কোমলমতিদের ওপর নিমর্ম আগ্রাসন: রিজভী

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন Ñযাযাদি
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের পর এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে ‘চিরুনি অভিযান’ শুরু করেছে, তাকে ‘সরকারের নিমর্ম আগ্রাসন’ হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ছাত্রলীগের পাÐাদের দিয়ে শিশু-কিশোরদের রক্ত নিঙড়ে নেয়ার পরেও ক্ষান্ত হয়নি সরকার। এখন চলছে র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে ববর্র ক্র্যাক ডাউন। গতকাল বসুন্ধরাসহ রাজধানীতে সরকারি বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য চিরুনি অভিযান চালিয়েছে।’ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষাথীের্দর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে গত সোমবার বসুন্ধরা এলাকার কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীর্রা সড়কে বিক্ষোভে নামলে পুলিশের সঙ্গে সংঘষর্ বাধে। এর দুদিন পর বুধবার রাতে বসুন্ধরা ও কালাচঁাদপুর এলাকা ঘেরাও করে তিন ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রিজভী বলেন, এই অভিযান সরাসরি কোমলমতি শিক্ষাথীের্দর ওপর এক নিমর্ম আগ্রাসন। আমরা অবিলম্বে শিশু-কিশোর শিক্ষাথীের্দর ওপর এই নিমর্ম হয়রানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। সোমবারের সংঘষের্র ঘটনায় বাড্ডা ও ভাটারা থানার দুই মামলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৭৫ জনকে আটক করে পুলিশ, পরে তাদের মধ্যে ২২ জনকে পাঠানো হয় রিমান্ডে। সে প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, নিরপরাধ শিক্ষাথীের্দর আটক করে কোমরে দড়ি বেঁধে রিমান্ডে নিয়ে পৈশাচিক নিযার্তন করা হচ্ছে। শিক্ষাথীের্দর ওপর পুলিশের এমন আচরণে এবং মামলার কারণে অভিভাবকদের আতঙ্ক ও উদ্বেগে থাকার কথাও রিজভী বলেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র, গণতন্ত্র, সামাজিক অগ্রগতি ও সভ্যতার শত্রæ বতর্মান আওয়ামী লীগ সরকার। এরা মানসিক বৈকল্যগ্রস্ত। ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা শিশু-কিশোরদের রক্ত ঝরাতেও দ্বিধা করছে না। সরকার এখন ক্রোধের খেলায় মেতে উঠেছে। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, শিক্ষাথীের্দর এই জাগরণ ‘দুঃশাসনের বিরুদ্ধ’। দমন-পীড়নে শিশু-কিশোরদের এই জাগরণ বন্ধ করা যাবে না। যতই ষড়যন্ত্র ও তৎপরতার কথা বলুক না কেন আওয়ামী নেতারা, দুঃশাসনের বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। দৃক গ্যালারির কণর্ধার আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে রিমান্ডে নেয়ার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, নিযাির্তত শহিদুল আলমকে চিকিৎসার দিতে নিদের্শ দিয়েছে উচ্চ আদালত। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ সরকারের হুকুমে তাকে ভতির্ নেয়নি। ওই হাসপাতালে সরকারের নিদের্শ ছাড়া কোনো চিকিৎসা হয় না। ভিন্ন মতাবলম্বীদের সেখানে সুচিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলনের মধ্যে সংঘষের্ আহত শিক্ষাথীর্ ও সংবাদকমীের্দর দেখতে হাসপাতালে না যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সমালোচনা করেন রিজভী । তিনি বলেন, অশুভ সরকার স্বমূতিের্ত আত্মপ্রকাশ করেছিল যখন হেলমেট পরিহিত আওয়ামী ক্যাডাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে কচি শিশু-কিশোরদের ওপর। তাদের রক্ত দেখে আনন্দিত হলো সরকার। সেজন্য আমরা দেখলাম যে ছাত্রলীগের আক্রমণকারীদের দেখতে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আক্রান্ত শিশু-কিশোর ও সাংবাদিকদের দেখতে যাননি তিনি। শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সংঘাতময় পরিস্থিতির পর বুধবার বিকালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযের্দর সঙ্গে জরুরি মতবিনিময়ে বসেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সেখানে কয়েকজন উপাচাযর্ আন্দোলনে যুক্ত সব শিক্ষাথীর্র জন্য ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণার আহŸান জানালেও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাতে ‘না’ বলে দেন। এই অবস্থানের জন্য নাহিদের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ক্ষমতার পিপাসা কত তীব্র হলে শিক্ষামন্ত্রী নিরপরাধ মাসুম শিক্ষাথীের্দর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন। এতেই প্রমাণিত হয়, মন্ত্রীদের একমাত্র আরাধ্য হচ্ছে ক্ষমতা। ফেনী সদর উপজেলার শশির্দ ইউনিয়নের যুবদল নেতা মো. রিপন নিহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন রিজভী। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, রফিক শিকদার ও শাহজাহান সম্রাট উপস্থিত ছিলেন।