ঢাবির গণরুম সমস্যা

আশ্বাসে ভিসির বাসার সামনে থেকে সরলেন শিক্ষার্থীরা

ঢাবি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ বছর যারা নতুন ভর্তি হবে তারা হল প্রশাসনের মাধ্যমেই হলে উঠবে এবং প্রশাসনিকভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে

প্রকাশ | ৩০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গণরুম সমস্যার সমাধান না পেয়ে মঙ্গলবার ঢাবি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন একদল শীক্ষার্থী -যাযাদি

চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের হাত ধরেই হলে উঠতে পারবেন এবং গণরুমে থাকতে হবে না- প্রশাসনের এমন আশ্বাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে সরে গেছেন 'গণরুমের নেতা' খ্যাত ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। গণরুম সমস্যার সমাধান না পেয়ে মঙ্গলবার একদল শিক্ষার্থীকে সঙ্গী করে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন সৈকত। 'প্রথম বর্ষে বৈধ সিটের অধিকার চাই', 'হলের সংখ্যা বৃদ্ধি কর, অতঃপর ছাত্র ভর্তি কর', থাকার জন্য জায়গা চাই, গণরুমে ঠাঁই নাই', 'আমরা এখন চুপসে গেছি, জ্ঞানশূন্য কালোমাছি'- ইত্যাদি স্স্নোগান লেখা ফেস্টুন নিয়ে বাসভবনের সামনের রাস্তায় বসে থাকতে দেখা যায় তাদেরকে। এ অবস্থায় আন্দোলনকারীদের উপাচার্য তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। সেখানে দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বৈঠকে শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট সমাধানে আশ্বাস মেলায় অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান সৈকত। তিনি বলেন, "উপাচার্য স্যারের আমন্ত্রণে আমরা ছয়জন তার কার্যালয়ে যাই। সেখানে তিনি আমাদের বলেছেন যে, এ বছর যারা নতুন ভর্তি হবে তারা হল প্রশাসনের মাধ্যমেই হলে উঠবে এবং প্রশাসনিকভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমও চালাবে। তাই আমরা প্রশাসনের এই আশ্বাসে আমাদের আন্দোলন আপাতত স্থগিত ঘোষণা করেছি। তিনি বলেন, "তবে আমরা প্রশাসনের এই তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করব। প্রয়োজনে আবার আন্দোলনে নামা হবে।" এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সমস্যা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত একটি সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়।" তিনি বলেন, "সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে আমরা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং কাজ করে যাচ্ছি। তবে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করে এই সমস্যার সমাধান আসবে না।" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলে শিক্ষার্থী আছেন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। আবাসন সঙ্কটের কারণে প্রতিটি হলেই সৃষ্টি হয়েছে 'গণরুমের', যেখানে মেঝেতে টানা বিছানা পেতে প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। কারা এসব কক্ষে থাকবে তার নিয়ন্ত্রণ থাকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হাতে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন হলে থেকে চাকরি খোঁজেন। ফলে কাগজে-কলমে তাদের সিট না থাকলেও বাস্তবে আসন খালি হয় না। গণরুম সঙ্কটের সমাধানের দাবিতে গত ১ সেপ্টেম্বর কবি জসীম উদ্‌দীন হলের ২০৮ নম্বর কক্ষের গণরুমে গিয়ে ওঠেন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। ১ অক্টোবর বিভিন্ন হলের গণরুমের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সমাবেশ থেকে তিনি ঘোষণা দেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার ব্যবস্থা না নিলে গণরুমের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি উপাচার্যের বাসায় গিয়ে উঠবেন। সেই সময়সীমার কথা মনে করিয়ে দিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডাকসু সদস্য সৈকত। সেদিন তিনি বলেন, "এই সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেওয়া ১৫ কার্যদিবসের সময়সীমা আগামী সোমবার শেষ হবে। আগামী মঙ্গলবার উপাচার্য মহোদয়ের সাথে সকালের নাস্তা করার মধ্য দিয়ে আমরা উপাচার্য ভবনে থাকা শুরু করব।" এদিকে গণরুমের দুর্দশা লাঘবের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গত ১০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। এর পরে কোনোভাবেই হলে থাকা চলবে না। পাশাপাশি আবাসন সঙ্কট মেটাতে হলে 'বাংক বেড' স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি করা হয় ওই সভায়। ছাত্রদের দুরবস্থা নিজের চোখে দেখতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান গত রোববার কবি জসীম উদ্‌দীন হল এবং মাস্টারদা সূর্যসেন হলের গণরুম হিসেবে পরিচিত কয়েকটি কক্ষ ঘুরে দেখেন। সেখানে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা সমাধানে পরিকল্পিত কর্মকৌশল গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া হলগুলো থেকে অছাত্রদের উৎখাতে হল প্রশাসনের পাশাপাশি হল সংসদগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।