'ত্যালের ট্যাকাই ওঠে না, গাড়ি চালামু ক্যামনে?'

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গত দুদিন ধরে যাত্রী তেমন একটা নেই। ভোর ৫টার দিকে গাড়ি নিয়ে বের হই, আর রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরি। সারাদিন গাড়ি চালায়ে ত্যালের ট্যাকাই (টাকা) তুলতে পারি না, আবার গাড়ি চালামু ক্যামনে? মুখে অসহায়ের ছাপ রেখে রোববার দুপুরের দিকে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর মিরপুর থেকে আশুলিয়ায় চলাচলরত আলিফ নামে যাত্রীবাহী বাসের চালক আব্দুর রহিম। আব্দুর রহিম জানান, 'তারা তিনজন মানুষ ওই গাড়িতে সারাদিন পরিশ্রম করেন। সারাদিন গাড়ি চালানোর পর মালিকের বিল, সড়ক ও গাড়ির ত্যাল খরচ কোনো রকম তোলার পর কন্ডাক্টর, হেলপার ও নিজের বেতন ঠিকমতো হয় না, তাহলে গাড়ি চালাবেন কী করে?' তিনি আরও বলেন, সড়কে লোকজন নেই। অন্য সাধারণ দিনে লোকাল বাসে মানুষকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। কিন্তু গত দু'দিন থেকে যাত্রী নাই। বাসের আসন আছে ৪৫টি, দুই একটা বাদে প্রায় সব আসন ফাঁকা নিয়েই গাড়ি চালাতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে রাতে বাস চলাচল নিষেধ করে দিয়েছে। আমাদের সড়কও কবে যেন বন্ধ করে দেয়। কন্ডাক্টর রাশেদ চার বছর ধরে পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তার কথা অনুযায়ী এর আগে আর কোনো দিন এমন যাত্রী সংকটে পড়তে হয়নি। তিনি বলেন, আমরা গত এক সপ্তাহ আগেও সারা দিনে মিরপুর-ইপিজেড তিনবার করে যাতায়াত করতাম। প্রতিবার ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা আসত। এখন যাত্রী না থাকায় ফাঁকা বাস নিয়ে যেতে হয়, আবার খালি বাস নিয়েই ফিরতে হয়। অযথা তেল খরচ করে মালিক আমাদের বেতন দেবে ক্যামনে। গত দুই-তিন দিনে অনেক মালিক তার গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের গাড়িও বন্ধ করে দেবে। চন্দ্রা থেকে গুলিস্তান চলাচলরত ওয়েলকাম পরিবহণের কন্ডাক্টর ইব্রাহিম বলেন, রাস্তায় যাত্রী নেই। যাত্রীর জন্য যদি বাসস্ট্যান্ডে একটু দেরি করি, তাহলে বাসে থাকা যাত্রীরা গালিগালাজ শুরু করেন। যাত্রী না পাইলে বাস চলবো কী করে? আমরাই-বা চলবো কী করে? কী এক করোনাভাইরাস আইলো, আমাদের রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন অনেক মানুষ। ইতোমধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, পার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টারসহ অনেক কিছুই বন্ধ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২৬ মার্চের স্বাধীনতা অনুষ্ঠানও বন্ধ করা হয়েছে।