দূর হোক নারী-পুরুষ ভেদাভেদ

প্রকাশ | ১১ জুন ২০২৪, ০০:০০

হাসি ইকবাল
লিঙ্গ বা সেক্স হচ্ছে প্রাকৃতিক বা জৈবিক কারণে সৃষ্ট নারী-পুরুষের বৈশিষ্ট্যসূচক ভিন্নতা বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নারী ও পুরুষের স্বাতন্ত্রতা; অথবা শরীরবৃত্তীয়ভাবে নির্ধারিত নারী-পুরুষের বৈশিষ্ট্য- যা জন্মগত এবং অপরিবর্তনীয়। আর জেন্ডার হচ্ছে সামাজিকভাবে গড়ে ওঠা নারী-পুরুষের পরিচয়; সামাজিকভাবে নির্ধারিত নারী-পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ক, যা কিনা সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট ও নির্ধারিত নারী-পুরুষের ভূমিকা পরিবর্তনশীল এবং সমাজ সংস্কৃতি ভেদে তা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সমাজে নারী ও পুরুষের ভূমিকা, কর্ম দায়িত্ব, আচরণিক শুদ্ধতা পোশাক-পরিচ্ছেদ ইত্যাদি প্রচলিত জেন্ডার সম্পর্কের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। মূলত 'মেয়ে' বা 'নারী' এই শব্দ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গকে বোঝা যায়। কিন্তু যখন 'মেয়েলী' শব্দটি ব্যবহার করা হয় বা বলা হয় তখন তা জেন্ডরকে নির্দেশ করে- যা একজন নারীর লিঙ্গীয় বৈশিষ্ট্যকে লুকিয়ে আরও অনেক কিছুই প্রকাশ করে, যেটা সামাজিকভাবে সৃষ্ট। আমরা যদি লিঙ্গ বা সেক্স'র কথা বলি তাহলে প্রাকৃতিক বা জৈবিক কারণে সৃষ্ট নারী-পুরুষের বৈশিষ্ট্যসূচক ভিন্নতা বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নারী ও পুরুষের স্বাতন্ত্রতা যেখান থেকে একটু ব্যতিক্রম যা কিনা নিষ্ঠুর নিয়তির এক নির্মম পরিহাস যাকে আমরা তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া বলছি। যারা স্বাভাবিক মানুষের মতোই সুস্থ-সবল, শুধু লিঙ্গ ভেদের কারণে তাদের হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ কিংবা ট্রানজেন্ডার হিসেবে আখ্যায়িত করে সমাজে কোণঠাসা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি-১৯ (১)-এ লেখা আছে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন। জাতি ধর্ম-বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকারকে সম্বোধন করে, যেখানে মানুষ হিসাবে প্রতিটি ব্যক্তি সার্বজনীন সমমূল্য এবং সমমর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। প্রয়োজনে বিশেষ আইন প্রণয়নের কথাও বাংলাদেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না অনুচ্ছেদ-২৮ (১)। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদলাভের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে- অনুচ্ছেদ-২৯। দুর্ভাগ্য এখন পর্যন্ত কোনো নিয়োগ বিজ্ঞাপনে দেখা যায়নি যে, সেক্স তথা নারী বা পুরুষ উলেস্নখ করতে হবে না। শুধু তাই নয় এখন পিতার ও মাতার নামও চাওয়া হয়ে থাকে। ফলে একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিজেই তো বঞ্চিত হচ্ছে, পাশাপাশি তার আফসোসের জায়গাটাও থেকে যাচ্ছে যে, সে কোনোদিন মা বা বাবা হতে পারবে না। আমরা যদি উন্নত দেশগুলোর দিকে দেখি তাহলে দেখব যে, তাদের পাসপোর্টের জায়গায় শুধু তার নিজের নাম ও জন্ম তারিখ রয়েছে, বাবা-মা কিংবা নারী-পুরুষ সংক্রান্ত ইনফরমেশন নেই। অথচ বাংলাদেশে জাতীয় সনদপত্র থেকে শুরু করে চাকরি-বাকরি এমনকি পাসপোর্ট করতেও নারী-পুরুষ বা সেক্সের উলেস্নখ করতে হয়। শুধু তাই নয়, পুরুষশাসিত এই দেশে নারীর তুলনায় আনুপাতিক হারে পুরুষ বেশি হওয়াতে আদমশুমারিতেও এদের অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষ হিসেবে দেখানো হয়ে থাকে। ভিন্ন যৌনতার এসব মানুষদের যৌনসত্তার পরিচয় সারা পৃথিবীজুড়ে এখনো ভীষণভাবে অবহেলিত এবং নিন্দিত। ফলে বিদেশ ভ্রমণে এদের নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। পাসপোর্ট থেকে শুরু করে ভিসা ফর্মগুলোতে এদের জন্য কোনো ঘর বরাদ্দ করা হয়নি। অগত্যা পুরুষ অথবা নারী যেকোনো ঘরেই এদের টিকচিহ্ন দিতে বাধ্য হতে হয়। অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন করতে গিয়েও সর্বদা অপ্রস্তুত অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাদের। বলাবাহুল্য বাংলাদেশের বেশিরভাগ হিজড়ারই জীবন প্রণালি ভাসমান কিংবা ভাসমান হওয়ার কারণে এদের কোনো প্রকার স্থায়ী ঠিকানাও থাকে না। ঢাকাসহ বেশ বড় শহরে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেরাই নিজেদের ঠিকানা খুঁজে নিয়ে গড়ে তুলেছেন আলাদা কমিউনিটি। গড়ে তুলছেন বড় বড় হিজড়াপাড়া কিংবা বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে সর্বদা পা দিচ্ছেন অন্ধকার পিচ্ছিল আর নোংরা কর্মকান্ড থেকে শুরু করে মানুষকে ভয় দেখানো। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নবজাতকের জন্ম হলে সেই বাড়িতে কিংবা বিয়েবাড়িতে হানা দিতে দেখা যায়। নির্দিষ্ট কোনো কর্মসংস্থান না থাকার কারণে তারা এসব করতে বাধ্য হচ্ছে- একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ সংবিধানে নারী অধিকারের কথায় বলা হয়েছে, জাতি ধর্ম-বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে সব মানুষের অধিকারের কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য হিজড়া জনগোষ্ঠী আজও পিছিয়ে পড়ে আছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে। সমলিঙ্গের মানুষের সমানাধিকারের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বেশ এগিয়ে রয়েছে, এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো ইউরোপের দেশগুলো। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চাশটি রাজ্যে সমলিঙ্গের বিয়ের বৈধতা ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই রায়ের সমর্থনে সমকামীদের সংগঠন এলজিবিট (লেসবিয়ান, গে, বাই সেক্সচুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার)-এর প্রতিনিধিত্বকারী রঙধনু রঙে রাঙানো হয়েছে হোয়াইট হাউজ। রঙধনু রঙে রঙিন ফেসবুকের অসংখ্য প্রোফাইল ও ছবি দিয়েছে। এরা সবাই যে সমকামী বা সমপ্রেমী তা কিন্তু নয়। এর পক্ষে সাধারণ মানুষ সবার বৈষম্যহীনভাবে বাঁচার প্রতিশ্রম্নতিকে সমর্থন করেছে। ২০১৪ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো হিজড়া প্রাইড অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচিত হিজড়া সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ এতে অংশ নেয়। আলাদা লিঙ্গ হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার প্রত্যাশায় বার্ষিকী পালন উপলক্ষে এই প্রাইডের আয়োজন করা হয়েছিল। এক পরিসংখ্যান হিসেবে বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজারের মতো বা তারও অধিক হিজড়া রয়েছে। প্রথম প্রাইডের ব্যানারে লেখা ছিল 'ঘুচলো কলংক বৈষম্য ও ভীতি, আমরাও মানুষ পেলাম তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি।' কিন্তু সময়ের দাবিতে উভয়লিঙ্গ নামের এই সব মানুষের প্রাপ্য অধিকার ও মানুষ হিসেবে পুনর্বাসন ও সনাতন লৈঙ্গিত বলয় ভাঙার সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও এরা আজ অবহেলিত। তৃতীয় লিঙ্গ স্বীকৃতি পেলেও এরা আজও সমাজের তৃতীয় শ্রেণির মানুষই হয়ে আছেন। জেন্ডার অসচেতনতা ও রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা এই জটিলতা নিরসনে এখন পর্যন্ত কোনো বন্দোবস্ত করেননি। মানবাধিকার আইন বলে, যদি তুমি বিশ্বাস করো ভিন্ন বর্ণ, জাত ভাষা, ধর্ম ও লিঙ্গের মানুষকে সমান সম্মান আর অধিকার দেওয়া উচিত, তাহলে ভিন্ন সেক্সচুয়ালিটি বা লিঙ্গ অভিযোজনকে কেন নয়? কেমন করে শুধু এক প্রকার মানবাধিকারকে সমর্থন করা যায়, যেখানে লিঙ্গ অভিযোজনের ভিন্নতার কারণে অন্যের অধিকার খর্ব হয়? হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি এই বৈষম্যগত আচরণ এবং অবহেলা তার পরিবার, সুশীলসমাজ এমনকি জন্মগতভাবে হয়ে থাকে যেটা পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের নাগরিক সেই রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে অব্যাহতভাবে চলমান। ইতিহাস হাতড়ালে মানবসমাজে উভয়লিঙ্গ বিরল নয়। প্রাচীন গ্রিসে সমকামিতা, প্রাচীন রোমে খোজা প্রহরী (ঊঁহঁপয), নেটিভ ইন্ডিয়ানদের মধ্যে দ্বৈত্বসত্তা ( :ড়ি ংঢ়রৎরঃং), আরব ও পার্সিয়ায় 'বার্দাশ এবং ভারতবর্ষে হিজড়াদের অস্তিত্ব সেই সাক্ষ্যই দেয়। এছাড়া ভারতের কোতি, ওমানের জানিথ, ইন্দোনেশিয়ার লুডরুক বাল্টুট, মাসরি এবং রায়গ, মালয়েমিয়ায় আহকুয়া, বাপুক, পোনদান কিংবা নাকনিয়া। তুরস্কে নসঙ্গা, মুস্তাকনেৎ, আরবের মুখান্নথুন, নেপালের মেটি, থাইল্যান্ডের কাথোই, চিনের তাংঝি, মালাগাসির তসিকাত, মিশরের খাওয়াল, আঙ্গোলার চিবাদোস, কেনিয়ার ওয়াসোগা, পর্তুগালের জিম্বাদা, পলিনেশিয়ার ফাফাফিনি, মেক্সিকোর জোতো/পুতো, ব্রাজিল এবং ইসরাইলের ত্রাভেস্তি এবং ত্রান্সফরমিস্তাসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে থাকা রূপান্তরকামী কিংবা উভলিঙ্গ সত্তা। কিন্তু আধুনিক শহুরে মানবসমাজে যেহেতু জেন্ডার ইসু্য খুব প্রবল, সেহেতু উভয়লিঙ্গ মানবদেহের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তারপরও ধ্যান ধারণা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা পাল্টেছে। এ প্রসঙ্গে ১৯৯২ সালে সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত অহহব ঋধঁংঃড় ঝঃবৎষরহম-এর ঞযব ঋরাব ঝবীব : ডযু গধষব ধহফ ঋবসধষব অৎব ঘড়ঃ ঊহড়ঁময প্রবন্ধটি উলেস্নখ্য। তিনি 'নারী' এবং পুরুষ এই দুই লিঙ্গেও পাশাপাশি হার্মস (ট্রু হার্মাফ্রোডাইট) নার্মস (মেল সুডো হার্মাফ্রোডইট) এবং ফার্মস (ফিমেল সুডো হার্মাফ্রোডাইট)-এর প্রস্তাব করেছেন। হিন্দুদের পুরাণে আমরা পেয়েছি 'বৃহন্নলা' কিংবা শিখন্ডীর মতো চরিত্র। আছে হরি এবং শিবের (হর) মিলনের ফসল 'আয়াপ্পা'। আনাতেলিয়া, গ্রিস এবং রোমের বিভিন্ন মন্দিরে 'সিবিল' এবং ডাইওনিসস-এর পূজার কথা আমরা জানি। সিবিলির পুরোহিতেরা 'গালিস্ন' নামে পরিচিত ছিলেন। এরা নারী বেশ ধারন করতেন এবং মাথায় নারীর মতো দীর্ঘ চুল রাখতে পছন্দ করতেন। বিংশ শতাব্দীর পর থেকে (বস্তুত বিগত কয়েক দশকে) পশ্চিমা বিশ্বে জেন্ডার সম্পর্কিত ধারণা যত ঋদ্ধ হয়েছে ততই লৈঙ্গিক বৈষম্যেও প্রাচীর ভেঙে পড়ছে। এর পেছনে সামাজিক ও মনস্তাত্বিক কারণ অস্বীকার না করেও বলা যায়, এ ধরনের চাহিদা বা অভিপ্রায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ নয়। অনেকের কাছে হিজড়া একটা গালি। আমরা প্রায়ই ফেসবুকে দেখি যদি কেউ অশ্লীল কিছু পোস্ট করে কিংবা ফেক আইডি ব্যবহার করে তাকে হিজড়া বলে গালি দেয়। আবার কাউকে খাটো করে দেখা কিংবা ভিরুতা ও মূর্খতার পরিচায়ক হিসেবে হিজড়া বলে গালি দেওয়া হয়। আসলে হিজড়ারা দুর্বল নয় তারা প্রকৃতিগত প্রক্রিয়ার কারণে কিছুটা ত্রম্নটিপূর্ণ। হিজড়া বা ট্রান্সজেন্ডার (অবজ্ঞার্থে ছক্কা) হলো সমকামী বা রূপান্তরকামী। সমকামী বা রূপান্তরকামীর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রখ্যাত রূপান্তরকামী বিশেষজ্ঞ হেনরি বেঞ্জামিন বলেন, আপাত পুরুষের মধ্যে নারীর সুপ্ত সত্তা বিরাজমান থাকতে পারে। আবার আপাতত নারীর মধ্যে পুরুষের অনেক বৈশিষ্ট্য সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। (ঊাবৎু অফধস পড়হঃধরহং :যব বষবসবহঃ ড়ভ ঊাব ধহফ বাবৎু ঊাব যধৎনড়ৎং :ৎধপবং ড়ভ অফধস, ঢ়যুংরপধষষু ধং বিষষ ধং ঢ়ংুপযড়ষড়মরপধষষু) সেক্স এবং জেন্ডার কিন্তু সমার্থক নয়। সেক্স শব্দটির প্রতিশব্দ লিঙ্গ করা হলেও জেন্ডারের সঠিক প্রতিশব্দ আমাদের ভাষায় অনুপস্থিত। অনেকে প্রচলিতভাবে দুটোকেই লিঙ্গ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আসলে সেক্স একটি শরীরবৃত্তীয় ধারণা। আর জেন্ডার মূলত নারী ও পুরুষের সমাজ মনস্তাত্বিক অবস্থা। তাই রূপান্তকারী মানুষদের মানসিক ব্যাপারটা বুঝতে হলে আমাদের সেক্স ও জেন্ডারের আধুনিক সংজ্ঞায়ন এবং গবেষণার ক্ষেত্রগুলো আরও বেশি করে বোঝা দরকার। বলা দরকার সেক্স সমগ্র বিষয়টিকে দেহকাঠামো নামক ছোট চৌতদ্দির মধ্যে আটকে ফেলতে চায় যেখানে জেন্ডার বিষয়টিকে নিয়ে যেতে চায় সাংস্কৃতিক নীলিমায়। অনেকে অবশ্য জেন্ডারের বাংলা প্রতিশব্দ-জেন্ডারই রাখতে চান। তবে বাংলাদেশের জেন্ডার সচেতন লেখক ও জেন্ডার নিয়ে যারা কাজ করেছেন তারা সেক্সকে জৈবলিঙ্গ এবং জেন্ডারকে সাংস্কৃতিক লিঙ্গ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আসলে সবার আগে আমাদের নিজেদেরই জেন্ডার সচেতন হওয়া দরকার। ইউনিভার্সেল ডিকলারেশন অব হিউম্যান রাইটসের ২০তম আর্টিকেল মানুষ হিসেবে আমার নিজের মতো প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করেছে। আর সেই মানবাধিকারের জোরে একই সনদের ১৬তম আর্টিকেলে ঘোষিত ইকুয়াল রাইট টু ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামিলি লাইফ হিজড়াদের জন্যও প্রযোজ্য হওয়া উচিত। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য আলাদা কলাম থাকা উচিত, নয়তো লিঙ্গ বৈষম্যের নারী-পুরুষ কলাম তুলে দিয়ে শুধু জন্মসাল ও ঠিকানা অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানাচ্ছি। আশার কথা হলো- এ বছরের মে মাসে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, হিজড়াদের ট্রাফিক পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি শুধু লিঙ্গ পরিচয়েই নয়, নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে হিজড়াদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকেও আমলে নেওয়া হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পরবর্তীতে সরকার কর্তৃক আরও বিশ্লেষণের পর সংশোধন করা হবে। ২০১৩ সাল থেকে হিজড়ারা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে একটি পৃথক লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ঋণ সুবিধাসহ বয়স্কভাতা সুবিধাও পাচ্ছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি হিজড়াদের। সম্পত্তিসহ, মৌলিক নানা অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। উত্তরাধিকার আইনে হিজড়া কথা উলেস্নখ না থাকায় তারা সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত। আমরা আশা করব, সরকার দ্রম্নত সেই প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবায়ন করবেন। পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তা ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে তাদের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্ম সংযোগের সুযোগ করে দেবেন। শুধু তাই নয়, দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ দেশি-বিদেশি এনজিওতেও হিজড়াদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে। জেন্ডার বা সেক্স বৈষম্য নয়, সবার আগে আমরা মানুষ- এই হোক আমাদের প্রত্যয়।