী সাইকেল গার্ডেন, সানমুন, গোস্ট রাইডার, আর কে সাইকেল মার্ট, সাইকেল সেন্টার, বাইক জোন, দি এক্সক্লুসিভ সাইকেল ডট কম, সাইকেল লাইফ, মোস্তফা সাইকেল, বাইক জোন ও লিজেন্ড বাইকস অন্যতম। সাইকেল ওয়ার্ল্ডের পরিচালক মো. নাদিম উলস্নাহ জানান, বয়সভেদে সাইকেল বিক্রি হয়। ৩ বছরের শিশুদের জন্য ১২ইঞ্চি, ১৬ইঞ্চি, ২০ইঞ্চি বেবি সাইকেল মিলছে তুলনামূলক কম দামে। ১২ইঞ্চি সাইকেল ৩৭০০-৪৫০০ টাকা, ১৬ইঞ্চি ৪০০০-৫৫০০ টাকা, ২০ইঞ্চি ৪৫০০-১১০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। \হআর বড়দের সাইকেল আছে ৫ হাজার থেকে লাখ টাকার। কোর বেলেজ, হিরো, ফনিক্স, স্টার, ফক্স স্টার সাইকেলের চাহিদাই বেশি। আর বেশি দামের যেসব সাইকেল আছে, সেগুলোর অর্ডার পেলে ঢাকা থেকে এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় বলে জানান তিনি। বর্তমানে সাইক্লিংয়ে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের আগ্রহও বাড়ছে। নগরের পরিচিত রাইডার ঝুম চাকমা বলেন, সাইক্লিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে চাই। বিশেষ করে 'সবুজ বাঁচাও, পরিবেশ বাঁচাও' দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে আমাদের গ্রম্নপের সদস্যরা কাজ করছে। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে তানজিন আহমেদ, ইসরাত জাহান ত্রিশা, শাফায়াত মাহীরাদ ও জয়ন্ত কর বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী, উদ্ভিদ, পৃথিবীর মাটি, বাতাস, পানি- এসবকিছুই একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। খুব দ্রম্নত আমরা যদি আমাদের পরিবেশকে বাঁচিয়ে তোলার লক্ষ্যে সচেতন না হই, আগামী প্রজন্মের পৃথিবী হবে অন্ধকার। বাংলাদেশ সাইকেল ও পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সলিম উলস্নাহ বাচ্চু বলেন, চট্টগ্রামের সদরঘাট সাইকেল বাজারে সব বয়সিদের জন্য দেশি-বিদেশি সব রকম সাইকেল ও পার্টস আমদানি-রপ্তানি করা হয়। এখান থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাইসাইকেলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। আর এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে কোম্পানিগুলোও বিভিন্ন মডেলের এবং কোয়ালিটির বাইসাইকেল আমদানি করছে। গস্নাসগো ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষায় জানা গেছে- হাঁটু, গিঁটের ব্যথা নিরাময়ে সহজ ব্যায়াম সাইক্লিং, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, পা, ঊরু, কোমর ও নিতম্বের পেশি সুগঠিত করা, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো, হার্ট ও ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য সাইক্লিংয়ের বিকল্প নেই। সাইক্লিংয়ের ফলে শারীরিক পরিশ্রম হয়, ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কাও কমে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। খোলা আকাশের নিচে, গাছে ঘেরা রাস্তায় সাইকেল চালালে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এতে করে মাথা থেকে দুশ্চিন্তাগুলো বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে যায়। সকালের দিকে দূষণ ও গাড়ির চাপ কম থাকে। তাই সকালে সাইক্লিং করা, সকালে না পারলে সারাদিনে কিছুটা সময় বের করে সাইকেল চালানোর পরামর্শ দিচ্ছেন শরীরচর্চাবিদরা।