শিক্ষাঙ্গনে বাল্যবিয়ের প্রভাব

অপরিণত বয়সে কোনো ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বিষয়েই হলো বাল্যবিয়ে। বিয়ে সামাজিক ও ধর্মীয় একটি বিষয়। বিয়ের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা রয়েছে। কিন্তু ১৮ বছরের আগে বিয়ে যেমন ছেলেমেয়ের জন্য ক্ষতিকারক তেমনি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষতিসাধনে মেধাশূন্যতা দেখা দেয়; যার ফলে, দেশে বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বাল্যবিয়ের নেতিবাচক প্রভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা খুবই খারাপ। নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো বাল্যবিয়ে।

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

তামিম তুলি
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। একটি দেশের উন্নতির চাবিকাঠি হলো শিক্ষা। বর্তমানে দেশে নানা কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়ে শুধু সামাজিক সমস্যা নয়, শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর এর প্রভাব সর্বদা নেতিবাচক। হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী অকালে ঝরে পড়ে বাল্যবিয়ের কারণে। বাল্যবিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর এক অদৃশ্য অভিশাপ স্বরূপ। অপরিণত বয়সে কোনো ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক বিষয়েই হলো বাল্যবিয়ে। বিয়ে সামাজিক ও ধর্মীয় একটি বিষয়। বিয়ের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা রয়েছে। কিন্তু ১৮ বছরের আগে বিয়ে যেমন ছেলেমেয়ের জন্য ক্ষতিকারক তেমনি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষতিসাধনে মেধাশূন্যতা দেখা দেয়; যার ফলে, দেশে বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বাল্যবিয়ের নেতিবাচক প্রভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা খুবই খারাপ। নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো বাল্যবিয়ে। শুধু নারী শিক্ষার্থী নয়, বহু ছেলে শিক্ষার্থীর ও বাল্যবিয়ে হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সমান সমান থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই কমতে থাকে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা। হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী যারা দেশের স্বপ্ন, বাল্যবিয়ের কারণে তারা দেশের কোনো উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারে না বরং দেশের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতি বছর এভাবে অচিরেই হারিয়ে যাচ্ছে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী ফলস্বরূপ শিক্ষাঙ্গনে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। বাল্যবিয়ের কারণে জনসংখ্যার আধিক্য বাড়ছে। বাল্যবিয়ে শুধু অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ঘাটতি সৃষ্টি করে না, বরং শিশুর শিক্ষা জীবনকে সংকুচিত করে। কন্যা শিশুরা বাল্যবিয়ের শিকার হয় বেশি, তাই বহু নারী শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে শিশুকালেই। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছেলে শিক্ষার্থীর তুলনায় প্রায় অর্ধেক। তবে শুধু নারী শিক্ষার্থীর নয়, বহু ছেলে শিক্ষার্থীর ও শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে বাল্যবিয়ের কারণে। বাল্যবিয়ে করে পড়াশোনার বয়সে মেয়েরা সংসার আর ছেলেরা অর্থ উপার্জনে ব্যস্তজীবন কাটায়। ফলে, ইতি ঘটে হাজারো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। বাল্যবিয়ে রোধ করতে পারে শিক্ষার আলো। শিক্ষাঙ্গনে বাল্যবিয়ের প্রভাব বিস্তার লাভ করতে না পারলে শিক্ষার্থীর মান উন্নত হবে এবং বাল্যবিয়ের নেতিবাচক প্রভাব থেকে শিক্ষার্থীরা মুক্তি পাবে। বাল্যবিয়ের নেতিবাচক প্রভাবে শিক্ষার অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। কারণ, বাংলাদেশের তিন-চতুর্থাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগেই। আর ১৮ বছর মানে শিক্ষার্থীর জীবনের চলতি সময়। মাধ্যমিক পর্যায় শেষ না করতেই ঝরে পড়ছে মেয়ে শিক্ষার্থীরা। পড়ালেখার বয়সে বিয়ে ছেলেমেয়ে উভয় শিক্ষার্থীর জন্যই বিপজ্জনক। বাল্যবিয়ে নিয়ে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১৮ বছরের আগে বিয়ের হার ছিল ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ- যা ২০২৩ সালে এসে ৪১ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়ায়। অর্থাৎ শিক্ষা জীবনের চলতি সময়ে বাল্যবিয়ের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে বিয়ে মানে ধরে নেয়া হয় যে ছেলে ও মেয়ে শুধু সংসার ও সন্তান লালনপালন করবে। মানে বিয়ে হলে পড়ালেখার সমাপ্ত ঘটবেই। এভাবে হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিয়ে নামক খাঁচায় বন্দি হয়ে পড়ছে। বাল্যবিয়ের প্রভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার যথাযথ উন্নতি অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শিক্ষা হলো একটি জাতির মেরুদন্ড। বাল্যবিয়ের হার না কমাতে পারলে শিক্ষার আলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব নয়- যার কারণে শিক্ষার মান দিন দিন অনুন্নত হতেই চলেছে। আর শিক্ষার্থী ব্যতীত দেশের উন্নতির কথা ভাবা যায় না। বাল্যবিয়ের কারণে শিক্ষাঙ্গনে নানারকম প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা নতুন কিছু নয়। কারণ, অল্প বয়সে, শিক্ষার্থী জীবন চলাকালীন সময়ে বিয়ে হলে অনেকে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু এইটার জন্য নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয় ওই শিক্ষার্থীকে। বাল্যবিয়ের প্রধান কারণ বলা যায় দারিদ্র্যতাকে। কারণ দরিদ্র মা-বাবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না ছেলেমেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে পড়াশোনা করানোর। তাই অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয় ছেলেমেয়েকে। অশিক্ষা বাল্যবিয়ের আরো একটি কারণ। এছাড়া, অসচেতনতা, বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা, সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের অযত্ন ও অবহেলা, নারী লোভী মনোভাব ইত্যাদি বাল্যবিয়ের কারণ। আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু শৈশবের গন্ডি পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পণ করতে না করতেই বিয়ে নামক খাঁচায় বন্দি হয়ে পড়ছে হাজারো ছেলেমেয়ে। পড়ালেখার বয়সে বিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে শিক্ষার্থীর জীবন। শিক্ষাঙ্গন হয়ে পড়েছে মেধাশূন্য। বাল্যবিয়ের কারণে পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার কোনোভাবে ঠিক থাকলেও জিপিএ-৫ এর মান হ্রাস পাচ্ছে। বেকারত্ব বৃদ্ধির অনেক বড় কারণ হলো বাল্যবিয়ে। অল্প বয়সে বিয়ে করে পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়া ছেলেমেয়ে বেকার হয়ে পড়ছে। নারী শিক্ষার্থীর জীবনের ঝুঁকি এড়াতে এবং শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। এছাড়া, শিক্ষার্থী ব্যবস্থার উন্নতি ও দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বাল্যবিয়ে রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।