শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় কর্মদিবসেও ফাঁকা রাজধানী

কর্মদিবসে রাজধানীর যে পথগুলো পাড়ি দিতে যানজটে দীর্ঘ সময় লাগত এখন সেখানে কোনো যানজট নেই। আতঙ্কের কারণে গণপরিবহণেও যাত্রী কমেছে
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ মার্চ ২০২০, ০০:১১
করোনাভাইরাস সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকলেও আতঙ্কে রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। ছবিটি সোমবার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা -পিবিএ

করোনাভাইরাস আতঙ্কে কর্মদিবসেও রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা দেখা গেছে। শুধু প্রধান সড়কগুলোই নয়, অলিগলির পথগুলোতেও মানুষের পদচারণা কম। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সোমবার রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, আগারগাঁও, শ্যামলী, কলেজগেট, মানিকমিয়া অ্যাভিনিউ, পান্থপথ, কারওয়ান বাজার, মৎস্যভবন, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। দেখা যায়, কর্মদিবসে রাজধানীর যে পথগুলো পাড়ি দিতে যানজটে দীর্ঘ সময় লাগতো এখন সেখানে কোনো যানজট নেই। আতঙ্কের কারণে গণপরিবহণেও যাত্রী কমেছে। মিরপুর থেকে মতিঝিলে যেতে গণপরিবহণে সময় লাগত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সেখানে সোমবার সময় লেগেছে ৩৫ মিনিট বলে জানালেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, নিজস্ব পরিবহণ নেই তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গণপরিবহণেই অফিস করতে হচ্ছে। তবে তিনি জানান, সড়কে যানজট কম থাকায় অল্পসময়ের মধ্যেই অফিস থেকে বাসায় আসা-যাওয়া করা যাচ্ছে। এদিকে রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে বেচাবিক্রি নেই। দোকান সাজিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। সারাদিন বেচাকেনায় দিনের খরচ উঠছে না। এভাবে চললে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে বলে জানালেন শেওড়া পাড়ার ফুটপাতের ব্যবসায়ী জয়নাল। তিনি বলেন, সড়কে মানুষ নেই। সকাল থেকে দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত দোকানে বোনি হয়নি। অথচ অন্য সময় এ সময় পর্যন্ত দুই থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি হতো। ঈদের ছুটির মতো ফাঁকা রাজধানীজুড়ে এখন করোনাভাইরাস আতঙ্ক। আতঙ্কের কারণে মানুষ অনেকটাই গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। গণপরিবহণে জনসমাগম এড়াতে রিকশায় করে গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন অনেকে। অন্যদিকে ২৫ মার্চ থেকে শপিংমল ও মার্কেটগুলো বন্ধ হয়ে গেলে রাজধানী আরও ফাঁকা হয়ে যাবে। চিরচেনা ঢাকা অচেনা রূপে পরিণত হবে। তবে রাজধানীবাসী মনে করেন ভাইরাস আতঙ্ক কেটে অচিরেই ঢাকা ফিরবে তার আপন রূপে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। কাউন্টার ফাঁকা, যাত্রী নেই : প্রায় সব বাস কাউন্টারই ফাঁকা। কোনো কাউন্টারে দিনে ৫টি আর কোনো কাউন্টারে একেবারে শূন্য টিকিট বিক্রির সংখ্যা। এক সপ্তাহ আগেও দিনে ১২টি বাস বিভিন্ন গন্তব্যে ছাড়লেও এখন সর্বোচ্চ দুইটি বাস ছাড়ছে, তাও বাসে যাত্রীর সংখ্যা হাতেগোনা। সোমবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, বিআরটিসি ও দামপাড়া বাস কাউন্টারে ভিড় নেই। অধিকাংশ কাউন্টারই বলতে গেলে ফাঁকা। যদিও গণপরিবহণ চলাচল বন্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা জারি করা হয়নি। দামপাড়া শাখার সোহাগ এসি পরিবহণের কর্মকর্তা আজিজুল হক বলেন, এক সপ্তাহ আগেও ঢাকা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন রুটে চট্টগ্রাম থেকে ১২টি বাস ছেড়ে গেছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে এখন প্রতিদিন দুইটি বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তাও যাত্রীর সংখ্যা কম। গতকাল থেকে আজ (সোমবার) বিকাল ৩টা পর্যন্ত মাত্র ৫টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। গত ১৭ মার্চের পরদিন থেকে কাউন্টারে যাত্রী কমেছে। সৌদিয়া পরিবহণের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আজকের দিনে টিকিট বিক্রির সংখ্যা শূন্যের কোঠায়। গতকাল (রোববার) চারটি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সোহাগ বাসের শারমিন সোলতানা নামে এক যাত্রী বলেন, প্রতিটি বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সঙ্গে টিসু্য পেপার রাখা জরুরি। যেসব যাত্রী গাড়িতে উঠবে তারা আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করবে। এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা করেনি বাস মালিকরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে