তদবিরে কাজ না হলে মিথ্যা অভিযোগে হয়রানি!

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বুধবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং এলাকা থেকে জিয়াউল আমিন ওরফে হারুন-অর-রশিদ এবং তার স্ত্রী দৌলতুন নেছাকে আটক করের্ যাব -যাযাদি
বরগুনার পাথরঘাটায় চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পলাতক আসামি হারুন-অর-রশিদ ঢাকায় এসে নাম পাল্টে হয়ে যান জিয়াউল আমিন। এমনকি 'জাতীয় মানবাধিকার ইউনিট' নামে একটি বেসরকারি সংস্থাও (এনজিও) চালু করে বনে যান স্বঘোষিত চেয়ারম্যান। আদতে মানবাধিকার সংস্থার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন হারুন-অর-রশিদ। তার অন্যতম কাজ ছিল সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অন্যায় তদবির করা। আর তদবিরে কাজ না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে চলত হয়রানি। বুধবার দিনগত রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং এলাকা থেকে কথিত মানবাধিকার সংস্থার স্বঘোষিত চেয়ারম্যান জিয়াউল আমিন ওরফে হারুন-অর-রশিদ (৫৩) এবং তার স্ত্রী সংগঠনের অর্থ সচিব দৌলতুন নেছাকে (৪২) আটক করের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব-১১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণা ও হয়রানির কাজে ব্যবহৃত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিলসহ ৪২টি ভুয়া সিল, বিপুল পরিমাণ জাল নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতের্ যাব জানায়, আটকদের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা থানাধীন কালমেঘা এলাকায়। হারুন ২০০৭ সালে পাথরঘাটা চাঞ্চল্যকর দেবরঞ্জন কীর্তনীয়া হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি। এ হত্যাকান্ডের পর পালিয়ে ঢাকায় এসে হারুন-অর-রশিদ নাম পাল্টে জিয়াউল আমিন নাম ধারণ করেন। এরপর উকিলের সঙ্গে কোর্টে কাজ করার সুবাদে কিছু আইনি বিষয় রপ্ত করে ২০১১ সালে 'জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি' নামে একটি এনজিও চালু করেন হারুন। এই এনজিও বিপুল সংখ্যক মানুষকে প্রতারিত করে আসছে এমন অভিযোগে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। কিন্তু লাইসেন্স বাতিলের পরও হারুন মানবাধিকার ইউনিটের নামে তার প্রতারণা অব্যাহত রাখেন। এসএসসি পাস হারুন একাধারে মানবাধিকার ইউনিটের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের চিফ কো-অর্ডিনেটর ও হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির চিফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে মানুষকে হয়রানি করে আসছিলেন। ভুয়া পরিচয়ে বেকার যুবকদের চাকরির প্রলোভন, জায়গা জমি ও বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা মেটানোর নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এসব মানবাধিকার সংস্থার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে প্রতারক হারুন দেশজুড়ে ৪০টি কমিটি তৈরি করে প্রায় ২ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা সদস্য ফি হিসেবে আদায় করেছেন। র্ যাব আরও জানায়, হারুনের প্রধান কাজ ছিল সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অন্যায় তদবির করা। আর তদবিরে কোনো কর্মকর্তা অস্বীকৃতি জানালে তার নামে উচ্চপদস্থ অফিস ও মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করতেন। এ পর্যন্ত সুশীল সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি, পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের শতাধিক ব্যক্তিকে নানাভাবে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে আসছিলেন হারুন। এছাড়া, একাধিক নারীসহ তার নির্ধারিত কিছু এজেন্টের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিরীহ জনগণের নামে মনগড়া মামলা ও অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। র্ যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন বলেন, প্রতারক হারুনের কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন শতাধিক ভুক্তভোগীকে পাওয়া গেছে। কোনো ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা করলে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিতেন তিনি। আটক দৌলতুন নেছা সংগঠনের অর্থসচিব হিসেবে হারুনের একান্ত সহযোগী। আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।