শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যানবাহন সংকট কাটছে

তানভীর হাসান
  ১৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যানবাহন সংকট থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। দ্রম্নত সময়ের মধ্যেই তাদের যানবহনের বহরে যুক্ত হচ্ছে ২৫শ সিসির ৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান। দ্রম্নতগামী এসব যানবাহন ব্যবহার করা হবে জেলাপর্যায়ে। এতদিন জেলাপর্যায়ের কর্মকর্তারা ভাড়ায়চালিত যানবাহন দিয়ে অভিযান চালাতেন। এতে সরকারের বাড়তি টাকা খরচ হতো। সেখান থেকে স্থায়ী মুক্তি পাওয়ার জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, 'মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম যানবাহন সমস্যা। যানবাহনের কারণে অনেক সময় তথ্য থাকলেও অভিযান চালাতে সময়ক্ষেপণ হতো। সেখান থেকে মুক্তি পেতে এ বছর ৪৯টি যানবাহন কেনার অনুমতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান ও ৫টি অ্যাম্বুলেন্স। তবে চলতি অর্থবছরে ৩৪টি পিকআপ কেনার জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা সেগুলো হাতে পাব। এসব যাহবাহন জেলা কার্যালয়ে ব্যবহার করা হবে। এতে অধিদপ্তর আরও শক্তিশালী হবে।'

জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মঞ্জুরিকৃত ১০১টি যানবাহনের মধ্যে আছে মাত্র ৫৭টি। এর মধ্যে জিপ ১১টি, অ্যাম্বুলেন্স ১টি, মোটরসাইকেল ১টি, মাইক্রোবাস ৭টি, কার ৭টি ও ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান ৩০টি। এর মধ্যে ৩টি পিকআপ ভ্যান নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। এসব যানবাহনের মধ্যে সদর দপ্তরে ব্যবহৃত হয় ২টি, বিভাগীয় পর্যায়ে ৫টি, ঢাকা মেট্রো অফিস ও মন্ত্রণালয়ে একটি করে ব্যবহৃত হয়। বাকি যানবাহন বিভিন্ন মেট্রোপলিটন ও জেলাপর্যায়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া কোরিয়ান প্রকল্প থেকে দেওয়া হয়েছে আরও ৫টি যানবাহন। যা সংস্থাটির চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। এমন পরিস্থিতিতে নতুন সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত ১০১টি যানবাহন দ্রম্নত সময়ে কেনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। সেখান থেকে গত ১৮ ফেব্রম্নয়ারি ৪৯টি যানবাহন কেনার অনুমতি পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান কেনা হবে। বাকি ১০টি পিকআপ ও ৫টি অ্যাম্বুলেন্স আগামী অর্থবছর কেনা হবে।

সূত্রমতে, নতুন ৩৪টি পিকআপ ভ্যানের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রতিটি যানবাহনের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এই টাকার মধ্যের্ যাংগস গ্রম্নগ থেকে মিতসুবিশি কোম্পানির যানবাহন সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।র্ যাংগস গ্রম্নপ পুলিশসহ আরও বিভিন্ন সংস্থায় যানবাহন সরবরাহ করে আসছে। তাদের সরবরাহকৃত যানবাহন ভালো মানের হওয়ায় তাদেরই বেছে নেওয়া হয়েছে। পছন্দের তালিকায় টয়োটা মোটরস থাকলেও তাদের যানবাহনের দাম চড়া হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাদ দেওয়া হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীসহ সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালাতে গেলে যানবাহনের জন্য ভোগান্তি পেতে হয়। কারণ বেশির ভাগ ইউনিটের নিজস্ব যানবাহন নেই। এ কারণে তাদের ভাড়ায় চালিত যানবাহনের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। অনেক সময় হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেলেও যানবাহন সংকটের কারণে তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে বেগ পেতে হয়। এতে অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় টিম রেখেও যানবাহনের অপেক্ষায় থাকতে হয়। আবার অনেক সময় ভাড়ায় যানবাহন নিয়ে অভিযানে গেলেও তার বিল পেতে বেগ পেতে হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক ইন্সপেক্টর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজধানীর মেট্রোতে অঞ্চলে গাড়ি মাত্র একটি, যা অভিযানে ব্যবহার করা হয়। ১৭টি অঞ্চলের জন্য একটি গাড়ি দিয়ে অভিযান চালানো কোনোভাবেই সম্ভব না। এই একটি গাড়ি ঘুরেফিরে সবাই ব্যবহার করেন। এমন পরিস্থিতিতে ভাড়ায় যানবাহন নিয়ে অভিযান চালানোর জন্য তাদের জানানো হয়। এ কারণে জানুয়ারি মাসে তিনি বেশ কয়েকটি অভিযান চালাতে ভাড়ায় যানবাহন নিয়েছিলেন। এক দিনের জন্য একটি মাইক্রোবাস ভাড়া পড়েছিল ৩ হাজার টাকা। তেল ও গ্যাসের খরচ আলাদা। কিন্তু মাস শেষে তিনি ৫০ হাজার টাকার বিল জমা দেন রেন্ট-এ কার অফিসের প্যাডে। কিন্তু তার বিল এখনো পাওয়া রয়েছে। পরে তার পকেট থেকে রেন্ট-এ কার অফিসের টাকা পরিশোধ করা লেগেছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি অভিযানের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এখন নিয়মিত দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও বিলের টাকা পাওয়া যাবে বলে অধিদপ্তর তাকে জানিয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীসহ দেশের জেলায় যানবাহনের সংকট প্রকট। প্রায় সবাই ভাড়ায়চালিত যানবাহন ব্যবহার করেন। এতে সরকারের প্রতিমাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ এই টাকায় অনায়াসেই একটি নিজস্ব যানবাহন কেনা সম্ভব। এভাবে প্রতি মাসেই একটি যানবাহন কেনা সম্ভব মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে যানবাহন কেনার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়ার কথা বললে আবেদন করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে এই যানবাহন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আসা করা হচ্ছে এতে সরকার ও অধিদপ্তর উভয়ই লাভবান হবেন। এই সঙ্গে মাদকবিরোধী অভিযানও আরও জোরদার করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<93114 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1