চোখে আলো নেই তবুও জাবির মিছিলে শারমিন

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী শারমিন -যাযাদি
দু'চোখে আলো নেই। অন্যের সহযোগিতায় পথ চলতে হয়। তবুও থেমে থাকেননি শারমিন। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে মনের আলোতেই নেমেছেন আন্দোলনে। মিছিলে স্স্নোগান তুলেছেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মতো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলমান দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে দেখা গেছে হার না মানা এক শারমিনকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। জন্ম থেকেই অন্ধ শারমিন। তবুও চলমান উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে দৃষ্টিহীন এই শিক্ষার্থীকে দেখা গেছে মিছিলে স্স্নোগান তুলতে। শারমিন বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার কথা শুনে নিজেকে আর চার দেয়ালে আবদ্ধ রাখতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে পরিবার থেকেও বাধা আসেনি। প্রীতিলতা হলের আবাসিক এই শিক্ষার্থী থেকে এখন অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন অন্য শিক্ষার্থীরা। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে শারমিনকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল, ক্যান্টিন, ডাইনিং, দোকান-পাটসহ অন্যসব সুবিধা বন্ধ করা হলেও সেদিকে নজর দেননি শারমিন। এত কিছুর পরও বাড়িতে না গিয়ে চলে এসেছেন আন্দোলনে। তার মতো কিছু শিক্ষার্থীর জন্য বন্ধ বিশ্ববিদ্যলয়ে সক্রিয়ভাবে চলছে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন। স্স্নোগানে স্স্নোগানে মুখরিত হচ্ছে ক্যাম্পাস। এসব মিছিলের সামনে থাকা মেয়েটিই হলো শারমিন। অদম্য এক শক্তিতে তিনি এগিয়ে চলছেন। প্রতিদিনই অংশ নিচ্ছেন আন্দোলনে। অন্য ছাত্রীদের সঙ্গে কষ্ট করে রাত যাপন করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বাসায়। শুক্রবারও আন্দোলনের কর্মসূচিতে হাজির থাকতে দেখা গেছে শারমিনকে। শারমিন বলেন, 'ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করার পর থেকেই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলনকে আরও জোরালো করি। আমার প্রতিবন্ধকতা আছে। তারপরও আমাকে আন্দোলনে আসতে হয়েছে। আমার চোখে আলো নেই তবে আমার বিবেক জাগ্রত রয়েছে। এ ঘটনা আর আমাকে বসে থাকতে দেয়নি।' তিনি বলেন, 'দুর্নীতির বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। এই আন্দোলন ক্যাম্পাসকে বাঁচানোর আন্দোলন। অনৈতিকভাবে আমাদের হল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। অনতিবিলম্বে আমাদের হলগুলো খুলে দিতে হবে।' আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের ছাত্রী তাজরিন ইসলাম তন্বী বলেন, 'আমরা আসলে শারমিনকে নিয়ে গর্বিত। ওর চোখে আলো নেই, কিন্তু সে আমাদের আলো দেখাচ্ছে। নিজের জীবনকে চালিয়ে নিচ্ছে অন্য আর দশজনের মতোই। \হওর আন্দোলনে অংশ নেয়া আমাদের শক্তি জোগাচ্ছে। দিনরাত শারমিন আমাদের সঙ্গেই থাকছে।'