'আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও; আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব'- উক্তিটির মাধ্যমেই নারীদের গুরুত্ব একদম স্পষ্ট। একটি ভদ্র ও সুন্দর জাতি গঠনের ক্ষেত্রে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। এক্ষেত্রে, নারীর আর্থিক সচ্ছলতা হবে একটি সমাজের উন্নয়নের মূল ভিত্তি। যখন নারীরা নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে, তখন তারা শুধু নিজেদের জন্যই নয়, বরং তাদের পরিবার ও সমাজের জন্যও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন।
প্রথমত, নারীদের আর্থিক ক্ষমতায়ন তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়াবে- যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন নারীরা উপার্জন করেন, তখন তারা স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদার প্রতি বেশি মনোযোগ দেন।
দ্বিতীয়ত, নারীদের আর্থিক সচ্ছলতা সমাজের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নারীরা যখন ব্যবসা শুরু করেন বা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন, তখন তারা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন এবং অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। এটি কেবল তাদের নিজেদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য লাভজনক। বিগত কয়েক দশকের ইতিহাস ঘটলে তার জলজ্যান্ত উদাহরণ আমাদের চোখে পড়বে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অবদান উলেস্নখযোগ্য। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, নারীরা দেশের মোট কর্মশক্তির ৩৬ শতাংশ অংশীদার। তৈরি পোশাক শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ ৮০ শতাংশের বেশি- যা দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস। এছাড়াও, নারীরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা হিসেবে ৩৫ শতাংশ ব্যবসা পরিচালনা করেন- যা অর্থনীতির বৈচিত্র্য এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। নারীদের আর্থিক ক্ষমতায়ন হলে পরিবারের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ে- যা সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক। এইভাবে, নারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে কাজ করছেন।
তবে, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নারীদের আর্থিক সচ্ছলতার পথে কিছু বাধা রয়েছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা, যেমন লিঙ্গ বৈষম্য এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব, নারীদের উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কারোরই তেমন কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু বিষয়টি অতীব জরুরি। তাই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের উচিত নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
নারীদের আর্থিকভাবে সচ্ছল করা শুধু একটি নৈতিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি প্রয়োজনীয়তা। এটি আমাদের সমাজকে আরো সমৃদ্ধ ও সুস্থ করে তুলবে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করবে। নারীরা যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হন, তবে তারা নিজেদের এবং সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।