পেঁয়াজ মৌসুমে আমদানি বন্ধের চিন্তা: কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক
যাযাদি রিপোর্ট কৃষকের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকার ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রাখার চিন্তা করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। প্রায় ছয়গুণ বেড়ে পেঁয়াজের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পর সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান। কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'আমরা এবার পস্নান করেছি, পিক অব দ্য সিজনে, আমরা চিন্তা করছি, সিদ্ধান্ত হয় নাই, আমরা পেঁয়াজ আমদানি তখন বন্ধ রাখব। যাতে করে আমাদের চাষিরা সঠিক মূল্য পায়। ইনশাআলস্নাহ এটা আমরা এবার করব। ইতোমধ্যে আমরা এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' বাংলাদেশের আমদানি পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় উৎস প্রতিবেশী দেশ ভারত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে পণ্যটির রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে; দেড় মাসের মাথায় তা কেজিতে আড়াইশ টাকা ছুঁয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রোববার সোনারগাঁও হোটেলে ফিনল্যান্ডের সঙ্গে ব্যবসায় সম্প্রসারণ নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে এক সেমিনারের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, '২০-২৫ দিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসে যাবে। আমার বিশ্বাস তখন দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। এর মধ্যে ভারতও তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে।' চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হয় জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'গত বছরও পেঁয়াজ আমাদের ভালো হয়েছিল। কিন্তু আগাম বৃষ্টি শুরু হওয়াতে আমাদের কৃষকরা পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারেন নাই। বিদেশ থেকে আমদানি করে আমরা এটা মেটাতে পারতাম। হঠাৎ এভাবে ইন্ডিয়া পেঁয়াজের ওপর রেস্ট্রিকশন দিবে, ব্যান করবে রপ্তানি- এটা আমরা চিন্তাও করিনি।' কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা তা কেবল পেঁয়াজের কারণে ম্স্নান হতে পারে না বলে মন্তব্য করে তিনি। পেঁয়াজে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার প্রশ্নে রাজ্জাক বলেন, বাজার চলে চাহিদা ও যোগানের উপর। মনিটরিং করে বাজার খুব একটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পুলিশ,র্ যাব দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। 'ভারত থেকে টুথপেস্ট আসবে কেন' এদিকে রোববার বিকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'উন্নয়ন মেলা-২০১৯'-এর এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন কৃষিমন্ত্রী। সেমিনারে তিনি বলেন, '১৬ কোটির বেশি মানুষ বাংলাদেশে। এই মানুষদের জন্য টুথপেস্ট কোলগেট আসে ভারত থেকে। ভারত থেকে কেন এই টুথপেস্ট আসবে? বাংলাদেশে টুথপেস্ট তৈরি করতে পারে না কোলগেট? তারা কেন এখানে কারখানা করে না, কেন বিনিয়োগ করবে না?' দেশে অনেক পণ্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াজাতকরণের আধুনিক প্রযুক্তি নেই উলেস্নখ করে আব্দুল রাজ্জাক বলেন, 'কৃষিনির্ভর এ রকম অনেক পণ্য মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসছে। প্রথমত, আমাদের মার্কেটের আকার বাড়াতে হবে, দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তি আহরণ করে প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতি গড়তে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি শুধু উৎপাদনে না, প্রক্রিয়াজাতকরণেও ব্যবহার করতে হবে।' ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে জেলি বানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেটা বাংলাদেশ কীভাবে করতে পারবে? সেখানে কৃষি মন্ত্রণালয়, এর সচিব ও মন্ত্রী হিসেবে আমি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা রাখতে হবে। ৬০-এর দশকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মন্ত্রী, তখন থেকেই ফুড টেকনোলজি বিভাগ দেখছেন তিনি। কৃষিমন্ত্রীর প্রশ্ন, 'এ পর্যন্ত যারা ফুড টেকনোলজি থেকে বেরিয়ে এসেছে, তারা কয়টা খাবার ফুড টেকনোলজির মাধ্যমে আমাদের জন্য করতে পেরেছে? কয়টা আজকে বাজারজাত হচ্ছে? যেটার কৃতিত্ব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যেতে পারে।' সেমিনারে অংশ নেয়ার আগে উন্নয়ন মেলা ঘুরে দেখেন কৃষিমন্ত্রী। তখন তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে যাওয়ার জন্য আমাদের আরও আধুনিক পণ্য তৈরি করতে হবে। শুধু গামছা বানিয়ে, চাদর বানিয়ে; এই মানের চাদর, এই মানের গামছা দিয়ে হবে না। আন্তর্জাতিক মানের চাদর, কার্পেট, বেডশিট- এগুলো করতে হবে। এগুলোর জন্য আমাদের উদ্যোগ দরকার।' 'নিরাপদ খাদ্য, এটা আরেকটা বিষয়। দেশে শুঁটকি মাছ, কুচিয়া চাষ করা হচ্ছে- এগুলো নিরাপদ কি না, কীভাবে হচ্ছে? কৃষির বিভিন্ন পণ্য, এগুলো যদি নিরাপদ না হয়, স্বাস্থ্যসম্মত না হয়, তাহলে পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশ যেতে পারবে না।' উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাতকরণ- এগুলোর ব্যাপারে আরও উদ্যোগ দরকার বলেও মনে করেন কৃষিমন্ত্রী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, পি কে এস এফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঈনুদ্দিন আব্দুলস্নাহ প্রমুখ।