বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
রূপনগর অগ্নিকান্ড

আশ্রয় খুঁজছেন বস্তির ঘরহারারা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

গত সাত বছর ধরে পাখি বেগম ও ফরিদ রূপনগর বস্তিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। পাখি কাজ করেন অন্যের বাসায় আর ফরিদ ভ্যানচালক। তিন সন্তানকে নিয়ে তাদের সংসার। অভাব আছে কিন্তু এর মধ্যেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে মাসের পর পর জমানো টাকায় তিন ভরি স্বর্ণালংকার বানিয়েছিলেন। গত বুধবার (১১ মার্চ) সকালে বস্তিতে লাগা আগুনে সব পুড়ে গেছে। সকালে যে কাপড় পরে পাখি ও ফরিদ ঘর থেকে বের হয়েছিলেন সেগুলো ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই তাদের।

বস্তির আগুনে সব হারিয়ে এই পরিবারটির মতো আরও আড়াই হাজারের বেশি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে রূপনগর টি-বস্নকের ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে। বুধবার (১১ মার্চ) দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে খাবার দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার ৬৩৫ পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার ব্যাপারেও পরিকল্পনা রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে চাল সহযোগিতা দেওয়ার পর রান্না করা খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, 'চাল দেওয়া হয়েছে। এখন তারা নিজেরাই রান্না করে খাবে।' কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের প্রশ্ন, 'যাব কোথায়?'

সরেজমিনে দেখা গেছে, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত সবার জায়গা হচ্ছে না। ফলে অনেকে যে-যার মতো করে আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছেন। তবে আগুনের ঘটনা মাসের মাঝামাঝি হওয়ায় ভাড়া নেওয়ার মতো বাসা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকগুলো পরিবারকে রাস্তার পাশে পলিথিন টাঙিয়ে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। আগুন লাগার দুদিন পরও ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে ঘরের শেষ সম্বলটুকু কুড়িয়ে আনার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। কাঠের তৈরি সব জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও লোহারগুলো রয়ে গেছে। সেগুলোই কুড়িয়ে আনছেন তারা।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগুনে ঘর-বাড়ি হারানোদের আশ্রয়ের ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা নেই। নিজ ব্যবস্থাপনায় জায়গা খুঁজে নিতে হবে। তবে সরকার বস্তিবাসীর স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করা নিয়ে ভাবছে। কীভাবে তা করা যায়, সেটি আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, সরকার অনেক কিছু করার কথা বলছে। কিন্তু ভবিষ্যতে কিছুই হবে না। এখন যে যার মতো করে আশ্রয় খুঁজে নিতে হবে। ভাড়ায় বাসা না পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের রাস্তাতেই থাকতে হবে।

পঁচিশ বছর আগে বরিশালের বরগুনা থেকে রূপনগর বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ইমনের বাবা। প্রথমে বস্তির ঝুপড়িতে থাকা শুরু করলেও সর্বশেষ তারা আটটি ঘরের মালিক ছিলেন। প্রতিটি ঘর ভাড়া দিতেন আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। এখন তাদের জায়গা হয়েছে রাস্তার পাশে।

ইমন বলেন, 'গতবছর চলন্তিকা বস্তিতে আগুন লাগার পরই আমাদের মনে সন্দেহ হয়েছিল, এখানেও আগুন লাগতে পারে। তখন আমরা কাউন্সিলর, সংসদ সদস্য সবার কাছে গেছি। বলেছি, 'আপনারা বললে আমরা চলে যাব। তাও আগুনে পুড়ায়ে সব শেষ করে দেবেন না।' তখন আমাদের বলা হয়েছিল, 'কিছু হবে না। তোমাদের কোথাও যেতে হবে না। যা ভেবেছি তাই হয়েছে। আগুনে সব শেষ হয়ে গেছে।'

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের স্থায়ী সমাধানের কোনো ব্যবস্থাপনা না থাকলেও তাদের সাময়িক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, 'আমরা বস্তির ২ হাজার ৬৩৫টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করেছি। প্রথম দিন থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এখন তারা নিজেরা রান্না করে খাবেন। আর স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখছেন।'

স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা শপথ গ্রহণ করার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বস্তিবাসীদের স্থায়ী আবাসনের ব্যাপারে বলেছেন। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিলে তারা মাসে মাসে ভাড়া পরিশোধের মাধ্যমে একপর্যায়ে মালিক হয়ে যেতে পারবেন।' সরকারের এমন পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<92652 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1