আমিষ উৎপাদনে ২২০ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশ | ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মানবদেহের প্রয়োজনীয় উপাদান আমিষ উৎপাদনে ২২০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়ন, নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের উৎপাদনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পে ভেটেরিনারি ও সম্প্রসারণ সেবা ত্বরান্বিত করা ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মপরিবেশ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার উন্নয়ন কর্মসূচিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 'প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সক্ষমতা জোরদারকরণ' নামের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এটি অনুমোদন পেয়েছে। পরিকল্পনা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন একজন মানুষের দেহের প্রতিকেজি ওজনের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৮৩ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করা উচিত। খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (এফএও) পরিচালিত গবেষণা মতে এদেশের শতকরা ৬৬ ভাগেরও বেশি মানুষ প্রতিদিন ৫০ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করে। তবে শতকরা ১০ ভাগ মানুষ ৪০ গ্রামের কম আমিষ খেতে পায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমিষজাতীয় খাদ্যের চাহিদাও বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক আমিষের অনুমোদিত মাত্রা হলো ৩৩-৬৬ গ্রাম। গর্ভবতী নারী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের কিছুটা বাড়তি আমিষের প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী নারী এবং ৭-১২ মাস বয়সি শিশুর মায়ের জন্য স্বাভাবিক আমিষের সঙ্গে বাড়তি দৈনিক ১৩ থেকে ১৪ গ্রাম আমিষ যোগ করতে হয়। আমিষের উৎস দানাশস্য, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৮টি বিভাগের ৬৪টি জেলার ৪৯৫টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ৫৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা। যার পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে ৯তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হবে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দপ্তরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। দেশের ৬৪ জেলায় জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ভবন সম্প্রসারণ ও নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের জন্য তাপানুকুল ব্যবস্থাসহ কোল্ড রুম নির্মাণ করা হবে। কেন্দ্রীয় স্টোর ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করা, দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোর ডিজিটাল সার্ভেকরণ, অধিদপ্তরের বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ এবং প্রাণিসম্পদের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়নের লক্ষ্যে ৬৩টি নতুন যানবাহন কেনা হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষক নির্বাচন এবং টিওটি প্রশিক্ষণ ও বিশেষায়িত বৈদেশিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও রয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, 'প্রকল্পটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রথম উদ্দেশ্য যথা- দুধ, ডিম ও মাংস প্রদানকারী প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতার টেকসই উন্নয়ন, প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ ও প্রাণিসম্পদ সেবার মানের নিশ্চয়তা এবং প্রাণী স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সেবা নিশ্চিত করতে নীতি ও কৌশল প্রণয়নের সঙ্গে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সঙ্গতিপূর্ণ বলে সরকার এটি একনেকে অনুমোদন করেছে।' এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়বে। এতে প্রাণিজ আমিষের সরবরাহ বাড়িয়ে পুষ্টির নিশ্চয়তা ছাড়াও বেকার যুবকদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।'