পরিচ্ছন্ন নগরীর প্রতিশ্রম্নতি পোস্টারেই বরখেলাপ

গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময়ও পলিথিনে মোড়ানো কিছু পোস্টার দেখা গিয়েছিল। তবে এবার সিটি ভোটে প্রায় সব প্রার্থীই এ ধরনের পোস্টার ব্যবহার করছেন।

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ঢাকা ছেয়ে গেছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়া প্রার্থীদের পোস্টারে। ছবিটি সোমবার সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তোলা -আমিনুল ইসলাম শাহীন
আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ঢাকা ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টারে। প্রার্থীরা পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গেলেও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়া তাদের পোস্টার ঝুলছে অলিগলিতে। এক্ষেত্রে নাগরিক ও পরিবেশকর্মীরা প্রার্থীদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে তুলছেন প্রশ্ন। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে নালা-নর্দমায় আটকে যাওয়া এসব পলিথিন জলাবদ্ধতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, তা নিয়ে চিন্তিত সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিরা। গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময়ও পলিথিনে মোড়ানো কিছু পোস্টার দেখা গিয়েছিল। তবে এবার সিটি ভোটে প্রায় সব প্রার্থীই এ ধরনের পোস্টার ব্যবহার করছেন। এমনকি রাজধানীতে লেমিনেটিং করা পোস্টারও দেখা গেছে। নির্বাচনী প্রচারের দশ দিন না পেরোতেই এরই মধ্যে খুলে পড়তেও শুরু করেছে এসব পোস্টার। বনানীর ১ নম্বর সড়কে একজন মেয়র প্রার্থী এবং একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর পলিথিনে মোড়া পোস্টার পড়ে থাকতে দেখা গেছে। লালবাগের খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদের পাশের নালায়ও এমন পোস্টার দেখা গেছে। কিছু পোস্টার পড়ে থাকতে দেখা গেছে লালবাগ বালুর মাঠের পাশের সড়কে। রাস্তার ওপর রশিতে ঝোলানো এসব পোস্টার প্রায়ই ছিঁড়ে পড়ে নালায় চলে যায় বলে জানান লালবাগের জগন্নাথ সাহা রোডের বাসিন্দা মনির হোসেন। রোববার তিনি বলেন, 'রাতে এইখানে অনেক ট্রাক আসে। ট্রাকের গায়ে লাইগা পোস্টার ছিঁড়া পইড়া যায়। এখন তো বৃষ্টির দিন না এখন পস্নাস্টিকে মোড়ানো পোস্টার না লাগাইলেই ভালো হইত।' এ ধরনের পোস্টার ব্যবহারের ফলে প্রার্থীদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা কাজী মাহমুদ। তিনি বলেন, 'পস্নাস্টিকে মোড়ানো পলিথিন ড্রেনেজ সিস্টেমে গিয়ে সিস্টেম নষ্ট করে দিবে। এই পোস্টারগুলো ধ্বংস হবে না। যেখানে মেয়র প্রার্থীরাই পরিবেশ নষ্ট করছেন সেখানে আমরা তাদের কাছে কিভাবে ভালো পরিবেশ দেবেন এটা আশা করতে পারি?' জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচারণা সেলের সমন্বয়ক সাইফুদ্দিন ইমন বলেন, তারা প্রথমে পলিথিনে মোড়া পোস্টার ছাপালেও এখন আর সেগুলো দিচ্ছেন না। 'আমরা শুরুতে কিছু পোস্টার করেছিলাম পলি দিয়ে। কিন্তু এটা নিয়ে আপত্তি আসার পর এখন আর পলি দিয়ে পোস্টার করছি না। কিছু পোস্টার আমরা নষ্ট করে দিয়েছি।' ডিএনসিসিতে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ব্যক্তিগত সহকারী মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, সব প্রার্থীর পোস্টারই পলিথিনে মোড়ানো। কুয়াশা থেকে রক্ষা করতে তারাও একই কাজ করেছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী ফজলে নূর তাপসের মিডিয়া সমন্বয়ক তারেক শিকদার বললেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো নিষেধ নেই। লেমিনেশন করা যাবে কিনা এ বিষয়ে কোনো বাধা নেই। আমরা লেমিনেশন করে দিয়েছি, এটাকে পলিথিন হিসেবে চিন্তা করিনি। এই পলিথিনটা মনে হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞারা বাইরে।' এসব পোস্টার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের যে বেশিকিছু করার নেই তার সত্যতা মিলল ডিএসসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেনের কথাতেও। তিনি বলেন, 'আমাদের আচরণবিধিতে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে বলা আছে। কিন্তু পলিথিনসহ পোস্টার ব্যবহার করা যাবে কি, যাবে না বিষয়টি ক্লিয়ার না। প্রার্থীরা আমাদের বলেছে, কুয়াশায় ভিজে এগুলো (পলিথিন ছাড়া পোস্টার) পড়ে যায়। আমরা বলেছি, পড়ে গেলে আবার লাগাবেন।' পোস্টারে পলিথিনের বহুল ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ ধরনের অবস্থা হলে সিটি করপোরেশন নিজে থেকেই এসব পোস্টার অপসারণ করতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশনও বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।'