দেখার কেউ নেই

নীতিমালা নেই, এসি বাসে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায়

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর মতিঝিল-উত্তরা রুটে চলাচলকারী একটি এসি বাস -ফাইল ছবি
রাজধানীর গণপরিবহণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি সংবলিত বাসের ভাড়া নির্ধারণে সরকারের কোনো নীতিমালা নেই। আর এই সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে এসব বাসের মালিকপক্ষ। সেভাবে টাকা নিলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। আর দেখারও যেন কেউ নেই। বাস-সংশ্লিষ্ট কর্মী ও ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। সম্প্রতি আজিমপুর থেকে উত্তরা রুটে চলাচল শুরু করছে শতাব্দী পরিবহণের বেশ কয়েকটি এসি বাস। তবে আজিমপুর থেকে বনানী পর্যন্ত এর মাঝে যে কোনো জায়গায় নামলেই ভাড়া গুনতে হবে সর্বনিম্ন ৬০ টাকা। অর্থাৎ বাসে উঠে নামলেই ভাড়া পুরো ৬০ টাকাই দিতে হবে। বনানী পার হলেই ভাড়া ১০০ টাকা। যা প্রকৃত ভাড়া থেকে কয়েকগুণ বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে উত্তরাগামী যাত্রী শোয়েব আহমেদ বলেন, ১০০ টাকা ভাড়া তো অবশ্যই বেশি। চাকরি করি বিধায় আমাদের প্রতিদিন বাসে যাতায়াত করতেই হয়। ভাড়া বেশি নিলেও আমাদের করার কিছুই নেই, সরকারের উচিত বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। শুধু এই রুটের শতাব্দী পরিবহণই নয়, ঢাকার অন্যান্য রুটে চলাচলকারী বেসরকারি এসি বাসেও সাধারণ ভাড়া থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। উত্তরা-মতিঝিল রুটে চলাচল করে গ্রিন ঢাকা নামের একটি পরিবহণ। এই পরিবহণের ভাড়াও একই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণে কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে এসব বাসের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে মালিকপক্ষের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্ধারণ হচ্ছে ভাড়া। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলেন, পরিবহণ সংকটের কারণে যাত্রীদেরও কিছু করার নেই। কেউ প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয় না। আর বলারও কেউ থাকে না। রাজধানীর মতিঝিল থেকে নিয়মিত বারিধারার অফিসে যান আবদুল হালিম। 'গ্রিন ঢাকা'র নিত্যদিনের যাত্রী তিনি। হালিমের ভাষ্য, মতিঝিল থেকে কাকরাইল ভাড়া ৬০ টাকা, নতুন বাজারেও ৬০ টাকা। আবার উত্তরায় ১০০ টাকা। এটা বেশি। অনেক বেশি। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শতাব্দী পরিবহণের কাউন্টারে দায়িত্বরত এক কর্মী বলেন, এসি বাস সার্ভিসে খরচ অনেক বেশি, তাই বাসের ভাড়াও বেশি। বিভিন্ন সিগন্যালে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। রাস্তায় অনেক জ্যামও থাকে। জ্যামে পড়লে নন এসি গাড়িগুলো স্টার্ট বন্ধ করে রাখতে পারে। কিন্তু এসি বাসে স্টার্ট বন্ধ করা যায় না। তাই সবদিক বিবেচনা করেই এসি গাড়ির ভাড়া বেশি হয়। বাড়তি ভাড়া প্রসঙ্গে শতাব্দী পরিবহণের রোড সুপারভাইজার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান রোকন বলেন, আজিমপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা বেশি হয়নি। তবে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ধানমন্ডি ২৭ এবং খেজুর বাগান থেকে ভাড়া একটু বেশি হয়েছে এটা আমাদের ভাবনায় রয়েছে। 'এ বিষয়ে ৯ নভেম্বর আমাদের মিটিংয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। মিটিং শেষে হয়তো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ধানমন্ডি ২৭ এবং খেজুর বাগান থেকে ভাড়া কিছুটা কমানোর সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে অন্য জায়গা থেকে ভাড়া কমানো হবে না।' এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কর্মকর্তা প্রকৌশলী লোকমান হোসেন মোলস্না বলেন, নন-এসি গাড়িগুলোর ভাড়া কিলোমিটার অনুযায়ী নির্ধারণ করা আছে। তবে এসি বাসের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। সেক্ষেত্রে মার্কেট ডিমান্ড অনুযায়ী মালিক ভাড়া নির্ধারণ করে দিচ্ছে। 'মালিক যদি ভাড়া সহনশীল রাখে, তাহলে তার গাড়িতে যাত্রী বেশি উঠবে, তার ব্যবসা ভালো হবে। ভাড়া বেশি নিলে যাত্রী তার গাড়িতে উঠবে না।' কেউ যদি বিআরটিএ-তে বাড়তি ভাড়া বিষয়ে অভিযোগ করে সেক্ষেত্রে আপনাদের করণীয় কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু এসি গাড়ির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি, সেক্ষেত্রে ভাড়া কম বা বেশি হওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই। ভাড়া বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ নেই। তবে ট্রাফিক পুলিশ চাইলে অন্য ধারায় মামলা করতে পারে। বিআরটিএ-এর এই কর্মকর্তা বলেন, একই রুটে যদি একাধিক এসি বাস চলাচল করত, সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার কারণে ভাড়াও কমে আসত। একক আধিপত্য থাকায় বর্তমানে তারা এমন ভাড়া গ্রহণ করছে যাত্রীদের কাছ থেকে। খুব শিগগির আজিমপুর-উত্তরা রুটে আরো বাস চলাচল করবে, তখন এমনিতেই ভাড়া কমে আসবে।