করোনা ঝুঁকি থাকলেও রাইড শেয়ারে হেলমেট বাধ্যতামূলক

প্রকাশ | ১৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
হেলমেট পরা দুই মোটরসাইকেল আরোহী
মোটরসাইকেলে চলাচলে চালকের পাশাপাশি যাত্রীর হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা হেলমেট একজন ব্যবহার করলেও করোনাভাইরাসের কারণে শঙ্কা জেগেছে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার নিয়ে। ভাড়ায় চালিত এসব মোটরসাইকেলে একটি হেলমেট একাধিক যাত্রী ব্যবহার করেন। এই যাত্রীদের মধ্যে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে হেলমেটের মাধ্যমে অন্য যাত্রীদের মধ্যেও তা ছড়াতে পারে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, মোটরযান আইন অনুযায়ী, হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। যেখানে মোটরযান আইনের ব্যত্যয় ঘটবে, সেখানেই মামলা হবে। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধের অংশ হিসেবে গণপরিবহণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর। আইইডিসিআর রাইড শেয়ারকেও গণপরিবহণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করছে। বিগত কয়েক বছরে রাজধানীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রাইড শেয়ারিং। যানজট এড়িয়ে দ্রম্নত গন্তব্যে পৌঁছাতে নাগরিকদের বড় একটা অংশ রাইড শেয়ার করে থাকেন। আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে গণপরিবহণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়ার পর জনমনে প্রশ্ন উঠেছিল, বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় রাইড শেয়ারের ক্ষেত্রে হেলমেট ব্যবহার শিথিল করা যায় কিনা? ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মোটরসাইকেল চালক ও যাত্রীর জন্য হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে। কেউ দুর্ঘটনায় পড়লে ভালো মানের হেলমেট বড় একটা সুরক্ষা দেয়। সেজন্য এ বিষয়টি শিথিল করার সুযোগ নেই। তাতে দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। করোনা ইসু্যতে হেলমেট ব্যবহার শিথিল করার কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক ট্রাফিক কর্মকর্তা। ভবিষ্যতে এমন কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা? এমন প্রশ্নে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'এটার (করোনা) সঙ্গে মামলার কোনো সম্পর্ক নেই। মামলা একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেখানে মোটরযান আইন লঙ্ঘন হবে সেখানেই মামলা হবে।' মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহণে এক হেলমেট একাধিক ব্যক্তির ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে আইইডিসিআর উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, 'গণপরিবহণে চলাচলের ক্ষেত্রে আমরা আগেই শঙ্কার কথা জানিয়েছিলাম। মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহণে এক হেলমেট একাধিক ব্যক্তির ব্যবহারের বিষয়টি নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।' করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে কাজ করা টেকনিক্যাল কমিটি মোটরসাইকেলে যাত্রীর হেলমেট ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে ভাবছে বলে জানিয়েছেন মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। \হতিনি বলেন, 'গণপরিবহণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা এর আগে যে সতর্কতার কথা বলেছিলাম, তখন এটাও (মোটরসাইকেলের যাত্রীর হেলমেট) তখন আমাদের মাথায় ছিল। তবে তখন আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলিনি যে, কোন কোন গণপরিবহণ অন্তর্ভুক্ত। তবে এখন কোন ধরনের গণপরিবহণের জন্য কী বার্তা হবে, সেটা আমাদের সচেতনতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নেবো এবং বিষয়টি সচেতনতামূলক বার্তা হিসেবে আমরা প্রচার করব।' নিজের সুরক্ষায় রাইড শেয়ারে যা করণীয়:বাস্তবতার নিরিখে রাজধানীতে রাইড শেয়ারে চলাচল করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকে। চলাচলে গতি আনতে রাইড শেয়ার ব্যবহার করতেই হয়। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে রাইড শেয়ারের মাধ্যমে করোনার মতো ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন। তিনি বলেন, 'এই সময়ে যারা রাইড শেয়ার ব্যবহার করবেন তাদের জন্য জরুরি পরামর্শ হলো, আপনারা নিজেরা নিজেদের হেলমেট বহন করুন। এটি সবচেয়ে নিরাপদ। আর যদি বাধ্য হয়ে বহুজনের ব্যবহৃত হেটমেট পরতে হয়, তাহলে ভালোভাবে নাক-মুখ ঢেকে নিতে হবে। যাতে হেলমেট থেকে কোনো কিছু নাকে মুখে প্রবেশ না করে। রাইড শেয়ার শেষে হাত-মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।' সচেতনতার সঙ্গে রাইড শেয়ার করলে ভাইরাস সংক্রমণ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।