উদ্যোগেই আটকে আছে সড়কে শব্দদূষণবিরোধী অভিযান

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সচিবালয়ের চারপাশের রাস্তায় হর্ন বন্ধের প্রচেষ্টা ঘোষণাতেই থমকে আছে। কোনও প্রচার-প্রচারণা যেমন নেই, তেমনি নেই এই ঘোষণা বাস্তবায়নে কোনও জোরালো পদক্ষেপও। ফলে 'নো হর্ন জোনে' বেজেই চলেছে হর্ন। এসব নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরকে অনেক ধরনের অভিযান চালাতে হয়। কিছু বিষয়ে উচ্চ আদালত সময় বেঁধে কাজ করার নির্দেশ দেন। ফলে চাইলেও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণা বাস্তবায়নে টানা অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সর্বশেষ ২৫ জানুয়ারি শব্দ দূষণের অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এরপর আর কিছু হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানগুলো পরিচালনার জন্য মাত্র তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। এর মধ্যে দুইজন প্রায় সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করেন। অন্য একজন শুধু চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য। চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আপাতত মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। ফলে সারাদেশে এখন মাত্র দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণসহ সব ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট দুজন হলেন মাকসুদুল ইসলাম ও কাজী তামজিদ আহমেদ। এই সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন আরও ৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার জন্য। এর মধ্যে তিন জনের নিয়োগ হয়েছে। এর ফলে ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। তবে, এর মধ্যে ঢাকার জন্য মাত্র দুই পোস্ট, বাকিগুলো বিভাগীয় পর্যায়ের জন্য। ইতোমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুরের জন্য। ময়মনসিংহের জন্য এখনও দেওয়া হয়নি। অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (টেকনিক্যাল) মোসাব্বের হোসেইন মোহাম্মদ রাজিব বলেন, 'শব্দদূষণবিরোধী অভিযান আপাতত বন্ধ আছে। কারণ শ্যামপুর, কদমতলীতে ডায়িং ফ্যাক্টরিগুলোয় এখন অভিযান চালাচ্ছি। হাইকোর্টের নির্দেশে ২৩১টি ডায়িং ফ্যাক্টরি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। শিগগিরই শব্দদূষণের অভিযান শুরু করা হবে।' এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রকৌশলী কাজী তামজিদ আহমেদ বলেন, 'নির্বাচনের জন্য আমরা বন্ধ রেখেছিলাম। শিগগিরই অভিযান শুরু করবো।' তিনি বলেন, 'অভিযান পরিচালনার জন্য শুধু ম্যাজিস্ট্রেটেই চলে না, এর সঙ্গে ৫ জনের একটি টিমের বা সাপোর্টিং স্টাফও প্রয়োজন হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গেলে একজন পেসকার থাকতে হয়, একজন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকতে হয় পরিদর্শক হিসেবে। প্রসেস সার্ভার হিসেবে স্টাফ রাখতে হয় একজন। এছাড়া দরকার হয় পরিবহণ ও চালকও। আমাদের এসবের কিছুই নেই। বর্তমানে আমাদেরই দিতে পারে না। ফলে শুধু ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে কিছু হবে না।' এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, 'শুধু অভিযান পরিচালনা করলেই হবে না। সেই অভিযানের পর মনিটরিং করার জন্য আমাদের আরেকটি টিমের দরকার হয়। সেই টিমেও জনবল সংকট আছে। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের মতো বড় জায়গাগুলোয় আলাদা টিম খুবই দরকার হয়।' পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) আব্দুলস্নাহ আল মামুন বলেন, 'আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান আছে। একটা পেট্রোল টিম নিয়মিত কাজ করছে। আসলে মূল বিষয় হচ্ছে, আমাদের জরিমানা ও সচেতনতার কাজ একসঙ্গেই চলছে।' তিনি জানান, 'হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকায় বায়ুদূষণ কমাতে ইটভাটাগুলোয় এখন অভিযান চলছে। এই কারণে শব্দদূষণের অভিযানের গতি কিছুটা কম। শিগগিরই অভিযান শুরু হবে।' লোকবলের বিষয়ে আব্দুলস্নাহ আল মামুন বলেন, 'পরিবেশ অধিদপ্তরের এখন অনেক অনেক কাজ। এসব কাজের জন্য দুই হাজারের মতো জনবল দরকার। কিন্তু সারাদেশে কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে আছে ৬০০। চলতি অর্থবছরের মধ্যে আরও কিছু জনবল নিয়োগ হবে কিন্তু সেটি দিয়েও কাজ করা কঠিন হবে। তাই আমরা জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে যাচ্ছি। শিগগিরই পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জনপ্রশাসন বিভাগের কাছে আমরা জনবল বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাব পাঠাবো।' তিনি বলেন, 'পলিথিনের বিরুদ্ধে, কালো ধোঁয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি আমরা। একই সঙ্গে বায়ুদূষণের বিরুদ্ধেও।' বুধবারও গাজীপুরে অভিযান চালানো হয়েছে বলে তিনি উলেস্নখ করেন।