চিনিকলগুলোর ব্যাংক ঋণ ৭ হাজার কোটি টাকা

বিএসএফআইসি চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল বলেন, 'ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করার ব্যবস্থা ও ট্রেডগ্যাপের কারণে ১২৭০ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিকট পাওনা। যেটা দিলে চিনিকলগুলোর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।'

প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট ক্রমাগত আর্থিক সংকটের কারণে চিনিকলগুলোর সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল। তিনি বলেন, ব্যাংকের ঋণ সুদে-আসলে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে চিনিকলগুলোর। বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৫ম বৈঠকে কার্যবিবরণী থেকে এতথ্য পাওয়া গেছে। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অজিত কুমার পাল আরো বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ করার ব্যবস্থা ও ট্রেডগ্যাপের কারণে ১২৭০ কোটি টাকা অর্থমন্ত্রণালয়ের নিকট পাওনা। যেটা দিলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। নিয়োগ বন্ধ থাকায় চিনিকলগুলো পদশূন্য হয়ে যাচ্ছে। কৃষককে সময়মতো আখের মূল্য পরিশোধ না করতে পারায় উৎপাদনে মনোযোগী হচ্ছেন না তারা। আর উৎপাদন করলেও গুড় উৎপাদনকারীদের কাছে বিক্রি করছেন। ফলে আখের স্বল্পতা, পুরনো মেশিনারিজ, অদক্ষ জনবলের জন্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে লোকসান হচ্ছে। এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, দেশের চিনির চাহিদা ১৬ লাখ টন। ১ লাখ ৪০ হাজার টন সুগার করপোরেশন উৎপাদন করে। অবশিষ্ট প্রাইভেট সেক্টর উৎপাদন করে। প্রাইভেট সেক্টরের কারণে সুগার করপোরেশনের মিলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, কুষ্টিয়া এবং ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের জায়গায় ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি বিদু্যৎপস্নান্ট করার প্রস্তাব ছিল। এখনো করা সম্ভব হলে চিনি শিল্পের আর ঋণ করার প্রয়োজন হবে না। ঋণ দিতে পারবে বলে তিনি মনে করেন। এই বিষয়টি ত্বরান্বিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। কমিটির সদস্য মো. সাহিদুজ্জামান বলেন, চিনিকলগুলো একত্রিত করে নতুনভাবে সাজানো দরকার। চিনিকলগুলো শ্রমিক-কর্মচারীরা তিন মাস কাজ করে বাকি ৯ মাস বসে কাটায়। তাদের সরকারের বোঝা হিসেবে টানতে হয়। কেরু এন্ড কোম্পানির মতো নতুন শিল্প সংযুক্ত করে সারা বছর যাতে চিনিকলগুলোর শ্রমিকরা কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করে কর্মকর্তারা বিদেশে গিয়ে যদি অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে না পারে তাহলে অর্থ অপচয় না করাই ভালো। রাষ্ট্রীয় শিল্পগুলোর সম্পদ রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানান তিনি। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার চিনি শিল্পে অসৎ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপসারণ করার কথা উলেস্নখ করে বলেন, বিনা কাজে ওভারটাইম দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ইউরোপ-আমেরিকায় অনেক ব্যবসায়ী শিল্পপতি লোন সহকারে বিনিয়োগ করতে চায়। সুগার মিলে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং ২ শতাংশ হারে ঋণ দিতে আগ্রহী। তারা মন্ত্রণালয়ের সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ার কারণে ফিরে যায়। এসব কাজে উৎসাহ ও সহযোগিতা করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। মাসের-পর-মাস ফাইল কর্মকর্তার টেবিলে থাকে। 'ইয়েস' 'নো' যাই হোক যথাসময়ে ফাইল ছেড়ে দিতে হবে। বেসরকারি সুগার মিলগুলো লাভ করতে পারলে সরকারি সুগার মিল লাভ করতে পারবে না কেন? সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে আনতে হবে। একই ব্যক্তির বারবার বিদেশ সফর করা বন্ধ করা দরকার। এজন্য সচিব থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যন্ত সকলের কাজ করতে হবে। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। কার্যক্রমের যেকোনো বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে বিধিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তাতে কর্মে সফলতা আসবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা চিহ্নিত হচ্ছে এখন সমাধানের প্রচেষ্টায় সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে। এদিকে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের কার্যক্রমের পরিধি আরও বাড়াতে এবং গতিশীল করতে সুপারিশ করে কমিটি। বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রেকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) থেকে উৎপাদিত পণ্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ব্যবহারের সুপারিশ করে কমিটি। কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এ কে এম ফজলুল হক, হাবিবুর রহমান মোলস্না এবং কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ অংশ নেন।