বাড়ছে বিয়েবিচ্ছেদ

বিচ্ছেদ শব্দটা শুনতে কেমন যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করে। অতি মর্মান্তিক একটা শব্দ। তবু কেন এত বিচ্ছেদ প্রশ্ন জাগে মনে। বিচ্ছেদ যেন নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকাল স্বামী-স্ত্রীর বিয়েবিচ্ছেদের কারণগুলো নিজেদের অজান্তেই তৈরি হয়। বর্তমানে বিয়েবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও মূল্যবোধের অভাব। সমস্যটা শিক্ষিত সমাজে বেশি লক্ষণীয়। শিক্ষিত সমাজে স্বামী-স্ত্রী দুইজনই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। যার ফলে, বাড়ছে বিয়েবিচ্ছেদ

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সাদিয়া সুলতানা রিমি
বিয়েবন্ধন হলো একটি পবিত্র বন্ধন। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান যে ধর্মেরই হোক না কেন, বিয়ের যে মূলমন্ত্র, তা হলো একজন ছেলে বা একজন মেয়ের একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রম্নতি। বিয়ের মাধ্যমে সামাজিকভাবে এই প্রতিশ্রম্নতিকে বৈধ করা হয়। বিয়ের পর দৈনন্দিন জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে। বেড়ে যায় দায়িত্ব ও কর্তব্য। বিয়েবন্ধন অটুট রাখার জন্য শুধু আবেগ নয়, প্রয়োজন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ ও বিশ্বাস। বিচ্ছেদ শব্দটা শুনতে কেমন যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করে। অতি মর্মান্তিক একটা শব্দ। তবু কেন এত বিচ্ছেদ প্রশ্ন জাগে মনে। বিচ্ছেদ যেন নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকাল স্বামী-স্ত্রীর বিয়েবিচ্ছেদের কারণগুলো নিজেদের অজান্তেই তৈরি হয়। বর্তমানে বিয়েবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও মূল্যবোধের অভাব। সমস্যটা শিক্ষিত সমাজে বেশি লক্ষণীয়। শিক্ষিত সমাজে স্বামী-স্ত্রী দুইজনই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। যার ফলে, বাড়ছে বিয়েবিচ্ছেদ। সম্প্রতি পত্রপত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ করলেই দেখা মেলে বিয়েবিচ্ছেদের খবর। বিনোদনের পাতায় ঘটা করে লেখা হয় তারকাদের সংসার ভাঙার খবর। ফেসবুকে প্রবেশ করলে হাজারও সংসার ভাঙার নিউজ, প্রতিদিন এত এত বিয়েবিচ্ছেদের ঘটনা শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে আমাদের মন-মস্তিষ্ক। এখন আর বিয়েবিচ্ছেদকে কোনো দুর্ঘটনা মনে হয় না। আট-দশটা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইভার, ইমো, ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া বিয়েবিচ্ছেদের জন্য অনেক দিক থেকেই দায়ী। বাড়তি বিনোদনের জন্য অনেকেই এই মিডিয়া ব্যবহার করেন। মিডিয়ায় লোক দেখানো অনেক ভিডিও থাকে, তা ব্যক্তিজীবনে অনেক প্রভাব ফেলে। সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তিজীবন যে এক নয়, তা এখনকার তরুণ সমাজ বুঝতে পারে না। যার ফলে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে। প্রযুক্তিগত মিডিয়ার খারাপ দিক এর জন্য সংসারে ঝামেলা হয়। সবকিছুরই ভালো-মন্দ দিক আছে। প্রযুক্তি আমাদের যেমন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পেছনেও টানছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, পশ্চাৎ দেশের সিরিয়ালের জন্য সংসারে অশান্তি দেখা যায়। জীবনটা কিন্তু টিভি সিরিয়াল নয়। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল পাওয়া যাবে না। যখনই নিজের জীবনকে এসবের সঙ্গে মিলাতে যাবেন তখনই কিন্তু বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আসলে বিয়েবিচ্ছেদের কারণ খুঁজলে অনেক কিছু পাওয়া যাবে। কিন্তু মাঝে মাঝে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও ত্যাগ স্বীকার করতে শিখুন। বিচ্ছেদ কথাটি ছোট কিন্তু ব্যাপারটা এত সহজ নয়। এর সঙ্গে শুধু দুটি মানুষ না দুটি পরিবারের সবাই জড়িত থাকে। বিয়েবিচ্ছেদের ফলে যে স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভাঙে, তা নয়, দুটি পরিবারের সুখ-শান্তি সব নষ্ট হয়। বিয়েবিচ্ছেদ যে শুধু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট করে, তা নয়, নষ্ট হয় পরিবারের সুখ-শান্তি। বিচ্ছেদের কারণ যাই হোক না কেন, পরিণতি অনেক ভয়াবহ হয়। এই বিয়েবিচ্ছেদ শিশুদের জীবনকে নষ্ট করে দেয় যদি শিশু থাকে। সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চতায় ভুগে। তারা মা-বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। মানসিক চাপ, সমাজের তিক্ত কথার আঘাতে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। এমনকি অসৎ সঙ্গ, অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়। এভাবে একটা শিশুর ভবিষ্যৎ পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়। এভাবে বিয়েবিচ্ছেদ একদিকে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, অন্যদিকে, শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে। আসলে বিয়ে নামক এই পবিত্র বন্ধনের প্রতি এখনকার তরুণরা কী আদৌ শ্রদ্ধাশীল? সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার 'মানসিকতা কী তরুণ সমাজের আছে? তারা কতটা চেষ্টা করছে সম্পর্ক অটুট করার জন্য? যে কোনো সম্পর্ক টিকে থাকে একে অপরের আস্থা-বিশ্বাস, মায়া ও ভালোবাসার ওপর। বিয়ে এর বাইরে নয়। বিচ্ছেদের পর একটি ছেলে নিজের জীবনকে মানিয়ে নিতে পারলেও মেয়েটির জীবনে নেমে আসে সামাজিক এক দুরবিষহ জীবন। যা প্রতিবেশী এমনকি সমাজে কেউ ভালো চোখে দেখে না। অস্থিরতা কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। মন চাইল সংসার করলাম, মন চাইল না বিচ্ছেদ- এমনটা হওয়া উচিত না। সম্পর্ক রাখার জন্য দুইজনকেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। একে অপরের ইচ্ছার মূল্য দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিচ্ছেদ কখনো ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। শুধু যে স্বামী-স্ত্রী তা নয়, দুই পরিবারেরই উচিত, একে অপরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া। তাহলেই একটি সুখী, সুন্দর পরিবার গড়ে উঠবে।