সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন

সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১৯ সালে নিহত ৫২১১

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সড়ক দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া একটি গাড়ি -ফাইল ছবি
যাযাদি ডেস্ক ২০১৯ সালে দেশে ৪ হাজার ৬৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ২১১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৭ হাজার ১০৩ জন। নিহতের মধ্যে ৬১৩ জন শিশু ও ৭৮৯ জন নারী। আর এসব দুর্ঘটনার এক-চতুর্থাংশই মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। দেশের ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ফাউন্ডেশনটি এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। পথচারী নিহত ২০২৭ : দুর্ঘটনায় ২ হাজার ২৭ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বাইসাইকেল চালানো, হেঁটে পথচলা, রাস্তা পার হওয়ার সময় এবং রাস্তার পাশে অবস্থান করার সময় এসব মানুষ মোটরযানের চাপায় নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সি কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৭ জন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা : ২০১৯ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ১ হাজার ১৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৪৫ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আঞ্চলিক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা : দেশের আঞ্চলিক সড়কে ২ হাজার ৭৩৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৫৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে মহাসড়কে ঘটেছে ১ হাজার ৯৫৮টি, যা মোট দুর্ঘটনার ৪১ দশমিক ৭২ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় দায়ী যানবাহনের সংখ্যা ১০ হাজার ৯৯২টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল এক হাজার ১৮৯টি; বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যান ১ হাজার ৫২৫টি; সিএনজি ৯৯৩টি; ইজিবাইক ও টেম্পো এক হাজার ৭৫৩; নসিমন, করিমন, ভটভটি ও টমটম এক হাজার ৯৭টি; বাস ৯৩৪টি; মিনিবাস এক হাজার ৪১টি; মাইক্রোবাস ও পিকআপ ৮৫৭টি; কার বা জিপ ৪৯৬টি; ট্রাক, ট্রাক্টর ও লরি ৭১৪টি এবং কাভার্ডভ্যান ২৯৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। রেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৬, নৌপথে ৬৭ : ২০১৯ সালে দেশে ১৫৯টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৯৬ জন নিহত ও ৪৭১ জন আহত হয়েছে। এছাড়া নৌপথে ৩২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬৭ জন। নিখোঁজ রয়েছে ১১৭ জন। দুর্ঘটনার কারণ : রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনার বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হলো- ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে ইজিবাইক নসিমন করিমনসহ স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা বা না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। দুর্ঘটনারোধে সুপারিশ : দুর্ঘটনারোধে বেশকিছু সুপারিশ করেছে ফাউন্ডেশনটি। সুপারিশে দক্ষ চালক তৈরির প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহণের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহণে চাঁদাবাজি বন্ধ, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার, সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো এবং বারবার কমিটি গঠন এবং সুপারিশ তৈরির চক্র থেকে বেরিয়ে একটি টেকসই পরিবহণ কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণের কথা বলা হয়েছে।